এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : আমরা বিভিন্ন প্রসঙ্গে প্রায়ই বলি ‘কুকুরের লেজ, কোনো দিনও সোজা হয় না’ অথবা বিভিন্ন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে উদাহরণ হিসেবে বলা হয় ‘কুকুরের লেজ ১২ বছর চুঙ্গার মধ্যে ঢুকিয়ে রাখলেও সোজা হবে না’।
আপনি হয়ত নিজেও দেখেছেন— কুকুরের লেজ হয় অর্ধ গোলাকৃতির মতো, গোল। বিশেষ করে লেজের শেষের অংশটুকু! কিন্তু, সেটা কেন হয়? এর পেছনেও কি কোনো বৈজ্ঞানিক কারণ রয়েছে?
বিজ্ঞানীদের একাংশ মনে করেন, কুকুরের লেজ এই রকম বাঁকা হওয়ার পেছনে হাজার হাজার বছরের বিবর্তনের ইতিহাস রয়েছে।
বিবর্তনবাদের গবেষকেরা জানাচ্ছেন, প্রাগৈতিহাসিক যুগে কুকুরের পূর্বপুরুষদের একাধিক প্রজাতিই তুষার মেরু-প্রদেশ অঞ্চলে বসবাস করত। সেই কারণে, ঠান্ডা কম লাগানোর জন্য প্রায়শই তারা লেজ গুটিয়ে রাখত, যাতে শরীরের সারফেস এরিয়া কম থাকে।
অনেক সময় বিশ্রাম নেওয়ার সময় ওরা নাকের ওপর লেজ রেখে দিত, যাতে শরীর উষ্ণ থাকতে পারে। লেজ ঘুরিয়ে ঘুমানোর এই অভ্যাস ধীরে ধীরে স্থায়ী রূপ নেয়।
এছাড়া, কুকুরদের লেজ সব সময় মাটি থেকে উপরে রাখার একটা প্রচেষ্টা থাকে। দৌড়ানোর সময় বাঘ, সিংহের মতো হালের কাজও করে কুকুরের লেজ। অর্থাৎ, কুকুর যখন দৌড়ায়, তখন তার শরীরের ভারসাম্য রক্ষা করে তার লেজ, হাওয়ার বেগ কাজে লাগাতে, নিজেদের লেজ প্রয়োজন মতো ব্যবহারও করে কুকুররা।
কিন্তু, বেশির ভাগ কুকুরের লেজ বাঁকা হলেও পৃথিবীতে এমনও অনেক কুকুর রয়েছে, যাদের লেজ গোল নয়। এমনকি, লেজ নেই এমন কুকুরও রয়েছে। কিন্তু, যে সমস্ত কুকুরের লেজ থাকে, তাদের গোল হয় কেন?
এখন প্রশ্ন কুকুরদের লেজ সোজা করা যায় কি না। উত্তর হলো, যে সমস্ত কুকুরের প্রজাতির লেজ বাঁকা, তাদের লেজ স্বাভাবিক ভাবে সোজা করা যায় না। এখন অস্ত্রোপচার করে কৃত্রিমভাবে কেউ যদি তা করতে চায়, তাহলে অবশ্যই করা যায়। তবে এমন কাজ নিঃসন্দেহে অমানবিক ও বেআইনি।
বহু প্রজাতির কুকুর আছে যাদের লেজ কিন্তু সোজা। এই জাতীয় কুকুরগুলোর লেজ স্বাভাবিকভাবেই সোজা হয়। এটা কোনো অসুখের লক্ষণ নয়।
পৃথিবীতে অনেক প্রজাতির কুকুর আছে যাদের লেজ নেই। এর মধ্যে ফ্রেঞ্চ বুলডগ, বস্টন টেরিয়ার, ওয়েলশ কর্গির মতো প্রজাতি উল্লেখযোগ্য। এমন অনেক কুকুরও দেখা যায় যেগুলোর লেজ দেখা যায় না, কারণ তাদের মালিকরা লেজ কেটে দেয়। পোষা কুকুরের লেজ কাটা পশ্চিম দেশগুলোতে একটি সাধারণ ব্যাপার। আপনার পোষ্য কুকুরের লেজ স্বাভাবিক ভাবে বাঁকা হলে, তাতে অবশ্যই কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু, এটি অস্বাভাবিকভাবে বাঁকা হলে বা হতে শুরু করলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন।
একটি কুকুরের লেজ তার মেরুদণ্ডের একটি সম্প্রসারণ। আঁকাবাঁকা হওয়ার মানে এই নয় যে কুকুরদের মেরুদণ্ডও আঁকাবাঁকা। মেরুদণ্ডী প্রাণী হওয়ায় তাদের লেজ তাদের মেরুদণ্ডের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। বিবর্তন তত্ত্ব অনুযায়ী কুকুরের লেজের হাড় তার মেরুদণ্ডে পেরেকের মতো আটকে থাকে বলে মনে করা হয়। এই কারণে কুকুরকে হেমি-মেরুদণ্ডী প্রাণী বলা হয়।