বাঘমন্দিরে বাঘের সেবা করে ভিক্ষুকরা
এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : এখানে কোনো বাঘের ভয় ছিল না৷ তবু সন্ধ্যা হলে থাইল্যান্ডের বাঘমন্দিরে৷ এখানেই বাস করে ১৪৬টি বাঘ৷ থাইল্যান্ডে বেড়াতে গেছেন কিন্তু কাঞ্চনাবুড়ির বাঘমন্দিরে বেড়াতে যাননি এমন মানুষের সংখ্যা দুর্লভ৷
অনেকে তো জোর গলায় জানিয়েছেন, খোলা পরিবেশে বিড়ালের মতো বাঘ ঘুরে বেড়াচ্ছে এমন দৃশ্য দেখার জন্য তারা বারবার থাইল্যান্ড বেড়াতে যেতে রাজি৷ শুধু বেড়াতে যাওয়াই বা কেন? একাধিক বিজ্ঞানভিত্তিক টিভি চ্যানেলের সৌজন্যে বাঘমন্দিরে গেছেন অনেকে।
অনায়াসে বাঘদের পাশে বসে তাদের আদর করা বা দুষ্টুমী করে বাঘদের কান মুলে দিয়ে তাদের শাসন করা এ মন্দিরের সন্ন্যাসীদের প্রতিনিদিনের কাজ৷ বাঘরাও যেন মেনে নিয়েছে তাদের এই ভবিতব্য৷
ঘরের মধ্যে খেলতে গিয়ে জিনিসপত্র নষ্ট করে ফেলা অতিকায় চেহারার বোনপো নিরস্ত্র সন্ন্যাসীর দেখা পাওয়া মাত্র যেভাবে লেজ তুলে পালিয়ে যায়, তা দেখে হয়তো হেসে ফেলবে বাঘের মাসি বিড়ালরাও৷ কিন্তু সেই সবই কি এবার নিছক স্মৃতি হয়ে থেকে যাবে?
থাইল্যান্ডের জাতীয় উদ্যান দপ্তরের ডিরেক্টর জেনারেল নিপন চোটিবানের নির্দেশে এ মাসের শেষে থাই নববর্ষ উত্সব সংক্রানের পর বন্ধ হয়ে যাবে ওয়াত পা লুয়াং তা বুয়া বাঘমন্দির৷
ব্যাঙ্কক থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূরে, কাঞ্চনাবুরি জেলার এই জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্রটিতে পর্যটকরা বাঘদের সঙ্গে কিছুটা সময় কাটানোর পাশাপাশি তাদের সঙ্গে সেলফিও তুলতে পারতেন৷ অবশ্য এর জন্য খরচ পড়ত ভালোই৷
তাহলে হঠাত্ এ সিদ্ধান্ত কেন? কারণ বহুদিন ধরেই অভিযোগ উঠছিল যে, এটি বন্যপ্রাণী পাচারের অন্যতম ঘাঁটি৷ এখানে বাঘদের ঠিকমতো দেখাশোনা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে৷ চীনে বাঘের দেহাংশ এবং হাতির দাঁত থাইল্যান্ড থেকেই পাচার করা হয়ে থাকে৷
বাঘমন্দির কর্তৃপক্ষ অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, এটি বাঘদের আশ্রয়স্থল ও প্রজনন কেন্দ্র৷
গত সন্তাহেই বাঘমন্দির কর্তৃপক্ষ আইনি নথিপত্র দেখাতে না পারায় সেখান থেকে ছ'টি এশিয়ান ভালুক বা মুন বেয়ার বাজেয়াপ্ত করা হয়৷ বাজেয়াপ্ত করা হয় ৩৮টি ধনেশ পাখিও৷
জাতীয় উদ্যানের কয়েকজন আধিকারিক যখন কোর্ট ওয়ারেন্ট নিয়ে বাঘমন্দিরে তিনটি নিখোঁজ বাঘের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করতে আসেন তখন তাদের ঢুকতে বাধা দেয়া হয়৷
আগামী মাসে বাঘগুলোকে রাচাবুরি প্রদেশে নিয়ে যাওয়া হবে৷ এদের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নেবে থাইল্যান্ড সরকার৷ জনগণকে এদের দত্তক নিতে উত্সাহও দেয়া হবে৷ বাঘদের নতুন আবাসস্থল ঘুরে এসে সন্তুষ্ট জাতীয় উদ্যান দপ্তরের আধিকারিকরা৷
সরকারের এ পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে 'ওয়ান গ্রিন প্ল্যানেট' -এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক বলেছেন, সত্য উদ্ঘাটনের সময় এসেছে৷ যতই বলা হোক যে বাঘমন্দিরের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ভিক্ষুরা জীবজন্তুদের যত্ন ও উদ্ধারকাজে সর্বদাই ব্যস্ত থাকেন। আমাদের অন্তর্তদন্তে কিন্তু এর ঠিক উল্টো ছবিই ধরা পড়েছে৷ পরিবেশকর্মীদের তাই আজ বড় আনন্দের দিন৷