মাটি কিনবেন, মাত্র ৫ টাকা !
সৈয়দপুর : মাটি কিনবেন, দাম মাত্র ৫ টাকা ! জীবনের শেষ বয়সে কঙ্কালসার বৃদ্ধের এমন হাঁকাহাঁকি। নিয়তির করুন পরিণতি অার বাস্তবতার নিরিখে মাটি বিক্রি করেই চলে অাশির্ধ্বো মকবুল হোসেনের সংসার।
১৬ কোটি মানুষের বাংলাদেশে অাশি বছরেরও বেশি বয়সী মকবুল হোসেনের বসবাস সৈয়দপুরের বোতলাগাড়ির তেলীপাড়ায়। একসময় মকবুল হোসেন টগবগে তরুণ ছিলেন, স্বাধীনতার অাগে কাজ করতেন সৈয়দপুরস্থ মারোয়াড়ীতে ইন্ডিয়ান টেন্ডু পাতা ও তামাকের মিলিত মিশ্রণে তৈরি নস্য (বিড়ি) জাতীয় পণ্যের ফ্যাক্টরিতে।
তখন দিন ভালোই যাচ্ছিল মকবুলের। মকবুল বিয়ে করেন, বউয়ের কোলজুড়ে অাসে ৬টি সন্তান। ৪ ছেলে ও ২ মেয়ের জনক তিনি।
৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর দেশব্যপী সৃষ্ট অস্থিরতায় বন্ধ হয়ে যায় মকবুল হোসেনের উপার্জনের ক্ষেত্র বিড়ি ফ্যাক্টরিটি।
এরই মাঝে এসে যায় অানছার বিড়ি, তাই অার কখনই পূর্বের নস্য জাতীয় পণ্যটি বাজারে জায়গা নিতে পারেনি। দীর্ঘদিনের পেশাটি চলে যাবার পর পৈতৃক সম্পত্তি থাকলেও মকবুলের বাবা তাকে সম্পত্তি না দেয়ার কারণে তিনি নিজের সংসার চালিয়েছেন কখনো অন্যের ক্ষেত নিড়ানি দিয়ে কিংবা রিকশা-ভ্যান চালিয়ে।
এভাবেই কেটে যায় স্ত্রী অার ৬ সন্তান নিয়ে দিনের পর দিন। অার্থিক অসচ্ছলতার কারণে মকবুল তার সন্তানদের বিদ্যালয়ে পড়াতে পারেননি।
কিছুদিন মকবুল তার স্ত্রী সন্তানদের সাথে ভালোই দিন কাটান। তার সন্তানরা সারাদিন পরিশ্রম করে দিনশেষে ব্যাগভর্তি বাজার অার তাদের মায়ের জন্য পান-সুপাড়ি নিয়ে অাসতো।
মকবুল হোসেন সেই সুখের ক্ষণে খুশিমনে পৈতৃক সূত্রে পাওয়া জমির কিছু অংশ বিক্রি করে দুই মেয়েরই একসাথে বিয়ে দেন। এরপর থেকে মকবুলের জীবনের অন্য অধ্যায়ের শুরু হয়।
ছেলেদের মধ্যে ধীরে ধীরে পরিবর্তন হতে শুরু করে, পর্যায়ক্রমে তারা বিয়ে করে পরিবার থেকে অালাদা হয়ে যায়। নিজের সংসার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যায় মকবুলের অাদরের সন্তানরা। বাবা-মায়ের সংসার দেখার সময় তাদের হয়নি ।
বৃদ্ধ বয়সে মকবুল কাধে তুলে নেন বাঁশের তৈরি চাঙ্গাড়ী ও বাঙ্কুয়া। ছোট্ট সেই চাঙ্গারীতে পলি-দোঅাঁশ মাটি নিয়ে তিনি ঘুরে বেড়ান সৈয়দপুর শহরের পাড়া-মহল্লার অলিতে গলিতে।
তিনি যে মাটি বিক্রয় করেন সেই মাটি দিয়ে শহরের মানুষরা চুলা মোছার কাজ করেন। এক চাঙ্গারী মাটির দাম মাত্র ৫ টাকা। সারাদিন পুরো শহর ঘুরে মকবুল মাটি বিক্রি করে পান মাত্র ৬০-৭০ টাকা। সেই টাকা দিয়েই ২৫ বছর ধরে চলছে মকবুলের সংসার ।
মকবুল জানান, এখন শহরের অধিকাংশ গৃহিণীরা সিমেন্ট দিয়ে তৈরি চুলা কিংবা এলপি গ্যাসের চুলা ব্যবহার করেন, তাই মাটি বিক্রি খুবই কম। কোনোদিন হয় আবার কোনোদিন হয় না।
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে তিনি বলেন, অামার অালসারের ব্যথা অাছে, অাটদিন ধরে ব্যথার কারণে মাটি নিয়ে বেরুতে পারিনি। কিভাবে চলে সংসার? অামার খাওয়া-দাওয়া নিজেরই, অভাব-অভিযোগ অাগেও ছিল এখনো অাছে। বেশির ভাগ সময়ই অর্থকড়ির টানাটানিতে থাকি।