এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : সন্তানের মুখের প্রথম কথা শুনতে বাবা-মায়ের থাকে অধীর আগ্রহ। শিশুর মুখে আধো আধো বুলি শুনতে সবারই ভালো লাগে। কিন্তু শিশুটি যদি স্বাভাবিক সময় কথা না বলে, তা এক বিরাট দুশ্চিন্তার বিষয়।
বর্তমানে শিশুদের দেরিতে কথা বলা বাবা-মায়ের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাকি সবকিছুই হয়ত ঠিকঠাক, কিন্তু একদমই কথা বলতে অনাগ্রহী ছোট্ট সন্তান।
শিশুর কথা বলার সঠিক সময়
১. সাধারণত একটি শিশু জন্ম থেকে তিন মাস, এ সময় শিশু মানুষের কণ্ঠ বা শব্দ শুনতে পারে এবং অনুকরণ করে শব্দ করার চেষ্টা করতে চায়। তার এ অনুকরণের শব্দ করাকে বলা হয় ‘কু- coo’।
২. তিন থেকে ছয় মাস বয়সি শিশুরা মূলত বুঝতে শিখে কীভাবে একজন মানুষ অন্য একজন মানুষের সঙ্গে কথা বলে৷
৩. ছয় থেকে ৯ মাস বয়সী শিশুরা মুখ দিয়ে বা বা, দা দা বিভিন্ন ধরনের শব্দ করে। এগুলোই সাধারণত একটি শিশুর প্রথম শব্দ এবং কথা বলার সূচনা হয়।
৪. নয় থেকে বারো মাস বয়সি শিশুরা সাধারণত ১-২টি শব্দ বলতে সক্ষম হয় এবং বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই শব্দগুলো হয় বাবা, মা, দাদা, নানা।
৫. দুই বছরের একটি শিশু সাধারণ আদেশ এবং প্রশ্ন বুঝতে পারার পাশাপাশি বিভিন্ন শব্দের সংমিশ্রণে কথা বলতে শিখে যায়। এ বয়সী শিশুরা সহজ সহজ প্রশ্ন করতেও শিখে যায়। এ বয়সী শিশুরা ব্যথা পেলে তা মুখে বলতে পারে। পরিবারের অনেকের নাম বা সম্পর্কগুলোর নাম বলতে পারবে। বাইরের মানুষ দেখলে ‘সালাম’ বলতে পারে
৬. তিন বছর বয়সী শিশু প্রায় ১০০০ শব্দ ব্যবহার করতে পারে এবং বিভিন্ন শব্দের সমন্বয়ে বাক্য গঠন করতে পারে। এই বয়সী শিশুরা কেমন আছো? ভালো আছি ইত্যাদি বাক্য বলতে সক্ষম হয়।
কীভাবে বুঝবেন শিশু দেরীতে কথা বলছে?
অনেক বাবা-মাই সময়মত বুঝতে পারেনা যে তাদের শিশু সন্তান দেরীতে কথা বলছে বা দেরীতে কথা বলার লক্ষণ রয়েছে। কীভাবে বুঝবেন যে আপনার সন্তান দেরীতে কথা বলছে,
বয়স ২: শিশু ৫০টিরও কম শব্দ ব্যবহার করে
বয়স আড়াই: শিশু কমপক্ষে দুই-শব্দের বাক্য গঠন করে কথা বলে না।
বয়স ৩: কমপক্ষে ২০০ শব্দ ব্যবহার করে না, নানারকম প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করে না, তাদের সাথে বসবাস করলেও কথা কম বলে। পূর্বে শেখা শব্দ বলতে অক্ষম
শিশুর দেরিতে কথা বলার কারণ
শিশুদের দেরিতে কথা বলার পেছনে বিভিন্ন কারণ রয়েছে। একাকীত্বের পাশাপাশি কিছু রোগের কারণে অনেক শিশু দেরিতে কথা বলে। যেমন-
১. শহরের একক পরিবার
গ্রামের তুলনায় শহরের শিশুরা দেরিতে কথা বলে। গ্রামের শিশুরা মানুষের সাথে, অন্য বাচ্চাদের সঙ্গে মেশে, মোবাইল ফোন বেশি হাতে পায় না। কিন্তু শহরে বেশিরভাগই ছোট পরিবার, অন্যদের সাথে মেশার সুযোগ কম তাই শিশু কথা বলে দেরীতে। এছাড়া বাবা-মা চাকরিজীবী হলে শিশুর সঙ্গে বাবা-মায়ের কম কথা বলাও শিশুর দেরিতে কথা বলার কারণ।
২. মোবাইল ফোন
বর্তমান সময়ে বেশীরভাগ শিশুর দেরিতে কথা বলা বা কথা কম বলার পেছনে দায়ী মোবাইল ফোন। এক বছর বয়সে অনেক শিশু কথা বলা শিখতে শুরু করার পর দেখা গেছে দুই বছর বয়সে এসে তা কমে যাচ্ছে। এর কারণ শিশুর ওপর মোবাইল ফোনের প্রভাব।
৩. ডাউন সিনড্রোম
ডাউন সিনড্রোমে শিশুর শরীর তুলতুলে নরম ও মুখমণ্ডলের ধরন আলাদা থাকে। এই শিশুদের বুদ্ধি হয় না, হাঁটা, বসা, চলাফেরা করতে পারে না এবং তারা কথাও দেরিতে বলে।
৪. সেরিব্রাল পালসি
জন্মের সময় কান্না করতে দেরি হওয়ার কারণে মস্তিষ্কে অক্সিজেন কমে যায়, মস্তিষ্ক কাজ করে না। যার ফলে হাঁটা ও বসার মতো কথা বলাও দেরিতে হয়, এ ধরনের শিশুর বুদ্ধি কমে যায়।
৫. অটিজম
অটিজম শিশুদের আচরণগত অসুবিধা দেখা যায়। শিশু এক জায়গায় বসে থাকে না, নিজের মতো চলে। অন্য শিশুদের সঙ্গে মেশে না, কথা বলে না, কিছু আচরণ করে যা অন্য বাচ্চারা করে না। এক্ষেত্রে এ ধরনের শিশুদের কথা বলতেও দেরি হয়।
৬. এছাড়া শিশুর জন্মগতভাবে ঠোঁট কাটা, তালু কাটা থাকলে কিংবা শিশু কানে কম শুনে, এমন শিশুদের কথা বলতে দেরি হয়।
১. স্পিচ থেরাপি
দেরীতে কথা বলা শিশুদের চিকিৎসার প্রথম ধাপ হল স্পিচ থেরাপি। এর মাধ্যমে কথা বলতে অক্ষম অথবা স্বাভাবিকভাবে কথা বলতে পারে না এমন রোগীদের চিকিৎসা করা হয়। এছাড়া তোতলানো, দেরিতে কথা বলা, কানে কম শোনার কারণে কথা বলার সমস্যা ইত্যাদি নানা কারণে যারা স্বাভাবিকভাবে কথা বলতে পারে না, তাদের স্বাভাবিক ছন্দে প্রাণখুলে কথা বলার সুযোগ এনে দিয়েছে স্পিচ থেরাপি।
স্পিচ থেরাপির মাধ্যমে শিশুদের সাথে কথা বলা, তাদের সময় দেওয়া, পছন্দের কাজগুলো করা, খেলার ছলে তাদের শব্দ শেখানো হয়, চেনানো হয়।
২. অন্যান্য সমস্যার সমাধান
অনেক সময় শিশুর অন্যান্য শারীরিক সমস্যার কারণেও কথা বলতে দেরি হয়। সুতরাং সেক্ষেত্রে আগে শিশুর শারীরিক সেই সমস্যা চিহ্নিত করে সেটা সমাধান করতে হবে এবং এরপরে কথা বলার চিকিৎসা প্রদান করতে হবে।
৩. বাবা-মায়ের করণীয়
প্রতিটি শিশুর কথা বলার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা হল শিশুর বাবা-মায়ের। শিশুকে পর্যাপ্ত সময় দিন। তার সাথে খেলা করুন। খেলার ছলে তাকে নানা ধরনের শব্দ শেখান এবং নানা ধরনের জিনিসের সাথে পরিচয় করিয়ে দিন। সবচেয়ে বড় বিষয় শিশুকে কখনোই মোবাইল দেবেন না, বরং তাকে সময় দিন। সূত্র: হেলথলাইন