এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : অতীতের ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাস ঘাটলে রামায়নে দেখা মিলবে লঙ্কা পতি রাবনের ভাই কুম্ভকর্ণ নামে একটি চরিত্র। যাকে নাকি ঘুম ভাঙাতে ঢাক-ঢোল নিয়ে গিয়ে দিনের পর দিন কানের কাছে শব্দ করে ঘুম ভাঙাতে হত। তবে এবার আর অতীত ইতিহাস নয়, উঠে আসলো নতুন এক অদ্ভূত ঘটনা।
ঘটনাস্থল দক্ষিণ কাজাখস্তানের কালাচি গ্রাম। বিগত চার বছর ধরে গ্রামটিতে কিছু রহস্যময় ঘটনা ঘটছে। যার কারণ জানার জন্য বড় বড় বিজ্ঞানীদের ঘাম ঝরছে। ওই গ্রামের লোকেরা এক রহস্যময় ঘুম-রোগে আক্রান্ত। এই গ্রামের মানুষদের হঠাৎ ঘুম এসে যাচ্ছে এবং এই ঘুমের সময়কাল কয়েক দিন থেকে শুরু করে কয়েক মাস পর্যন্ত দীর্ঘায়িত হচ্ছে। এই গ্রামের প্রায় এক চতুর্থাংশ বাসিন্দা কাজ করতে করতে হঠাৎ ঘুমিয়ে পড়েন।
তবে এটি স্বাভাবিক ঘটনা নয়। এসব বাসিন্দা রাত জেগে কাজও করেন না কিংবা কোনো নেশাদ্রব্যও সেবন করেন না। তাদের ঘুম কিন্তু এক কিংবা দুই ঘণ্টায় কাটে না। এই ঘুম ভাঙতে নাকি কখনও পাঁচ থেকে ছয়দিনও লাগে। ঘুম ভাঙার পর এসব মানুষকে পুরোপুরি বিভ্রান্ত ও হতবিহ্বল মনে হয়।
২০১৩ সালের মার্চে প্রথমবারের মতো এই সমস্যা দেখা দেয়। এ পর্যন্ত গ্রামের ১২২ জন বাসিন্দা এ সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন। গত বছর সেপ্টেম্বরে একটি স্কুলের ৮ শিক্ষার্থী একই সময় একই সঙ্গে ঘুমে ঢলে পড়ে। কয়েক মাস পরে গ্রামের ৬০ বাসিন্দা এই ‘হঠাৎ ঘুমের’ কবলে পড়েন। নবমবারের মতো চলতি মাসে এই ঘটনা ঘটলে স্থানীয় সরকার কর্তৃপক্ষ গ্রামের বাসিন্দাদের সরিয়ে নিতে শুরু করে।
ভিক্তর কাজাচিঙ্ক নামে গ্রামের এক বাসিন্দা বলেন, ‘ঘুম ভাঙার পর কোনো কারণ ছাড়াই আমার রক্তচাপ বাড়তে শুরু করে। আমি কোথায় আছি ছয় সপ্তাহ পর্যন্ত এ বোধ আমার ছিল না। এটা আপনার মনকে কঠিনভাবে প্রভাবিত করে। আমি কষ্টের চূড়ান্ত সীমায় আছি।’
ভিক্তর কাজাচিঙ্কের মতো কালাচি গ্রামের আরও ৩০ বাসিন্দা দ্বিতীয়বারের মতো এই ‘হঠাৎ ঘুমের’ শিকার হয়েছেন। তাতিয়ানা পাভলিঙ্কো নামে এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘আমরা সবাই ‘হঠাৎ ঘুম’ আতঙ্কে আছি।’’
বিষয়টি জানতে পেরে চিকিৎসক ও বিজ্ঞানীরা ছুটে যান কালাচি গ্রামে। কয়েকদিন সেখানে অবস্থান করে পরিবেশের বিষাক্ততা থেকে শুরু করে রোগীদের বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করেন তারা। তবে এসব পরীক্ষায় কোনো উত্তর মেলেনি।
আফ্রিকার ট্রাইপানোসোমিয়াসিসের মতো এটি জীবাণুঘটিত ঘুম রোগ কি না তা জানার চেষ্টাও করেন বিজ্ঞানীরা। সব কিছু ছাপিয়ে সেই ফলাফল শূন্য। অর্থাৎ বিজ্ঞানীরা এসব পরীক্ষার মাধ্যমে এ রোগের কোনো যৌক্তিক কারণ খুঁজে পাননি।
চিকিৎসা বিজ্ঞানের কোনো ব্যাখ্যা না পেয়ে অনেকে আবার বিষয়টিকে অন্যভাবে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছেন। কালাচি গ্রামটি সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের আকরিক খনি থেকে মাত্র ৩৭ মাইল দূরে অবস্থিত। এই খনিটি এখন পরিত্যক্ত এবং খনি সংলগ্ন ক্রাসঙ্গোরস্কি শহরটি এখন রীতিমতো ভূতুড়ে এলাকায় পরিণত হয়েছে। অনেকের ধারণা পরিত্যক্ত খনি থেকে এখনও রেডন গ্যাস বের হয়। আর এই গ্যাসের কারণেই এই সমস্যা দেখা দিয়েছে। কারণ রেডন গ্যাস মানুষকে অচেতন করে ফেলে। কিন্তু কালাচির বাতাসে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ রেডন গ্যাস পাওয়া না যাওয়ায় চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা এই তত্ত্ব উড়িয়ে দিয়েছেন।
কাবদ্রাশিত আলমাগামবিতভ নামে এক চিকিৎসক বলেন, ‘আমি নিজে অ্যানেসথিসিওলজিস্ট এবং আমরা অ্যানেসথেসিয়ার জন্য একই গ্যাস ব্যবহার করি। তবে অপারেশনের সর্বোচ্চ এক ঘণ্টা পর রোগীর জ্ঞান ফিরে আসে।’
অনেক সময় চিকিৎসকরা যখন এ ধরনের ঘটনার কোনো যৌক্তিক ব্যাখ্যা হাজির করতে পারেন না তখন তারা এটিকে গণহিস্টিরিয়ার ক্যাটাগরিতে ফেলেন। মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই হিস্টিরিয়ার বিষয়টিও বেশ রহস্যময়। বৈজ্ঞানিক কোনো ব্যাখ্যা হাজির না হওয়া পর্যন্ত তাই রহস্যের অন্তরালেই থাকুক কালাচির বাসিন্দাদের এই রোগ।
কালাচি গ্রামের বাসিন্দাদের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এই লোকগুলো দুই থেকে ছয় দিন পর্যন্ত ঘুমায়। তাহলে এই গ্যাসের কার্যকারিতা রইলো কোথায়? এছাড়া যখন একজন লোক ঘুমিয়ে পড়ছে তখন তারই পাশে থাকা অপর ব্যক্তি সজাগ থাকে কী করে?’
২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/জহির/মো:জই/