এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়িকে ভারত নিজেদের ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য ঘোষণা করলে নতুন করে আলোচনায় আসে জিআই। তবে অনেকেই জানেন না জিআই কী, এটি কীভাবে নির্ধারণ হয়।
জিআই সনদ
গত ১ ফেব্রুয়ারি টাঙ্গাইল শাড়িকে নিজেদের ভৌগলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য উল্লেখ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দেয় ভারতের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়। এতে ভার্চুয়াল মাধ্যমে ক্ষোভে ফেটে পড়েন বাংলাদেশিরা।
ব্যাপক বিতর্ক ও সমালোচনার মুখে দুই দিনের মধ্যে পোস্ট সরিয়ে নিয়েছে ভারতের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়। এরপর গত ৭ ফেব্রুয়ারি জানা যায়, টাঙ্গাইল শাড়ি নিয়ে হইচইয়ের মধ্যেই ‘সুন্দরবনের মধু’কেও জিআই পণ্য হিসেবে নিবন্ধন করে নিয়েছে ভারত। ২০২১ সালের ১২ জুলাই সুন্দরবনের মধুকে ভৌগলিক নির্দেশক পণ্য হিসেবে নিবন্ধন করতে পেটেন্ট ডিজাইন ও ট্রেডমাকর্স অধিদফতরে আবেদন করে পশ্চিমবঙ্গ বন উন্নয়ন করপোরেশন। যাচাই-বাছাই শেষে গত ২ জানুয়ারি জিআই সনদ দেয়া হয়েছে।
তবে এই জিআই সনদ নিয়ে যখন আলোচনা তুঙ্গে তখন অনেকের মনেই প্রশ্ন উঠেছে জিআই কী, এটি কীভাবে নির্ধারণ করা হয়?
জিআই কী?
জিআই হলো ভৌগলিক নির্দেশক চিহ্ন যা কোনো পণ্যের একটি নির্দিষ্ট উৎপত্তিস্থলের কারণে এর খ্যাতি বা গুণাবলী নির্দেশ করতে ব্যবহৃত হয়। সাধারণত জিআইতে উৎপত্তিস্থলের নাম (শহর, অঞ্চল বা দেশ) অন্তর্ভুক্ত থাকে। জিআই (GI) এর পূর্ণরূপ হলো (Geographical indication) ভৌগলিক নির্দেশক। WIPO (world intellectual property organization) হলো জিআই পণ্যের স্বীকৃতি দানকারী প্রতিষ্ঠান।
জিআই কীভাবে নির্ধারণ হয়?
কোনও দেশের পরিবেশ, আবহাওয়া ও সংস্কৃতি যদি কোনও একটি পণ্য উৎপাদনে ভূমিকা রাখে এবং ভৌগোলিকভাবে ও ঐতিহ্যগতভাবে সেই পণ্যগুলোকে ‘নিজস্ব’ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা যায়, তাহলে সেটিকে ওই দেশের জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। প্রতিটি পণ্যের সঙ্গে সে স্থানের নাম যুক্ত করা হয়।
যে সব পণ্য এই স্বীকৃতি পায়, সেগুলোর মাঝে ভৌগোলিক গুণ, মান ও স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য থাকে। কোনো পণ্য জিআই স্বীকৃতি পেলে পণ্যগুলো বিশ্বব্যাপী ব্র্যান্ডিং করা সহজ হয়। পণ্যগুলোর আলাদা কদর থাকে। ওই অঞ্চল বাণিজ্যিকভাবে পণ্যটি উৎপাদন করার অধিকার এবং আইনি সুরক্ষা পায়।
যেমন: ঢাকাই জামদানি এক সময় শুধু ঢাকার কারিগররাই উৎপাদন করতে পারতেন। আর ঢাকার আবহাওয়াও এ জামদানি তৈরির জন্য উপযোগী ছিল। ফলে যুগের পর যুগ তারা এ জামদানি তৈরি করে এসেছে। যা পৃথিবী জুড়ে স্বীকৃত।
জি আই সনদের আবেদন কীভাবে করতে হয়?
বাংলাদেশে সর্বপ্রথম ২০১৩ সালে ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য (নিবন্ধন ও সুরক্ষা) আইন হয়। এরপর ২০১৫ সালে আইনের বিধিমালা তৈরির পর জি আই পণ্যের নিবন্ধন নিতে আহ্বান জানায় শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠান প্যাটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদফতর (ডিপিডিটি)।
আইন অনুযায়ী, ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্যের নিবন্ধনের জন্য কোনও ব্যক্তিসংঘ, প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনকে ডিপিডিটিতে পর্যাপ্ত প্রমাণ ও তথ্য-উপাত্তসহ আবেদন করতে হয়।
আবেদনপত্র জমা দেয়ার পর সেগুলোকে নানাভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। কোনও ভুলভ্রান্তি থাকলে আবেদনকারীকে পরিবর্তন বা সংশোধনের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়।
আবেদনপত্রের সঙ্গে যেসব তথ্য দেয়া হয় সেগুলো বিবেচনা করার পর সব ঠিক থাকলে সেই জার্নালে প্রকাশ করা হয়। জার্নালে প্রকাশিত হওয়ার পর কেউ যদি সেই পণ্যের বিরোধিতা করতে চায়, তাহলে তার জন্য সর্বোচ্চ দুই মাস সময় ধরা আছে।
এসময়ের মধ্যে কোনা বিরোধিতা না পাওয়া গেলে পণ্যটিকে জি আই সনদ বা নিবন্ধন সার্টিফিকেট দেয়া হয়।
বাংলাদেশের আইন কী বলছে?
ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য (নিবন্ধন ও সুরক্ষা) আইন ২০১৩-এর ২৯ ধারা অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্যকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করলে বা বেআইনিভাবে ব্যবহার করলে ছয় মাস থেকে তিন বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা ৫০ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা জরিমানা কিংবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারে।