এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : ভাষাটির নাম “খাড়িয়া”। বর্তমানে এ ভাষা জানা দুইজন বেঁচে আছেন। সম্পর্কে তারা দুই বোন। বয়স ৭০–এর বেশি। তারা মারা গেলে দেশ থেকে “খাড়িয়া” নামের ভাষাটিরও মৃত্যু ঘটবে। পৃথিবীর বুক থেকে হারিয়ে যাবে একটি ভাষা ও একটি সংস্কৃতি।
জানা যায়, “খাড়িয়া” ভাষা জানা দুইজনের বাস মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার ফিনলে টি কোম্পানির বর্মাছড়া চা বাগানের বস্তিতে। ভেরোনিকা কেরকেটা ও খ্রিস্টিনা কেরকেটা নামে ওই দুই বোন “খাড়িয়া” ভাষা পুরোপুরি জানেন। এজন্য দুই বোন এ ভাষায় কথা বললেও আর কোনো সঙ্গী নেই তাদের।
বিবিসির প্রতিবেদন বলছে, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার ৩৫টি গ্রামে খাড়িয়াদের বসবাস। বাংলাদেশে অনেক খাড়িয়া জাতি আছে কিন্তু এই ভাষা পাওয়া যাবে না। অনেক মানুষ আছে কিন্তু এই ভাষায় কথা বলতে পারবেন না। তাদের বাবা-মা এই ভাষা জানে না, তাই সন্তানরাও জানে না।
তবে দেশ থেকে ভাষাটি হারিয়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কিংবা পাঠ্যপুস্তকে এর ব্যবহার না থাকাকেই দায়ী করছিলেন এই ভাষা জানা ভেরেনিকা কেরকেটা। তিনি বলেন, ‘বাচ্চারা স্কুলে যায়, বাংলা ভাষায় পড়ালেখা করে। বাংলায় কথা বলে, বাংলা ভাষা ভালোবাসে। ঘোরেফেরে বাংলায় কথা বলে। আমাদের (খাড়িয়া) ভাষায় বইপত্র থাকলে, টিভিতে প্রচার থাকলে এই ভাষা সবাই জানতো ‘
নিজেদের ভাষার চর্চা নিয়ে ভেরোনিকা বলেন, “পরিবারের মধ্যেও কেউ এই ভাষায় কথা বলতে পারেন না। অনেকে এ ভাষাকে উড়িয়া বা চা বাগানের ভাষার সঙ্গে মিলিয়ে ফেলেন। আমাদের তাই কথা বলতে হয় বাংলা ভাষায়। ইচ্ছে তো করে নিজের ভাষায় প্রাণ খুলে কথা বলি।”
তিনি আরও বলেন, “গ্রামে আমার ছোট বোন ছাড়া কেউ এই ভাষা পারে না। তাই তার সঙ্গে দেখা না হলে এই ভাষা বলার সুযোগ নেই।
আমাদের ছেলে-মেয়েদের বা নাতি-নাতনিদের এই ভাষায় কথা বললে তারা হাসাহাসি করে, ঠাট্টা করে। আমি নিজেও প্রায় অসুস্থ থাকি। তাই বোনের সঙ্গে দেখাও হয় না, কথাও হয় না।”
ভেরোনিকার আফসোস, “আমরা বলতে পারলেও লিখতে পারি না। খাড়িয়া সমাজে মাত্র ১৫-২০ জন হবে, যারা খাড়িয়া ভাষার কয়েকটা মাত্র শব্দ জানে। খাড়িয়া ভাষার পাঠ্যবই এবং ব্যাকরণ আছে ভারতে। আমাদের জাতি আছে ভারতে। তাদের সঙ্গে কথা বলতে পারি না। দেখাও করতে পারি না। আমাদের পাসপোর্ট নাই, টাকাও নাই তাই করতে পারি না।”
বাংলাদেশ থেকে বিপন্নপ্রায় ভাষাটি সংরক্ষণের দাবি খাড়িয়া জনগোষ্ঠীর।
শ্রীমঙ্গল উপজেলার মংরাবস্তি ৭০ বছর বয়সী দয়াময় খাড়িয়া। তিনি জানান, এই এলাকার ১১০টি খাড়িয়া পরিবারের বসবাস। অথচ মাত্র দুইজন এই ভাষায় কথা বলতে পারে।