এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : ধাবমান ট্রেনের সামনে লিকপিকে হাতে লাঠিটা প্রাণপণে উঁচিয়ে ধরেছিল ছেলেটি। লাঠির মাথায় এক চিলতে লাল কাপড়। দূর থেকে এ দৃশ্যটা চোখে পড়তেই বুকটা ছ্যাঁৎ করে ওঠে লোকাল ট্রেনের চালকের, যা বোঝার বুঝে নেন তিনি। ঠিক যেনো অনেকটা সিনেমায় যেমন হয়।
কালিকাপুর স্টেশনে ঢোকার মুখে অতঃপর শেষ মুহূর্তে ব্রেক কষে কোনোমতে ট্রেন থামান তিনি। রেলকর্মীরা নিচে নেমে দেখেন, রেললাইনে দুই থেকে আড়াই ইঞ্চির ফাঁক।
শিশুটির তৎপরতা এবং উপস্থিত বুদ্ধির জেরেই প্রাণে বেঁচে যান শ’খানেক ট্রেনযাত্রী। অল্পের জন্য বড় দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পায় আপ ক্যানিং লোকাল। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে আটটার দিকে ঘটনাটি ঘটে ভারতের শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখার চম্পাহাটি এবং কালিকাপুর স্টেশনের মাঝে।
রেল ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কালিকাপুর স্টেশনের ধারে ঝুপড়িবাসী বালকের নাম হাশেম আলি মণ্ডল। থাকে মা ও দিদির সঙ্গে। স্থানীয় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার স্কুলেও যায় চতুর্থ শ্রেণির ওই ছাত্র।
এদিন সকালে স্কুলে যাওয়ার পথেই হাশেমের চোখে পড়ে যায় রেললাইনে বিপজ্জনক ফাটল। মুহূর্তের মধ্যে সে বুঝতে পারে, ট্রেন চলে এলে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
দেরি করেনি হাশেম। এক ছুটে বাড়ি গিয়ে দিদি মানকুরা খাতুনকে পুরো ঘটনা খুলে বলে। সব শুনে মানকুরাই ভাইকে বুদ্ধি দেয়। এক টুকরো লাল কাপড় ভাইকে দিয়ে বলে, সে যেন ট্রেন ঢোকার মুখে কাপড়টা লাঠিতে বেঁধে নাড়াতে থাকে।
লোকাল ট্রেনের চালকের কাছ থেকে পুলিশ জেনেছে, দিদি যা বলেছিল, হাশেম ঠিক তা-ই করেছিল। যতক্ষণ না চালক দেখতে পেয়েছেন, সে লাঠি নাড়িয়ে গেছে।
পুলিশ সূত্রের খবর, চালক ফাটল থেকে খানিকটা দূরে ট্রেন থামিয়ে সব দেখেশুনে কন্ট্রোলরুমে খবর দেন। পুলিশ এক বাক্যে মানছে, ছেলেটি না থাকলে মারাত্মক বিপদ হতে পারতো। পরে রেলকর্মীরা এসে লাইনের ফাটল মেরামত করেন।
রেল সূত্রে জানা গেছে, এ ঘটনার জেরে কোনো লোকাল ট্রেন বাতিল করতে না হলেও প্রায় মিনিট চল্লিশ ওই শাখায় ট্রেন চলাচল ছিল অনিয়মিত। কিছু ট্রেন অনেক দেরিতে চলেছে। তবে নিত্যযাত্রীরা যে প্রাণে বেঁচেছেন, তাতেই নিশ্চিন্ত রেল কর্তৃপক্ষ।
সে জন্য ‘বালকবীর’ হাশেমকেই অবশ্য তারা পুরো কৃতিত্ব দিচ্ছেন। হাশেম অবশ্য অতশত বোঝে না। সে শুধু হাসিমুখে বলছে, এ তো আমি হামেশাই দেখতে পাই, রেললাইনে লাল কাপড় বাঁধা লাঠি বসিয়ে কাজ হচ্ছে। দিদির কথা শুনে তাই আর দেরি করিনি! সূত্র : আনন্দবাজার
২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/জহির/মো:জই/