ফাহ্মিদা তাপসী: গেল মঙ্গলবার ৪ মার্চ, গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের ইনস্টাগ্রাম পেজে প্রকাশ করা হয়েছে বয়স্ক এক নারীর ছবি। তাঁকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে করা হয়েছে সে পোস্ট।
যেখানে উল্লেখ করা হয়, জানুয়ারি ২০২৩ সালের জরিপ অনুযায়ী এখন পর্যন্ত সবচেয়ে প্রবীণ ব্যক্তি তিনি। মারিয়া ব্রানিয়াস মোরেরা নামে এ নারীর বয়স এখন ১১৭।
গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস ইনস্টাগ্রামে মোরেরার একটি ছবি পোস্ট করে লিখেছে, ‘মারিয়া ব্রানিয়াস মোরেরাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা, আজ তিনি ১১৭তম জন্মদিন উদযাপন করছেন।
২০২৩ সালের জানুয়ারিতে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের করা বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক ব্যক্তি হিসেবে নিজের জায়গা করে নিয়েছিলেন তিনি।
মারিয়া ৪ মার্চ ১৯০৭ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকোতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, কিন্তু কাতালোনিয়ায় বসতি স্থাপন করতে আট বছর বয়সে তিনি তাঁর পরিবারের সঙ্গে স্পেনে ফিরে আসেন। তিনি তখন থেকেই এই অঞ্চলে বসবাস করছেন এবং গত ২৩ বছর ধরে একই নার্সিং হোমে রয়েছেন।
গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ১৯০৭ সালে সান ফ্রান্সিসকোতে জন্মগ্রহণ করা মারিয়া এ বছর তাঁর ১১৭তম জন্মদিন উদযাপন করেছেন।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, স্প্যানিশ ফ্লু মহামারি, এমনকি কভিড ১৯ মহামারিকেও হারিয়ে জীবনযুদ্ধে জয়ী মারিয়া ব্রানিয়াস মোরেরা। বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক জীবিত ব্যক্তি হিসেবে জায়গা করে নিয়েছেন গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস তালিকায়।
দীর্ঘায়ু কার না কাম্য? কিন্তু জীবনযাপন ব্যবস্থা, খাদ্যভ্যাস, পরিবেশগত নানা কারণে লোকের গড় আয়ু যেখানে কমছে সেখানে শতবর্ষ পার করে ফেলা এ নারী সবাইকে বিস্মিত করে যাচ্ছেন বিশ্ববাসীকে।
তবে কি তিনি কোনো গোপন মন্ত্র জানেন আয়ু ধরে রাখার? এমন প্রশ্ন অনেকেরই মনে ঘুরপাক খাচ্ছে। এমনকি মারিয়ার জন্মদিনে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের করা পোস্টে অনেকেই মন্তব্য করেছেন,অভিনন্দন জানিয়েছেন। তবে এসব ছাপিয়ে বেশির ভাগ ব্যবহারকারীর মুখে ছিল একটাই প্রশ্ন, মারিয়ার ফিটনেস রহস্য কী? সে গোপন রহস্য প্রকাশ করেছেন মারিয়া নিজেই। গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি নিজের জীবনাচার নিয়ে কথা বলেছেন।
প্রবীণ এ ব্যক্তির দীর্ঘায়ুর গোপন রহস্য
গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের সঙ্গে মারিয়া ভাগ করেছেন যে তাঁর দীর্ঘায়ুর পেছনে শুধু যে ভাগ্য এবং ভালো জেনেটিকস রয়েছে, তা কিন্তু নয়।
তাঁর এত দিন সুস্থভাবে বেঁচে থাকার ক্ষেত্রে সাহায্য করেছে শৃঙ্খলা, তাঁর মনের প্রশান্তি, পরিবার এবং বন্ধুদের সঙ্গে ভালো সংযোগ, প্রকৃতির সঙ্গে যোগাযোগ, মানসিক স্থিতিশীলতা, উদ্বেগবিহীন জীবন, অনুশোচনাহীন জীবন, জীবনের প্রতিটি পাতাজুড়ে প্রচুর ইতিবাচকতা এবং খারাপ ব্যক্তিত্বের মানুষদের থেকে দূরে থাকা। অর্থাৎ এই ১১৭ বছর ধরে মারিয়ার সুস্থ মানসিকতাই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তাঁকে সাহায্য করে গেছে। আরো একবার প্রমাণ হয়ে গেছে যে মনের জোর বড় জোর। মারিয়া এটাও জানিয়েছেন, তিনি বর্তমানে ভালো অবস্থায় আছেন। তাঁর শ্রবণশক্তি এবং চলাফেরার সমস্যা ছাড়া আর কোনো শারীরিক বা মানসিক সমস্যা নেই।
যদিও ১৯১৮ সালের স্প্যানিশ ফ্লু মহামারি এবং সেই সঙ্গে ১৯৩৬-১৯৩৯ সালের স্প্যানিশ গৃহযুদ্ধের সময় নিজের খুব খারাপ স্মৃতির কথা জানিয়েছেন মারিয়া।
এমনকি ১৯১৮ সালের মহামারির এক শতাব্দীরও বেশি সময় পরে, ২০২০ সালে ১১৩ বছর বয়স চলছিল মারিয়ার। করোনার সেই সময় কয়েক সপ্তাহ পরে তিনিও কভিড ১৯ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন, যদিও কয়েক দিনের মধ্যেই সম্পূর্ণভাবে সুস্থও হয়ে গিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন।
১১৭তম জন্মদিন পালন করেছেন যেভাবে মারিয়া
গেল ২৩ বছর ধরে মারিয়া স্পেনের একটি নার্সিং হোমে রয়েছেন। এবারের জন্মদিন সেখানেই কেটেছে তাঁর। এ নার্সিং হোমের ডিরেক্টর ইভা ক্যারেরা বক্স গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসকে বলেছেন, তিনি এই বিশেষ দিনটি নিজের পরিবার এবং বন্ধুদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে উদযাপন করতে পেরে খুব খুশি। তাঁর জন্মদিনে এত মানুষ যে তাঁকে অভিনন্দন জানিয়েছেন, এ বিষয়টিও মন কেড়েছে মারিয়ার। কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন তিনি।--কালের কণ্ঠ