বৃহস্পতিবার, ০৭ মার্চ, ২০২৪, ০৮:৫৪:১৯

কিছু অদ্ভুত শখ বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের

কিছু অদ্ভুত শখ বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের

এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের জীবনযাপন বলতেই আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে বিলাসবহুল ভিলা, সুপার ইয়ট, প্রাইভেট জেট কিংবা দামী গাড়ির ছবি। 

এভাবেই নিজেদের ভোগের ইচ্ছে পূরণ করেন তারা। পাশাপাশি থাকে নানা ধরনের অদ্ভুত শখও। যেসব শখ পূরণ করার সাধ্য শুধুমাত্র এই সব কোটিপতিদেরই থাকে। চলুন আজ জেনে নিই এমনই কিছু শীর্ষ ধনীদের সম্পর্কে-

আস্ত একটি দ্বীপ রয়েছে শীর্ষ ধনী বার্নার্ড আর্নোর
কোটিপতিদের এই বিলাসী ভোগ প্রাচুর্য এবং লাইফস্টাইলের বিবরণে চোখ কপালে উঠে যেতে পারে যে কারোরই। ফোর্বসের দেয়া সর্বশেষ তথ্যমতে বর্তমানে বিশ্বের শীর্ষ ধনী বার্নার্ড আর্নোর সম্পদের পরিমাণ ২২৮ বিলিয়ন ডলার।

তার প্রতিষ্ঠিত বিলাসী পণ্যের ব্রান্ড লুই ভিতোঁ বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিলাসী পণ্য বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান। লুই ভিতোঁ ছাড়াও বার্নার্ড আর্নোর মালিকানায় আছে ক্রিস্টিয়ান ডিও, গিভ্যান্সি, বুলগারি, ফেন্ডি, সেফোরা সহ বিশ্বের নামকরা অন্তত ৭০টি ব্রান্ড।

জানলে অবাক হবেন যে, অন্যান্য ধনীরা বিলাসতরী বা ইয়ট ক্রয় করে অথচ বার্নার্ড আর্নোর মালিকানায় আছে বিশ্বের বিখ্যাত দুটি ইয়ট তৈরির কারখানা। যার একটি নেদারল্যান্ডস ও অপরটি যুক্তরাজ্যে অবস্থিত। কারখানা দুটি কিনতে তার খরচ হয়েছে ৫০ কোটি ইউরো।

এর পাশাপাশি তার মালিকানায় রয়েছে বিশ্বের অন্যতম বিলাসতরী হিসেবে পরিচিত সিমফোনি নামের একটি সুপার ইয়ট। এই ইয়টে একই সঙ্গে আতিথ্য নিতে পারেন ৩৬ জন অতিথি। ৩ হাজার টনের এই সুপার ইয়টে ছয়টি ডেক ছাড়াও রয়েছে হেলিকপ্টার ওঠানামার ব্যবস্থা। পাশাপাশি জিমনেসিয়াম, সিনেমা হল, সনা, বার সহ বিলাসী জীবনের কোনো উপকরণেরই ঘাটতি নেই এই ইয়টে। এমনকি একটি গলফ খেলার জায়গাও রয়েছে এই বিলাসতরীতে।

ইয়টের পাশাপাশি বার্নার্ড আর্নোর রয়েছে দাসো ফ্যালকন সেভেন এক্স মডেলের ব্যক্তিগত জেট বিমান। যার মূল্য ৪০ মিলিয়ন ডলার। পাশাপাশি বোম্বার্ডিয়ার কোম্পানির দুটি প্রাইভেট জেটও রয়েছে তার মালিকানায়।

শুধু ইয়ট কিংবা প্রাইভেট জেটই নয়, বার্নার্ড আর্নো তার পরিবার নিয়ে থাকেন রাজপ্রাসাদের মতন একটি ম্যানসনে। ১২ একর জমির ওপর নির্মিত এই ম্যানসনের দাম ২০ কোটি ডলার। এছাড়া অবকাশ কাটানোর জন্য ফরাসি আল্পস পর্বতমালায় তার রয়েছে ৩৪ বেডরুমের বিলাসবহুল ভিলা। যুক্তরাষ্ট্রের লস এঞ্জেলেস, বেভারলি হিলস ও হলিউড হিলসের মতোন বিশ্বের সবচেয়ে অভিজাত এলাকায় রয়েছে কোটি কোটি ডলার মূল্যের ব্যক্তিগত সম্পত্তি। শুধু এগুলোই নয়, বাহামা দ্বীপপুঞ্জে একটি আস্ত ব্যক্তিগত দ্বীপের মালিকও বার্নার্ড আর্নো।

ইলন মাস্কের সংগ্রহে রয়েছে জেমস বন্ডের ব্যবহৃত গাড়ি
বার্নার্ড আর্নোর পরপরই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে সম্পদশালী ব্যক্তি হলেন টেসলার ইলন মাস্ক। ফোর্বসের দেয়া হিসেবে বর্তমানে তার সম্পদের পরিমাণ ২০৪ বিলিয়ন ডলার। বিশ্বের সবচেয়ে ধনী গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার হিসেবে ইলন মাস্কের গাড়ির প্রতি বাড়তি আগ্রহ থাকবে সেটাই স্বাভাবিক।

বিভিন্ন ব্রান্ডের পুরোনো ও দুর্লভ মডেলের বেশ কিছু গাড়ির মালিকও তিনি। যার মধ্যে রয়েছে ১৯৬৭ সালের জাগুয়ার ই টাইপের একটি গাড়ি। এছাড়া এক মিলিয়ন ডলার দামের একটি ম্যাকলারেন স্পোর্টস কারও কিনেছিলেন তিনি। যা চালাতে গিয়ে পড়েছিলেন দুর্ঘটনায়।

এছাড়া তার গ্যারেজে রয়েছে অডি কিউ সেভেন, পোর্শে নাইন ইলেভেন এবং বিএমডব্লিউ এম ফাইভ স্পোর্টস কারের মতো বিলাসবহুল গাড়ি। তবে তার গাড়ির এই সংগ্রহের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো সাবমেরিন কার নামে অভিহিত জেমস বন্ডের সিনেমা ‘দি স্পাই হু লাভ মি’তে জেমস বন্ডের ব্যবহৃত লোটাস এস্পিরিট গাড়িটি। এটি তিনি নিলাম থেকে প্রায় ১ মিলিয়ন ডলারে কিনেছিলেন।

বিশ্বজুড়ে এই কোটিপতিকে ঘুরে বেড়াতে হয় হরহামেশাই। এজন্য তিনি ব্যবহার করেন প্রাইভেট জেট। তার মালিকানায় রয়েছে দুটি গাল্ফ স্ট্রিম কোম্পানির প্রাইভেট জেট।

জেফ বেজোসের রয়েছে পোষা রোবট কুকুর
১৯৬ বিলিয়ন ডলারের মালিক অ্যামাজনের জেফ বেজোস বিশ্বের তৃতীয় শীর্ষ ধনী। অন্যান্য কোটিপতিদের মতো তার আগ্রহ ইয়ট কিংবা বিলাসবহুল গাড়ির প্রতি নয়, তার আগ্রহ মূলত ভূসম্পত্তির দিকে। জেফ বেজোসকে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ ভূসম্পত্তির মালিকদের একজন হিসেবে অভিহিত করা হয়।

যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা জেফ বেজোসের সম্পদের মধ্যে আয়তনে সবচেয়ে বড় হলো টেক্সাস অবস্থিত ৬৬ হাজার ৭৭৩ হেক্টরের একটি কৃষিখামার।

এর পাশাপাশি তিনি যে জেট বিমানে চড়েন সেটি বিশ্বের দ্রুতগামী প্রাইভেট জেট হিসেবে পরিচিত। গালফস্ট্রিম জি-৬৫০ ইআর মডেলের এই প্রাইভেট জেটটির দাম ৬৫ মিলিয়ন ডলার। যার সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ১ হাজার ১১০ কিলোমিটার। আর একটানা পাড়ি দিতে পারে ১৩ হাজার ৮৯০ কিলোমিটার পথ। এছাড়া তার সংগ্রহে থাকা অদ্ভুত বস্তুর মধ্যে রয়েছে একটি পোষা কুকুর। তবে এটি জলজ্যান্ত রক্ত মাংসের নয়, ’স্পট’ নামের এই চারপেয়ে মূলত একটি রোবট।

হাওয়াই দ্বীপে সাতশ একরের খামার রয়েছে মার্ক জাকারবার্গের
১৭০ বিলিয়ন ডলারের মালিক ফেসবুকের সহপ্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ বর্তমানে ফোর্বসের তালিকা অনুযায়ী বিশ্বের শীর্ষ ধনীর তালিকায় চার নম্বরে অবস্থান করছেন।

বিলাসবহুল ভিলা, প্রাইভেট জেট, দুর্লভ সুপার কার সহ কোটিপতিদের যা যা থাকা উচিত তার সবই রয়েছে জাকারবার্গের। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রশান্ত মহাসাগরের হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জে অবস্থিত ৭০৭ একরের একটি ভূসম্পত্তি। কেনার সময় যার দাম ছিল ১১৬ মিলিয়ন ডলার। এছাড়া একই দ্বীপে তার রয়েছে ৬শ একরের অপর একটি ‍ভূসম্পত্তি।

জাকারবার্গের সংগ্রহে রয়েছে একটি বিলাসবহুল পাগানি হুয়ারা সুপারকার। ইতালির তৈরি এই গাড়িটির দাম প্রায় ১৪ লাখ ডলার।

প্রাইভেট জেট নয় ওরাকলের ল্যারি এলিসন চালান ফাইটার জেট
বিশ্বের পঞ্চম শীর্ষ ধনী ওরাকলের মালিক ল্যারি এলিসনের রয়েছে বিপুল ভূসম্পত্তি, যার মধ্যে রয়েছে অনেকগুলো বিলাসবহুল ভিলা এবং ম্যানশন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ক্যালিফোর্নিয়ার উডসাইডে অবস্থিত একটি প্রাচীন জাপানি ঘরানায় নির্মিত ভিলা।

যার দাম প্রায় ৭০ মিলিয়ন ডলার। অন্যান্য কোটিপতিদের সংগ্রহে যেখানে থাকে প্রাইভেট জেট, সেখানে ওরাকল চেয়ারম্যান ল্যারি এলিসনের সংগ্রহে রয়েছে দুটি পুরোদস্তুর জঙ্গিবিমান, যার একটি সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের তৈরি মিগ-২৯ জঙ্গিবিমান। এছাড়া ইয়ট রেসিং এবং টেনিস খেলারও শখ রয়েছে এই কোটিপতির।

কঞ্জুস ওয়ারেন বাফেটের সকালের নাস্তায় ব্যয় মাত্র ৪ ডলার
তবে কোটিপতিদের মধ্যে ব্যতিক্রম হলেন মার্কিন ধনকুবের ও শেয়ার ব্যবসায়ী ওয়ারেন বাফেট। সাদামাটা লাইফস্টাইলের জন্য তাকে ’কঞ্জুস’ হিসেবেও অভিহিত করা হয়। ৯২ বছর বয়সী বিশ্বের এই ষষ্ঠ শীর্ষ ধনী ৬৫ বছর ধরে একই সাদামাটা পুরোনো একটি বাড়িতে বসবাস করেন।

যুক্তরাষ্ট্রের নেব্রাস্কায় অবস্থিত ৫ বেডরুমের এই বাড়িটি তিনি ১৯৫৮ সালে কিনেছিলেন ৩১ হাজার ৫০০ ডলার দিয়ে, বর্তমানে যার মূল্য তিন লাখ ২৯ হাজার ডলার।

ফোর্বসের হিসাবে ১৩৭ বিলিয়ন ডলারের মালিক ওয়ারেন বাফেট ২০২০ সাল পর‌্যন্ত ব্যবহার করতেন মাত্র ২০ ডলার মূল্যের একটি মোবাইল ফোন। এছাড়া খাওয়া-দাওয়ার ক্ষেত্রেও অত্যন্ত মিতব্যয়ী এই কোটিপতি। সকালের নাস্তায় ৪ ডলারের বেশি খরচ করেন না তিনি।

মূলত তার বাড়ির পাশাপাশি একটি ম্যাকডোনাল্ডসের দোকান থেকেই খাবারের অর্ডার করেন তিনি। বলা হয়, যখন তার মালিকানাধীন শেয়ারের দাম পড়ে যায়, তখন নাকি সকালের নাস্তায় এই চার ডলারও খরচ করতে চান না তিনি।

দানধ্যানে এগিয়ে বিল গেটস, বিলিয়ে দেবেন সব সম্পদ
বিশ্বের এক সময়ের শীর্ষ ধনী মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস বর্তমানে ফোর্বসের দেয়া তালিকা অনুযায়ী বিশ্বের শীর্ষ কোটিপতিদের মধ্যে অবস্থান করছেন সাত নম্বরে।

যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন এস্টেটে তার রয়েছে ১২৫ মিলিয়ন ডলারের মূল্যের ভূসম্পত্তি, এছাড়া ব্যক্তিগত জেটবিমান সহ বিলাসবহুল ও দামি গাড়িরও বিশাল সংগ্রহ রয়েছে তার। এর মধ্যে রয়েছে ৪০ মিলিয়ন ডলার মূল্যের একটি বোম্বার্ডিয়ার বিডি ৭০০ গ্লোবাল এক্সপ্রেস প্রাইভেট জেট। যেখানে ভ্রমণ করতে পারেন ১৯ জন।

অবশ্য অন্যান্য কোটিপতিদের থেকে দান ধ্যানের দিক থেকে কিছুটা ব্যতিক্রম বিল গেটস। নিজের প্রতিষ্ঠিত বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি ডলার দান করেছেন বিল গেটস। পাশাপাশি নিজের উপার্জিত প্রায় সম্পদই দান করে দেয়ারও অঙ্গীকার করেছেন তিনি।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে