এক্সক্লুসিভ ডেস্ক:অদম্য ইচ্ছার কাছে কোন বাধাই টিকতে পারে না। দু:খ বেদনা, বাধা বিপত্তি পেরিয়ে আজ ৫২ বছরে এসে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন ।
মাধ্যমিকের নির্বাচনী পরীক্ষার সময় মারা যান মা। এক বছর পর মারা গেলেন বাবাও। সংসারের পুরো দায়িত্ব কাঁধে এসে পড়ায় লেখাপড়াটা আর তিনি চালিয়ে যেতে পারেননি।
কিন্তু তাই বলে দমে যাননি। পড়ালেখা করার অদম্য ইচ্ছার জোরে ৫২ বছর বয়সে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। তিনি শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার যোগানিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আনসার আলী।
বাবা ছেলে দুজনেই উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ২০১৪ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নিয়ে মানবিক বিভাগ থেকে কৃতকার্য হয়েছেন। আনসার আলীর বাড়ি উপজেলার যোগানিয়া ইউনিয়নের উজান গাংপাড় গ্রামে। বর্তমানে তিনি নালিতাবাড়ী ইউনিয়ন চেয়ারম্যান অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি। এ নিয়ে এলাকায় তোলপাড় চলছে ।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, আনসার আলী ১৯৭৭ সালে শেরপুরের নকলা উপজেলার ধনাকুশা উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন। কিন্তু মায়ের আকস্মিক মৃত্যুতে পরীক্ষায় অংশ নেওয়া সম্ভব হয়নি। এক বছর পর আবার পরীক্ষা দেওয়ার সময় তাঁর বাবাও মারা যান। বড় ছেলে হিসেবে চার ভাই ও তিন বোনের সংসারের দায়িত্ব এসে পড়ে আনসার আলীর কাঁধে।
২০১২ সালে আনসার আলী তাঁর বাল্যবন্ধু সন্ন্যাসীভিটা উচ্চবিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক শরাফত আলীর কাছে তাঁর ইচ্ছার কথা জানান। শরাফত আলী তাঁকে এবং ছেলে সোহেলকে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে তাঁর স্কুলে ভর্তি করান। বাবা-ছেলে দুজনই একসঙ্গে প্রতি শুক্রবার সেখানে নিয়মিত ক্লাস করতেন। বাড়িতেও চলত পড়াশোনা। ৯ মার্চ পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হলে বাবা-ছেলে কৃতকার্য হওয়ায় এলাকার সবাই মিষ্টিমুখ করতে তাঁদের বাড়িতে ছুটে আসেন।
আনসার আলী বলেন, ‘যখন বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে ছেলেমেয়েদের স্কুলে যাওয়ার তাগিদ দিতাম, তখন নিজের কথা ভেবে কষ্ট পেতাম। মনে মনে ভাবতাম, যেভাবেই হোক লেখাপড়া করতে হবে। আগামীতেও লেখাপড়া চালিয়ে যেতে চাই।’
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম মুখলেছুর রহমান তো মহা খুশি আনসার ভাই পাস করেছেনস । তিনি বলেন, ‘শিক্ষার কোনো বয়স নেই। আনসার ভাই তা প্রমাণ করেছেন।’
২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/জহির/মো:জই/