ফুলের গন্ধে বাঁচে হাজারো কৃষক
এক্সক্লুসিভ ডেস্ক: লাল-হলুদের গাঁদা। সবুজ ডাঁটায় ধবধবে সাদা রজনীগন্ধা অথবা বিচিত্র বর্ণের সুগন্ধি গোলাপ। বনজ সৌন্দর্যের এ প্রতীক এখন আয়েরও উত্স। বাড়ির আঙিনা পেরিয়ে জায়গা করে নিয়েছে ফসলি জমিতে।
তিন দশক ধরেই গাঁদা, রজনীগন্ধা, গোলাপের পাশাপাশি জারবেরা ও গ্লাডিওলাসের আবাদ করছেন ঝিকরগাছার পাঁচ হাজারের বেশি কৃষক। যশোরের এ উপজেলা ঘিরেই এবার নতুন পরিকল্পনা করছে সরকার। ফুল চাষে কৃষকদের আরো উত্সাহ জোগাতে সহজ শর্তে ও কম সুদে ঋণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এতে ফুল উৎপাদন যেমন বাড়বে, একই সঙ্গে রফতানির সুযোগও তৈরি হবে।
ঝিকরগাছায় ফুল চাষের শুরুটা হয়েছিল ১৯৮৩ সালে। দুই বিঘা জমিতে গোলাপ দিয়ে উপজেলার পানিসাড়ায় বাণিজ্যিক চাষ শুরু করেছিলেন শের আলী। ধীরে ধীরে তা উপজেলার অন্যান্য অঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়ে। নব্বইয়ের দশকেই উপজেলার গদখালী ইউনিয়নজুড়ে ফুলের চাষ শুরু হয়। এলাকার ১৫ হাজার হেক্টরজুড়ে এখন ফুলক্ষেত। এর সঙ্গে সম্পৃক্ত পাঁচ হাজার কৃষক। একে আরো ছড়িয়ে দিতে সর্বোচ্চ ১১ শতাংশ সুদে ফুলচাষীদের ঋণদানের নির্দেশ দেয়া হয়েছে ব্যাংকগুলোকে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সম্প্রতি এ-সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপনও জারি করেছে।
ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রমতে, ২০১৪-১৫ সালের কৃষিঋণ নীতিমালা অনুযায়ী ফুল চাষে ঋণ প্রদানে সব তফসিলি ব্যাংককে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। নীতিমালা অনুযায়ী, জারবেরা ফুলের জন্য কৃষকরা একরপ্রতি ঋণ পাবেন ১৮ লাখ ৩৮ হাজার টাকা। গোলাপ চাষে একরপ্রতি ঋণ দেয়া হবে ৫ লাখ ৪০ হাজার, গ্লাডিওলাসে ৩ লাখ ৪৫ হাজার, রজনীগন্ধায় ৯৮ হাজার ও গাঁদা ফুলের জন্য ১ লাখ ২৪ হাজার টাকা। সর্বোচ্চ পাঁচ একর ফুল চাষের জন্য এ ঋণ পাবেন একজন কৃষক।
জানতে চাইলে রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম ফরিদ উদ্দিন বণিক বার্তাকে বলেন, সরকারের নির্দেশ মেনে ব্যাংকগুলো ঋণ দিতে বাধ্য। নির্দেশ অমান্য করার কোনো সুযোগ নেই। তবে যেসব কৃষক ঋণে জর্জরিত, তাদের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো একটু খোঁজখবর নেবে, এটাই স্বাভাবিক।
চাষের পাশাপাশি ফুলের প্রধান মোকামও গড়ে উঠেছে গদখালীতেই। গদখালী ফুল ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুর রহিম বলেন, এ অঞ্চলে উৎপাদিত ফুল গদখালীতেই বেচাকেনা হয়। সারা দেশে ফুলের চাহিদার ৭০ শতাংশই এখান থেকে পূরণ করা হয়। এসব ফুলের বেশির ভাগ যায় ঢাকা ও চট্টগ্রামে। বাকিটা উত্তরাঞ্চলের জেলা রংপুর, দিনাজপুর, বগুড়া, গোপালগঞ্জ ও বরিশাল এলাকায়।
ঝিকরগাছায় ফুলের চাষ বাড়লেও সংরক্ষণের ব্যবস্থা এখনো গড়ে ওঠেনি। পরিবহন ব্যবস্থা বিঘ্নিত হলে তাই বড় ধরনের লোকসানে পড়তে হয় এ অঞ্চলের ফুলচাষীদের। চলমান অবরোধেও বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে যশোরের ফুলচাষীদের।
তবে ফুল সংরক্ষণে হিমাগার স্থাপনের জন্যও ঋণ প্রদানের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। মফস্বলভিত্তিক শিল্প স্থাপনে পুনঃঅর্থায়ন স্কিমের আওতায় কোল্ড স্টোরেজ স্থাপনে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ সুদে ঋণ দেয়া হবে। সংরক্ষণের ব্যবস্থা থাকলে ফুল নিয়ে আর বিপাকে পড়তে হবে না বলেই মনে করছেন চাষীরা।
উপজেলার হাঁড়িখালী গ্রামের ফুলচাষী জয়নাল আবেদিন। গোলাপের আবাদ করেছেন ৬০ শতক জমিতে। ইংরেজি নববর্ষের সময়ও অবরোধ চলায় বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়তে হয় এ ফুলচাষীকে। হিমাগার থাকলে এ সমস্যায় আর পড়তে হবে না বলেই মনে করছেন জয়নাল আবেদিন।
তবে সরকারের নির্দেশমতো ব্যাংকগুলো ঋণ দেবে কিনা, তা নিয়েও এক ধরনের আশঙ্কা রয়েছে কৃষকদের মধ্যে। বিশেষ করে বেসরকারি ব্যাংকগুলো কৃষিঋণের আওতায় ঋণ দিতে খুব বেশি আগ্রহী নয় বলে জানান তারা। যদিও ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ বলেছে, সরকারি নির্দেশ দেশের সব ব্যাংককে মানতে হবে। জেলা প্রশাসন বিষয়টি তদারক করবে। যে ব্যাংক ফুলচাষীদের নির্দেশিত শর্তে ঋণ দেবে না, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
যশোরের জেলা প্রশাসক হুমায়ুন কবীর এ প্রসঙ্গে বলেন, ফুল চাষ লাভজনক হওয়ায় কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে। ফলে বাড়ছে আবাদি জমির পরিমাণও। কৃষক সহজ শর্তে ও কম সুদে ঋণ পেলে তাদের উত্সাহ আরো বেড়ে যাবে।
তিনি বলেন, যশোরের ফুল পরিবহন সহজ করতেও নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ট্রেনে ফুল পরিবহনের জন্য আলাদা স্থান সংকুলান করা হয়েছে।
সূত্র: বণিকবার্তা
২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/ডিএআর