বৃহস্পতিবার, ১১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬, ০৫:১৪:০৬

রোমান্টিক প্রেম, ৭২ বছর পর আবার একসঙ্গে সেই জুটি

রোমান্টিক প্রেম, ৭২ বছর পর আবার একসঙ্গে সেই জুটি

এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : এক, দুই নয় একে একে কেটেগেলো প্রায় সাত দশক। তার পরই দেখা হলো প্রেমিক জুটির! শেষ তাদের দেখা হয়েছিন ১৯৪৪ সালের জুন মাসে। এর পর কেটে গিয়েছে প্রায় ৭২ বছর। বুধবার দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেডে ফের মুখোমুখি হলেন এই জুটি। আবেগটা যেনো আর সামলাতে পারছিলেনা বৃদ্ধ নরউড টমাস (৯৩) আর জয়েস মরিস (৮৮)। ভ্যালেন্টাইনস্ ডে-টা একসঙ্গেই কাটানোর কথা ভেবেছেন তারা।

তাদের যখন প্রথম দেখা হয়েছিল, তখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ একেবারে শেষের দিকে। একুম বছরের টমাস মার্কিন সেনাবাহিনীর প্যারাট্রুপার হিসেবে কাজ করতেন। আর মরিস সদ্য সতেরো বছরে পা রেখেছেন মাত্র। মিত্র শক্তি (ব্রিটেন, ফ্রান্স, সাবেক সোভিয়েত রাশিয়া, চীন)-এর হয়ে লন্ডনের শিবিরে ছিলেন টমাস। দু’জনের প্রথম আলাপ সেখান থেকেই। আস্তে আস্তে এই আলাপ বন্ধুত্বে রূপনেয়। আর এই বদ্ধুত্ব থেকে পরিণতি পায় প্রেমে।

কিছু দিনের মধ্যেই উত্তর-পশ্চিম ইউরোপকে নাৎসি-মুক্ত করতে সমুদ্রপথে হামলা চালায় মিত্র শক্তি (৬ জুন, ‘দ্য ডে’)। আর এই হামলায় হেরে যায় হিটলার। যুদ্ধ শেষে আমেরিকায় ফিরতে হয় টমাসকে। দেশে ফিরেও প্রেমিকার সঙ্গে যোগাযোগ ছিল টমাসের। চিঠি আদানপ্রদান চলত। মরিসকে আমেরিকায় আসতে অনুরোধ করেন। বিয়ের প্রস্তাবও দেন তিনি।

দূরত্ব বাদ সাধে তাদের প্রেমে। একটা সময়ে মরিস ভাবতে শুরু করেন টমাস বোধহয় নতুন সঙ্গিনী পেয়ে গিয়েছেন। সন্দেহ থেকেই ভাঙন শুরু। সময়ের সঙ্গে দু’জনেই নতুন করে জীবন শুরু করেন। বিয়েও হয়ে যায় দুজনের। শুরুহয় আলাদা জীবন। কিন্তু মরিসের বিয়ে বেশি দিন টেকেনি আর টমাসের স্ত্রী মারা গিয়েছেন ২০০১-এ।

সাত দশক পেরিয়ে বছর খানেক আগে টমাস-মরিসের আবার যোগাযোগ হয়। ফেসবুকে টমাসকে খোঁজার চেষ্টা করেছিলেন মরিস। নিজে খুঁজে না পেয়ে কাজে লাগিয়েছিলেন ছেলেকে। অনেক খোঁজাখুজির করে ভার্জিনিয়ার একটি সংবাদপত্রে ‘দ্য ডে’ নিয়ে একটি নিবন্ধে খুঁজে পান তিনি। সেই প্রচ্ছদেই নরউড টমাসের নাম ছিল। তার সূত্র ধরেই টমাসের ফোন নম্বর, ঠিকানা জোগাড় করার চেষ্টা চলে।

প্রথমে ফেসবুক। তার পর স্কাইপ। যোগাযোগ বাড়তে থাকে টমাস-মরিসের। দেখা করার পরিকল্পনাও করেন। তবে আর্থিক সঙ্গতির অভাবে তা হয়ে উঠছিল না। দেখা করার জন্য সেই ফেসবুকেই ভরসা রাখেন দু’জন। তাদের গল্প ছড়িয়ে পড়ে ফেসবুকের পোস্টে পোস্টে। টমাস-মরিসের প্রেম কাহিনি নজর কাড়ে সকলের। নিজের ইচ্ছেতেই যে যেমন পারেন অর্থ দিতে থাকেন। এভাবেই অনেকেই এগিয়ে আসেন তাদের সাহায্যের জন্য।

তার পরই বুধবার সূদুর ভার্জিনিয়া থেকে অ্যাডিলেডে উড়ে এসেছেন টমাস। দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার এই শহরটায় আপাতত সপ্তাহ দু’য়েক থাকার পরিকল্পনা। বান্ধবীকে ফিরে পেয়ে টমাসের প্রতিক্রিয়া, ‘জীবনের সব চেয়ে ভাল মুহূর্তটা কাটাচ্ছি।’ আর লজ্জায় তো কোনো কথাই বলতে চাইছিলেন না মরিস। টমাসের হাত জড়িয়ে, মুচকি হেসে শুধু বলেছেন, ‘ভাবিনি ওঁকে ফিরে পাব।’

ভিসা শেষে টমাসকে তো ফিরতে হবে, তখন? সে সব কথা এখন মাথাতেই আনছেন না এই রোমান্টিক জুটি। চোদ্দোটা দিন সব টুকু দিয়ে শুধু উপভোগ করতে চান।
১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/জহির/মো:জই

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে