মঙ্গলবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৬:৪৬:৫৩

এক চাকার সাইকেলে অসাধ্য সাধন

এক চাকার সাইকেলে অসাধ্য সাধন

এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : সার্কাসে অনেকেই একচাকার সাইকেলের কেরামতি দেখিয়ে থাকেন।  কিন্তু এমন ইউনিসাইকেলে করে পর্বতের শিখর থেকে উপত্যকায় নেমে আসার দুঃসাহস ক’জন বা করতে পারে।  জার্মানির এক এক্সট্রিম অ্যাথলিট এমনটি করে আরো একটি বিশ্বরেকর্ড ভেঙেছেন৷

লুৎস আইশহলৎসের আগে কেউ এমন দঃসাহস দেখায়নি৷ ইউনিসাইকেলে চড়ে পাহাড়ের চূড়া থেকে উপত্যকায় নামা৷ এর জন্য তিনি ইরানের ডামাভান্ড পাহাড়কে বেছে নিয়েছিলেন৷

আইশহলৎস বলেন, যা অসম্ভব মনে হতো তা আচমকা সম্ভব হলে আমার খুব ভালো লাগে৷ এটা অনেকটা গোঁয়ারতুমির মতো৷ মাঝে মাঝে আমার মনে হয়, কেন এটা করছি? কেন ১২ ঘণ্টা ধরে সাইকেল ঘাড়ে করে শিখরে উঠছি? এত ওপর থেকে সাইকেলে করে নেমে আসা হয়ত আমার পক্ষে প্রায় অসম্ভব হবে? কিন্তু প্রতিবার এ অভিজ্ঞতা এতই মধুর লাগে যে, বাসায় ফেরার অনেকদিন পরও তার রেশ থেকে যায়।

বছর দশেক আগে লুৎস আইশহলৎস প্রথমবার এক চাকার সাইকেল চড়েছিলেন৷ চারবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হিসেবে তিনি এটাকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন৷ তার একাধিক স্পনসর আছে৷ এছাড়া টেলিভিশন ও নানা অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েও তিনি অর্থ উপার্জন করেন৷

আইশহলৎস বলেন, আমার বোনকে দেখে শুরু করেছিলাম৷ খেলাধুলার তাগিদ থেকেই সেটা এসেছিল৷ প্রথমবার কোনো বড় প্রতিযোগিতায় যখন কানাডার বিখ্যাত ইউনিসাইকেল চালক ক্রিস হোমকে পাহাড় বেয়ে নামতে দেখি, তখন আমার মধ্যে প্রবল ইচ্ছা জাগলো৷ তখনই বুঝতে পেরেছিলাম, আমিও এমনটা করতে চাই, পাহড়ে যেতে চাই, শুধু স্পোর্টস কমপ্লেক্সে ঘুরে বেড়াতে চাই না৷ তখন বড় মাত্রায় প্রেরণা পেয়েছিলাম৷

লুৎস আইশহলৎস ইউনিসাইকেল নিয়ে এর মধ্যেই ৬টি বিশ্বরেকর্ড ভেঙেছেন৷ যেমন ইউনিসাইকেল নিয়ে সবচেয়ে বড় হাইজাম্প করেছেন তিনি প্রায় ৬ মিটার উচ্চতায়৷ লুৎস বলেন, একটি রেকর্ড ভাঙার ঠিক পরই যখন মনে হয়, আমি ১৫ মিটারের বেশি স্ল্যাকলাইনের ওপর দিয়ে যেতে পারব না, তখনই আবার সেই রেকর্ড ভাঙার তাগিদ খুবই প্রেরণা যোগায়৷ অন্য কাউকে বড় কিছু করতে দেখলে মন হয়, আমি তাকেও টেক্কা দেব৷ এতে সত্যি কাজ হয়৷ অনেক বছর ধরে ইউনিসাইকেল চালাচ্ছি৷ নিয়মিত অনুশীলনের জন্য মোটিভেশন কমতে দিই না৷

লুৎস আইশহলৎস তার বান্ধবী জুলিয়া টেসারির সঙ্গে অনুশীলন করেন৷ ইতালির মানুষ জুলিয়া নিজে অনেকটা সময় পাহাড়ে কাটান৷ লুৎসকে নিয়ে তার দুশ্চিন্তা নেই৷ কিন্তু ইরানে তার সর্বশেষ প্রকল্প ও সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের সময় ব্যাপারটা অন্যরকম ছিল৷ জুলিয়া বলেন, এমনটা হবে, ইরান প্রকল্পের আগে তা ভাবতে পারিনি৷ আমি তাকে সমর্থন দিয়েছি, উৎসাহ দিয়েছি৷

প্রায় তিন বছর ধরে লুৎস ডামাভান্ড পর্বত থেকে নামার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন৷ শিখরে ওঠা তুলনামুলকভাবে সহজ বটে কিন্তু সেখানে বাতাস খুবই কম৷ তাই অনেকেরই ‘অল্টিটিউড সিকনেস' বা উচ্চতা-জনিত রোগ হয়৷ স্থানীয় গাইড মহম্মদ হাজাবোলফাট বলেন, অনেকেই এই পাহাড়কে তেমন গুরুত্ব দেয় না৷ এই ট্রেকিং পিক-এর উচ্চতা যদিও ৫,৬০০ মিটার তা সত্ত্বেও এটিকে খাটো করে দেখা উচিত নয়৷ কথা বলে বুঝতে পারলাম, লুৎস-ই এই কাজের সঠিক পাত্র৷

চারদিন পর গোটা টিম শিখরে পৌঁছায়৷ তারপর নামার পর্ব শুরু৷ লুৎস আইশহলৎসের সামনে ছিল খাড়া ও পাথুরে জমিসহ নানা প্রতিকূলতা৷ যেমন তাপমাত্রার ঘনঘন ওঠানামা৷

আইশহলৎস বলেন, উপত্যকায় পৌঁছনো ছিল আমার সর্বকালের সেরা অভিজ্ঞতা৷ এর আগে আমরা অনেক উচ্চতায় ছিলাম বলে নিচে নেমে পর্যাপ্ত বাতাস পেয়ে অনেক ভালো বোধ করছিলাম৷ আগে অনেক গোলমাল হয়েছিল৷

বেশ কয়েকবার মনে হয়েছিল, যে পারব না৷ তারপর বুঝতে পারলাম সাফল্য এসে গেছে৷ কেউ আমার হাত থেকে সেটা ছিনিয়ে নিতে পারবে না।  লুৎস আইশহলৎস আরো নতুন চ্যালেঞ্জের খোঁজ শুরু করে দিয়েছেন।  তবে নিজের জীবন বিপন্ন করে নয়৷ সূত্র : ডয়চে ভেলে
২২ সেপ্টেম্বর,২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে