এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : ব্ল্যাক রাইস বা কালো চালকে একসময় নিষিদ্ধ চাল নামে অভিহিত করা হতো। ইতিহাস বলে প্রাচীনকালে চীনের রাজা–বাদশাহদের সুস্বাস্থ্যের জন্য গোপনে চাষ করা হতো এই ব্ল্যাক রাইস সুপার ফুড। যা প্রজাদের জন্য চাষ করা বা খাওয়া নিষিদ্ধ ছিল। এমনকি কেউ গোপনে এর চাষ করলে তাদের জেলও দেয়া হতো। এ কারণে এই ধানকে নিষিদ্ধ ধান বলা হতো।
পরবর্তীকালে জাপান, মিয়ানমার ও ইন্দোনেশিয়ায় এ ধান চাষ শুরু হয়। সেখান থেকে এই ধান এখন বাংলাদেশেও চাষ হচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে ইন্দোনেশিয়ান ব্ল্যাক রাইস পরীক্ষামূলক চাষ করেছেন উপজেলার সুন্দরপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ সুন্দরপুর গ্রামের সৌখিন কৃষক মো. এনায়েত করিম চৌধুরী পিন্টু। বিদেশি এই চাল সহজে পাওয়া যায় না। কোথাও পাওয়া গেলেও দুর্লভ এই চালের কেজিপ্রতি মূল্য প্রায় ৭–৮শ টাকা। উপজেলার মধ্যে প্রথম পিন্টু পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করে সফলতা পেয়েছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, পিন্টু ২০ শতক জমিতে পরীক্ষামূলক এ ধান চাষ করে সফল হয়েছেন। এখন থেকে তিনি নিয়মিতভাবে আরও বড় পরিসরে চাষের পরিকল্পনা করছেন। নিজেদের মাটিতে বিদেশি এই ধানের চাষে সাফল্য আগ্রহ বাড়িয়েছে অন্য কৃষকদের মাঝেও। ধানের বীজ ও চাষের বিষয়ে জানতে চাইলে দৈনিক আজাদীকে এনায়েত করিম চৌধুরী পিন্টু বলেন, এই ধান সম্পর্কে অনলাইনে প্রথম জানতে পারি। এরপর অনেক খোঁজাখুঁজির পর ময়মনসিংহ থেকে ধানের বীজ এনে চাষাবাদ শুরু করি। ১ কেজি ধানের বীজের দাম পড়েছিল ৫০০ টাকা। ফলন ভালো, সময় অল্পতেই অধিক ফলন পাওয়া যায়। ১২০ দিন বা ৪ মাস পূর্ণ হলেই ধান কাটা যায়। এই ধানে সার ও বিষ ব্যবহার অনেক কম। পোকামাকড়ের কোনো বালাই নেই। ফলন প্রতি বিঘায় ৩০ থেকে ৩৫ মণ হতে পারে। আর এই ধান থেকে যে চাল হয় তার বাজারমূল্যও বেশি। বর্তমানে এ ধানের চালের মূল্য কেজিপ্রতি প্রায় ৭০০–৮০০ টাকা। সব মিলিয়ে এই প্রজাতির ধান চাষ বেশ লাভজনক বলেই আমার কাছে মনে হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধানের (ব্ল্যাক রাইস) বৈশিষ্ট্য হলো– এর গাছ, পাতা দেখতে স্বাভাবিক ধান গাছের মতো হলেও ধানের শিষ এবং চাল সবকিছুই লালচে–কালো ও চিকন। এ চাল পুষ্টিগুণে ভরপুর। তাই এ চালের দামও বেশি। এ ধানের চালে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি অঙিডেন্ট থাকায় শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়। ত্বক পরিষ্কার করে ও শরীর থেকে দূষিত পদার্থ বের করে শরীরকে ফুরফুরে রাখে। এতে থাকা ফাইবার হার্টকে রাখে সুস্থ। কালো চাল ডায়াবেটিস, স্নায়ু রোগ ও বার্ধক্য প্রতিরোধক।
ব্ল্যাক রাইস প্রজাতির ধান চাষের ব্যাপারে ফটিকছড়ি উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান বলেন, ব্ল্যাক রাইস ধান বিদেশি জাত। মূলত এই ধান গাছের পাতা ও কাণ্ডের রং সবুজ হলেও ধান ও চালের রং কালো। তাই এ ধানের জাতটি কালো চালের ধান নামে পরিচিত। বীজ বপনের পর কোনোটির পাতা সবুজ আবার কোনোটির পাতা বেগুনি হলেও চালের রং কালোই হয়। কথা প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, ফটিকছড়িতে এই জাতের ধানের আগেও কয়েকবার চাষাবাদ হয়েছে। এ ধানে প্রচুর ঔষধি গুণ রয়েছে। তবে বাণিজ্যিকভাবে এ চাষে লাভবান হওয়া কষ্টসাধ্য।