এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : বিশ্বে যেসব এলাকায় অধিকসংখ্যক দীর্ঘায়ু মানুষের বাস, সেসব এলাকা চিহ্নিত করতে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে কাজ করেছেন মার্কিন লেখক ড্যান বুয়েটনার। পাশাপাশি জানার চেষ্টা করেছেন কীভাবে এসব এলাকার অধিবাসীরা শারীরিক জটিলতা (যেমন হৃদ্রোগ, স্থূলতা, ক্যানসার কিংবা ডায়াবেটিস) ছাড়াই দীর্ঘ জীবন পেলেন। এ কাজে তাঁকে সহযোগিতা করেছে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটি। ‘ব্লু জোন’ বলে পরিচিত এমন পাঁচ এলাকার কথা চলুন জানা যাক-
ইকারিয়া, গ্রিস
গ্রিসের একটি ছোট দ্বীপ ইকারিয়া। ২৫৪ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত দ্বীপটি তুরস্ক উপকূল থেকে আট মাইল দূরে আজিয়ান সাগরে অবস্থিত। বিস্ময়ে ভরা এই দ্বীপের মানুষের গড় আয়ু ১০০ বছর। এখানে মধ্যবয়সী মানুষের (৪৫-৬৪ বছর) মৃত্যুহার বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে কম। বয়স বাড়লে মানুষকে যে ভুলে যাওয়ার সমস্যায় (ডিমেনশিয়া) ভুগতে দেখা যায়, সেটাও এই দ্বীপবাসীর বয়স্কদের মধ্যে নেই বললেই চলে। ইকারিয়াবাসীদের দীর্ঘ জীবনের মূলমন্ত্র তাদের ঐতিহ্যবাহী মেডিটারিয়ান ডায়েট। এই বিশেষ ধরনের ডায়েট মেনে চললে টাইপ-২ ডায়াবেটিস, হৃদ্রোগ, স্ট্রোক ও স্থূলতার ঝুঁকি অনেকাংশে কমে। এতে শাকসবজি, ফলমূল, বাদাম, মটরশুঁটি, মাছ ও অলিভ অয়েলের মতো অসম্পৃক্ত চর্বির পরিমাণ বেশি। সেই সঙ্গে পরিমিত মাংস এবং দুগ্ধজাতীয় খাবার খাওয়ার পরামর্শও থাকে এই ডায়েটে।
ওকিনাওয়া, জাপান
জাপানের দক্ষিণ-পশ্চিমের দ্বীপাঞ্চচলটির নাম ওকিনাওয়া। ছোট ছোট দ্বীপের সমন্বয়ে গঠিত এই এলাকায় বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘজীবী নারীদের বাস। তবে পুরুষদের গড় আয়ুও কম নয়। ওকিনাওয়া দ্বীপের বাসিন্দাদের দীর্ঘ জীবনের রহস্য জানতে গবেষকেরা কয়েক দশক ধরেই অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছেন। এই অনুসন্ধান চলছে তাঁদের জিনের গঠন এবং দৈনন্দিন জীবনযাপনকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে। ওকিনাওয়ার অধিবাসীরা নিজেদের উৎপাদিত মিষ্টি আলু, সয়া বীজ, মুগওয়ার্ট, হলুদ এবং গয়া (করলা) নিয়মিত খাবারের তালিকায় রাখেন।
অলিয়াস্ত্রা অঞ্চল, সার্দিনিয়া, ইতালি
ইতালির সার্দিনিয়া দ্বীপের পার্বত্য অঞ্চলটির নাম অলিয়াস্ত্রা। এখানে প্রচুর শতায়ু পুরুষের বাস। এ অঞ্চলের লোকেরা সচরাচর কম আমিষযুক্ত খাবার খেতে অভ্যস্ত। খাদ্যাভ্যাসের কারণে তাঁদের ডায়াবেটিস ও ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কম থাকে। যার কারণে ৬৫ বছরের কম বয়সীদের মৃত্যুহার নিম্নমুখী।
লোমা লিন্ডা, ক্যালিফোর্নিয়া, যুক্তরাষ্ট্র
যুক্তরাষ্ট্রের লোমা লিন্ডা শহরের মানুষেরা দেশটির অন্য এলাকার মানুষের চেয়ে গড়ে ১০ বছর বেশি বাঁচেন। তাঁদের সুস্বাস্থ্যের রহস্যের অন্যতম হলো স্বাস্থ্যকর খাবার, ব্যায়াম আর ধর্মবিশ্বাস। লোমা লিন্ডা শহরে ‘সেভেনথ ডে অ্যাডভেন্টিস্টদের’ (প্রোটেস্ট্যান্ট খ্রিষ্টানদের বিশেষ সম্প্রদায়) সর্বোচ্চ সংখ্যায় পাওয়া যায়। তাঁরা বিভিন্ন শস্য, ফল, বাদাম ও শাকসবজি বেশি খেয়ে থাকেন।
নিকোয়া উপদ্বীপ, কোস্টারিকা
এই অঞ্চলের বাসিন্দাদের মধ্যবয়সে মৃত্যুহার বিশ্বে সর্বনিম্ন। আর পুরুষ শতবর্ষীদের ঘনত্বের দিক দিয়ে বিশ্বে দ্বিতীয়। কীভাবে দীর্ঘ জীবন পান তাঁরা? গবেষকেরা বলছেন, নিকোয়া উপদ্বীপের মানুষেরা নিজেদের ফসল নিজেরা ফলান, সেখানকার পানি উচ্চ ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ, নিজেদের মধ্যকার গভীর সামাজিক বন্ধন এবং প্রাত্যহিক লো ইনটেনসিটির ব্যায়াম (সাঁতার, হাঁটা, সাইক্লিং, যোগব্যায়াম ইত্যাদি) তাঁদের অন্যদের চেয়ে আলাদা করে। সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক