প্রবল হাওয়া থামিয়ে দিল মাল্লির দৌড়
এক্সক্লুসিভ ডেস্ক: মাল্লি মস্তান বাবু খুবই অভিজ্ঞ পর্বতারোহী৷ তাঁর পড়াশোনা, তাঁর পাহাড়ে চড়ার রেকর্ড দেখে আমরা ঈর্ষা করতাম৷ আসলে পাহাড়ে ওঠার এই জীবনটা চরম কষ্টের৷ সাধারণত এমন ট্যালেন্টেড মানুষজন এসবের মধ্যে আসেন না৷ তাঁরা সুখেই জীবন কাটান৷ মাল্লি মস্তান বাবু সেখানে বিরল একটি চরিত্র৷
তাঁর চলে যাওয়াটা অবশ্যই দুঃখের৷ কিন্তু পাহাড়ে দুর্যোগ নামতেই পারে, দুর্ঘটনাও ঘটতে পারে৷ ওই উচ্চতায় প্রচণ্ড হাওয়া বইলে কারও কিছু করার নেই৷ আমি নিজেই বার তিনেক খারাপ আবহাওয়ার মধ্যে পড়েছি৷
জানি না ঠিক কী ঘটেছিল৷ এমনিতে প্রবল তুষারপাত হলেও প্রাণহানির ভয় থাকে না৷ তাঁবুর ভিতরে থাকলে, মাঝেমধ্যে বেরিয়ে তাঁবু ঝাড়তে হয়৷ চারপাশ থেকে বরফ সরিয়ে দিতে হয়৷ এক্ষেত্রে সম্ভবত খুব জোরে হাওয়া বইছিল৷ তাতেই তাঁবু ভেঙে যায়৷ প্রচণ্ড ঠান্ডার সঙ্গে যুঝতে না পেরে মারা গিয়েছেন৷ ১৯৯৭ সালে কামেট অভিযানে বেরিয়ে প্রায় একই রকম অভিজ্ঞতার মুখে পড়তে হয়েছিল আমাদের৷ বরফ পড়ছে, সঙ্গে হাওয়া৷ আমাদের তাঁবু বরফে চাপা পড়ে যায় যায়! একদিনের মধ্যেই আবহাওয়া ভালো হয়ে গিয়েছিল৷ টানা দুর্যোগ চললে আমরাও মারা যেতাম৷ এত বরফ পড়েছিল, নামার সময় দেড় ঘণ্টার রাস্তা আমাদের প্রায় দশ ঘণ্টা লেগেছিল৷ ২০১০ সালে কালিন্দী পাসে ট্রেক করতে যাওয়া হাওড়ার তিন যুবকের কথা মনে পড়ে? ওঁদের ভাগ্য আমাদের মতো ছিল না৷ আমরা তল্লাশি করতে গিয়ে দেখেছিলাম, ওই তিন জন-সহ আট জন তাঁবুর মধ্যেই বরফচাপা পড়ে মারা গিয়েছেন৷ তাঁবুর মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়েছিল ওঁরা৷
২০১৩ সালে ধওলাগিরি শৃঙ্গ জয় করতে গিয়েও বিপদের মধ্যে পড়েছিলাম৷ আমি বেঁচে ফিরেছি, এটা অলৌকিক ছাড়া আর কিছু নয়৷ বরফ পড়ছিল, সঙ্গে জোরে হাওয়া৷ চোখের সামনে দু'জন পর্বতারোহীকে পড়ে যেতে দেখেছিলাম৷ সময় নষ্ট হয়ে যাওয়ায় আমাদের অক্সিজেন কমে আসছিল৷ আর তার মধ্যেই আমি পড়ে গেলাম৷ দেবাশিসরা (বিশ্বাস) নীচের ক্যাম্পে নেমে গেল৷ আমি ২৫ হাজার ফুটের উঁচুতে পড়ে রয়েছি, প্রতি মুহূর্তে ভাবছি মরে যাব৷ পর দিন শেরপা অক্সিজেন নিয়ে আসে৷ নীচে নামিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়৷ তল্লাশি জলদি হয়েছিল বলে সে বার বেঁচে যাই৷ পরে স্নো বাইট হয়ে পায়ে তিনটে আঙুল বাদ যায়৷
আমি কিন্ত্ত সেই দুর্ঘটনার পরও গত বার কার্গিলের মাউন্ট নুন অভিযানে গেছি৷ সেখানে গিয়েও দেখি বিপদ তাড়া করেছে৷ সেপ্টেম্বরের ১ তারিখে প্রবল তুষারপাত আর হাওয়ার মুখে পড়লাম৷ টানা ৬ তারিখ পর্যন্ত সেই তুষারঝড় চলল৷ নীচে তখন প্রবল বৃষ্টিতে জম্মু-কাশ্মীর বন্যায় ভাসছে৷ আমাদের সঙ্গে খাবার ছিল বলে বেঁচে গেছিলাম৷ না হলে মারা পড়তাম৷ পরে যখন আবহাওয়ার উন্নতি হল, দেখলাম তুষারধস দড়ি-টড়ি সব ছিঁড়ে নিয়ে গিয়েছে৷ বাধ্য হয়ে আমরা নেমে আসি৷ নামার সময়ও কী অবস্থা! কোমরসমান বরফ ঠেলে ঠেলে নেমেছিলাম৷
আমি বা আমরা কিন্তু হার মানিনি৷ আবার সবাই শৃঙ্গজয়ে বেরোচ্ছে৷ ছন্দা (গায়েন) নিখোঁজ হওয়ার পরও ১২ জন এভারেস্ট জয় করতে যাচ্ছে৷ আমিও জুন মাসে আবার মাউন্ট নুন অভিযানে বেরোব৷ একবার ফিরে এসেছি বলে ছেড়ে দেব, এমন নয়৷ আমরা পাহাড়িয়ারা এ রকমই৷-এইসময়
২২ সেপ্টেম্বর,২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এইচএস