এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : দেখতে দেখতে বছরঘুরে আবারও চলে এসেছে ঈদুল আজহা বা কোরবানি ঈদ। আগামী ১৭ জুন (সোমবার) দেশে উদযাপিত হবে ঈদুল আজহা। ইতিমধ্যে ঈদের সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে জমে উঠেছে পশুর হাট।
তবে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী অতি মুনাফার লোভে স্টেরয়েড জাতীয় হরমোন প্রয়োগের মাধ্যমে গরু মোটাতাজা করার প্রতিযোগিতায় মেতে ওঠে।
কৃত্রিমভাবে মোটাতাজা গরু চেনার উপায় জানিয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ফার্মাকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. কাজী রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘ডেক্সামেথাসন, ওরাডেক্সন, প্রেডনিসোলন জাতীয় ওষুধ সেবন করিয়ে অথবা ডেকাসন, ওরাডেক্সন স্টেরয়েড জাতীয় ইনজেকশন দিয়ে গরুকে মোটাতাজা করা হয়। তা ছাড়া বিভিন্ন ধরনের হরমোন যেমন ট্রেনবোলন, প্রোজেস্টিন, টেস্টোস্টেরন প্রয়োগ করেও গরুকে মোটাতাজা করা হয়।
কৃত্রিমভাবে মোটাতাজা করা অসুস্থ গরুর মাংস খেলে মানুষের শরীরে পানি জমে যাওয়া, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া, মূত্রনালি ও যকৃতের বিভিন্ন রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে।
হাটে গেলে কীভাবে এসব গরু সহজেই চিহ্নিত করা যাবে সে ব্যাপারে জানিয়েছেন অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম। আসুন জেনে নেই-
গরুর গায়ে আঙুল দিয়ে চাপ দিলে ওই স্থানের মাংস দেবে যাবে এবং আগের অবস্থায় ফিরে আসতে অনেক সময় লাগবে।
কৃত্রিম উপায়ে মোটাতাজা করা গরু ঘন ঘন শ্বাস নেবে।
একটু হাঁটলেই হাঁপিয়ে যাবে এবং সর্বদা ক্লান্ত দেখাবে। গরুর দেহ থলথলে থাকবে এবং দেহে পানির পরিমাণ বেশি বোঝা যাবে।
গরুর দেহের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি থাকবে। কৃত্রিম উপায়ে মোটাতাজা করা গরু খাবার খেতে চাইবে না বরং ক্ষুধামন্দার লক্ষণ দেখা দিবে। নিয়মিত জাবর কাটবে না।
কৃত্রিমভাবে মোটাতাজা করা গরুর হাড় খুবই নরম থাকবে। কোনো কারণে যদি দুর্ঘটনাবশত গরুটি পড়ে যায়, তাহলে তার হাড় ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
অসুস্থ গরুর মুখ থেকে অতিরিক্ত লালা পড়তে থাকে এবং এই লালা ফেনাযুক্তও হতে পারে অথবা ফেনা ছাড়াও হতে পারে।
ইনজেকশন দেওয়ায় গরুর রানের মাংস স্বাভাবিক গরুর রানের মাংসের চেয়ে অনেক নরম থাকে। অসুস্থ গরুর নাকের উপরের অংশ বা মাজেল শুষ্ক থাকবে। বেশি পানি জমার কারণে গরু সহজে হাঁটতে চায় না এবং এক জায়গায় বসে থাকে।
সুস্থ গরু চিনবেন যেভাবে
কোরবানির পশু সব ধরনের শারীরিক ত্রুটিমুক্ত হওয়া জরুরি। গুণগত দিক থেকে উত্তম হলো, পশুটি দেখতে সুন্দর, নিখুঁত বা দোষত্রুটি মুক্ত ও হৃষ্টপুষ্ট।
সুস্থ গরুর গায়ের রঙ চকচকে থাকবে, কুঁজ মোটা থাকবে, চামড়া টানটান থাকবে, চামড়ায় কোনো দাগ থাকবে না এবং গরুর গায়ে স্পর্শ করলে সে স্থানে প্রতিক্রিয়া দেখা যাবে। সুস্থ গরুর নাকের ওপরের অংশ ভেজা বা বিন্দু বিন্দু ঘাম জমা থাকবে।
সুস্থ গরুর দেহের তাপমাত্রা স্বাভাবিক থাকবে। তবে সুস্থ গরুর ক্ষেত্রেও যখন অনেক দূর থেকে হাঁটিয়ে হাটে নিয়ে আসা হয় তখন শরীরের তাপমাত্রা বেশি হয়ে থাকে। কিন্তু তা এক থেকে দুই ঘণ্টার মধ্যে ঠিক হয়ে যায়।
খাবার দেখলেই খাওয়ার আগ্রহ দেখাবে। নিয়মিত জাবর কাটবে। গরুর মুখে কম লালা বা ফেনা থাকবে।
গরু সুস্থ নাকি অসুস্থ কিংবা কৃত্রিম উপায়ে মোটাতাজা করা হয়েছে কিনা এসব পর্যবেক্ষণের জন্য দিনের বেলায় হাটে যাওয়া উত্তম। এতে দেখে বুঝে সঠিক গরুটি কিনতে পারবেন।