রবিবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬, ০৯:১২:৫৫

আপনার ভালোবাসা দিবসটি এমন হলো কি?

আপনার ভালোবাসা দিবসটি এমন হলো কি?

এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : মা যখন মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুম থেকে তুলে দেন, তখন কি সেটা ভালবাসা নয়? বা, আপনি বেরোলেন এক রাশ বিরক্তি মাথায় নিয়ে রাস্তায়। পেছন পেছন লেজ নাড়তে নাড়তে আপনাকে সঙ্গ দিতে দিতে চলল গলির নেড়িটা। ভেবে দেখেছেন কখনো, কেউ আপনার পাশে না থাকলেও সে ঠিক থাকে? ওটাও কিন্তু ভালবাসা!

আবার, প্রচণ্ড ভিড়ের মধ্যে তাড়াহুড়া করে, পাশের লোকজনদের কনুইয়ের গুঁতো দিতে দিতে হুড়মুড় করে নামছেন কাউন্টরের গেটের দিকে। কাউন্টারে পৌঁছেতেই দেখলেন, আপনি বলার আগেই গন্তব্যের টোকেন এগিয়ে দিয়েছেন জানলার উল্টো দিকে বসা ভদ্রলোক। সঙ্গে উপহার দিয়েছেন একটা মিষ্টি হাসিও! সেটাও যদি ভালবাসা না-হয়, তবে কি?

এই সব ভালবাসা আজ দু হাতে জড়ো করে নিন। বছর ভরের জন্য। হতেই পারেন আপনি সিঙ্গেল! বা, আপনার মনের মানুষটি থাকতে পারেন দূরে। তাই বলে, ভালবাসা তো আর দূরে নেই। সে রয়েছে আপনার সঙ্গেই।

আসলে, গণ্ডগোলটা করে গিয়েছেন জিওফ্রে চসার নামে এক ভদ্রলোক। সেই চতুর্দশ শতকে। ওই চসার কবি যদি তার বইতে ১৪ ফেব্রুয়ারিকে ভালবাসা জানানোর দিন বলে ঘোষণা না করতেন, তবে কোনো ল্যাঠাই থাকত না! কিন্তু, চসারের বক্তব্যকে লুফে নিল গোটা বিশ্ব। এবং, শুরু হল ভালবাসা-বাসির উৎসব পালন!

তাহলে আর আমার-আপনারই বা কি দোষ, বলুন দেখি! সবাই যখন হাতে গোলাপ নিয়ে বেরিয়ে পড়েছে প্রেমের ময়দানে, তখন মনটা কি হু-হু করে না? ইচ্ছে কি করে না, আমাকেও কেউ বলুক, তোমায় ভালবাসি? বা, একান্তই আমার, এরকম কারো সঙ্গে একটু সময় কাটাই নিভৃতে? করতেই পারে! কিন্তু, গুলিয়ে ফেলবেন না, ওটাই একমাত্র ভালবাসা নয়।

সন্ত ভ্যালেন্টাইন কিন্তু সেই ভালবাসার প্রচার করেননি! তিনি নীরবে, তার সময়ের রোমের রাজা দ্বিতীয় ক্লদিয়াসের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে বিয়ে দিতেন সৈনিকদের। কেন না, সেই সময়ের রোমের আইন মনে করত, বিয়ে দিলে সৈনিকদের যুদ্ধের প্রতি ভালবাসা কমে যায়। মূলকথা, দুই মতের ভালবাসার মধ্যে একটা ঝগড়া লেগেছিল রোমে!

আমরা অতটাও চরমপন্থী নই! ভালবাসায় আবার কোনো বিরোধ থাকে না কি? মনের মানুষটিকে ভালবাসার পাশাপাশিই কিন্তু আপন হতে পারে বিশ্ব।
যে রকম ধরুন, রোজ আপনি রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থাকা বাচ্চা ছেলেটাকে পাশ কাটিয়ে চলে যান। আজ তাকে একটা চকোলেট দিয়ে দিন দেখুন তো! আদিখ্যেতা মনে হলে খরচ করুন মাত্র ২ টাকা! ২টি চকোলেট বা ওই জাতীয় কিছু একটা কিনে নিয়ে গিয়ে দিন তাকে। দেখবেন, পরের দিন এসে সে আপনার হাঁটু জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়েছে। সুন্দর করে সে একটা হাসি উপহার দেবে আপনাকে। হলফ করে বলছি, পয়সা চাইবে না। কিন্তু, ওই হাসিটাই ঝলমলে করে তুলবে আপনার সারা দিন। প্রেমিক বা প্রেমিকার সঙ্গে দুরন্ত ঝগড়া হলেও মেঘ কেটে যাবে। একবার করে দেখুন না! ভালবাসা নতুন মানে নিয়ে এসে দাঁড়াবে আপনার পাশে।

ইউরোপের বেশ কিছু দেশে কিন্তু আজকের দিনটা বাচ্চাদেরই প্রাণ ভরে ভালবাসা হয়। সেই সব জায়গায় বিশ্বাস করা হয়, জ্যাক নামে এক রহস্যজনক মানুষ এ দিন জানলার তাকে বাচ্চাদের জন্য রেখে যায় উপহার বা চকোলেট! ঠিক সান্তা ক্লজের মতোই! আজকের দিনে একবার জ্যাক হয়েই দেখুন না!

আজ ফোন করতে পারেন অনেক দিন যোগাযোগ নেই, এমন কোনো প্রিয় বন্ধুকেও! একটা সময়ে যখন আপনি একা ছিলেন, তখন ওই বন্ধুই কিন্তু সব সময়ে আগলে রেখেছিলেন আপনাকে। ওই ভালবাসাটাও আজ সেলিব্রেট করুন না! সিঙ্গেল হলে, আরো বেশি করেই করুন!

আজ যতটা সম্ভব, থাকুন হাসি-খুশি মেজাজে। অফিসে গেলে, যে সহকর্মী বা সহকর্মিণী আপনাকে পছন্দ করেন, খ্যাঁকখ্যাঁক না করে তাকে উপহার দিন একটা মিষ্টি হাসি। বলুন, হ্যাপি ভ্যালেন্টাইনস্ ডে! দেখবেন, সম্পর্ক অনেকটা সহজ হয়ে গিয়েছে। বাসে বা রাস্তায় চলার পথে সহযাত্রীকেও উইশ করতে পারেন। তিনি একটু অবাক চোখে তাকাবেন বটে, কিন্তু বিনিময়ে আপনার পাওনা হবে সৌজন্য আর ভালবাসার ককটেল। তাই বা মন্দ কি!

সব চেয়ে বড় কথা, ভালবাসুন নিজেকে। একটা ভাল জামা পরুন, মনের মতো বই পড়ুন। সিনেমা দেখুন! কোনো প্রিয় খাবার খান! হ্যাঁ, একাই! নিজেকে ভাল না বাসলে কাউকে কিন্তু ভালবাসা দিতেও পারবেন না। তেমনই, উল্টা দিকে, নিতেও পারবেন না কারো ভালবাসা। সন্দেহ এসে তখন ঢেকে দেবে সব কোমল অনুভূতি। ভাল থাকুন এবং ভাল বাসুন। আগে নিজেকে তার পর সবাইকেও! হ্যাপি ভ্যালেন্টাইনস্ ডে!
১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/জহির/মো:জই

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে