এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : অ্যাসথার ওকাদের বয়স মাত্র দশ। আর এ বয়সেই গণিতকে নিয়ে এসেছে হাতের মুঠোয়। এ রহস্য জানতে যদি তাকে জিজ্ঞেস করা হয়, সে কোথায় পড়ে, যদি সে বলে বসে বিশ্ববিদ্যালয়ে, তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। কারণ অ্যাসথার সত্যিই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে এবং শতভাগ নম্বর পেয়ে তার সহপাঠীদের মধ্যেও প্রথম। আর এ কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদেরও গর্বের কারণ হয়েছে অ্যাসথার।
অ্যাসথারের বয়স যখন তিন। নাইজেরিয়া থেকে ব্রিটেনে চলে আসেন অ্যাসথার আর ইসাইয়াহর বাবা-মা পল আর এফে ওকাদে। থাকতে শুরু করে যুক্তরাজ্যের পশ্চিম মিডল্যান্ডের ওয়ালসালে। তখন তার মা এফে তাকে নিকটস্থ এক স্কুলে নিয়ে যান। সেখানে বাচ্চাদের পড়াশোনার হাতেখড়ি দেয়া হয়। চার বছর বয়েসী শিশুরা যখন ওয়ান-টু-থ্রি শিখছে, অ্যাসথার তখন বীজগণিতের চতুর্ঘাত সমীকরণ সমাধান করা ছাড়া শান্তি পাচ্ছে না। মেয়ের এমন মেধা দেখে চমকে যান বাবা-মা।
একদিন স্কুল থেকে গাড়িতে করে ফেরার পথে অ্যাসথার চিৎকার করে কেঁদে ওঠে। সে আর ওই স্কুলে যেতে চায় না। তাকে নাকি সেখানে কথাই বলতে দেয়া হয় না।
মা এফে ভাবলেন, তার শিশুকে বোধয় বেশি তাড়াতাড়ি নিয়ে গেছেন স্কুলে, তাই ওরা এমন আচরণ করছে। তিনি জানতেন, ইংল্যান্ডে পাঁচ বছরের আগে বাচ্চাদের স্কুলে দেয়া নিরুৎসাহিত করা হয়। ভাবলেন, ঠিক আছে, অ্যাসথারের পাঁচ বছর হোক, তখন দেখা যাবে। ততোদিন মেয়ে ঘরেই পড়ুক।
অ্যাসথারকে ঘরে পড়াতে শুরু করতেই আসল রহস্য বেরিয়ে এলো- কেন অ্যাসথারকে তার স্কুলে কথা বলতে দেয়া হয় না। মেয়েটা আসলে সেই দুর্লভ প্রডিজি শিশুদের একজন যারা খুব অল্প বয়সেই কোনো এক বা একাধিক বিষয়ে হয়ে উঠে অস্বাভাবিক রকম মেধাবী পরিপক্ব মানুষ। মূলত অ্যাসথার তার সমবয়েসী শিশুদের চেয়ে অনেক অনেক বেশি এগিয়ে ছিল। কিন্তু সে এগিয়ে থাকাটা কতখানি, সে ব্যাপারে বাবা-মারে কোনো ধারণা ছিল না।
তার বয়েস যখন ছয়, ব্রিটেনের হাই স্কুল পরীক্ষা জিএসসিইতে অংশ নেয় অ্যাসথার ওকাদে। হাই স্কুলের বড় বড় ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে বসে পরীক্ষা দিয়ে সি গ্রেড পায়। সন্তুষ্ট হয়নি মেয়েটি। পরের বছর আবারও ওই পরীক্ষা দেয়। এবার পায় গ্রেড এ, যা সর্বোচ্চ। গত বছরই সে এ লেভেলে পরীক্ষা দিয়ে বি গ্রেড পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্যে আবেদন করে।
ব্রিটেনের উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় তাকে দূরশিক্ষণে ভর্তি করে নিতে আগ্রহ দেখায়। গণিতকেই বিষয় হিসেবে গ্রহণ করে অ্যাসথার।
বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের কঠিনতম গাণিতিক তত্ত্ব, সমীকরণ আর জটিল সংখ্যার স্তূপে যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাপ্তবয়স্ক ছাত্রছাত্রীরাই হাবুডুবু খেতে থাকে, সেখানে অ্যাসথারের জন্যে ওটা হয়ে ওঠে বিনোদনের মাধ্যম।
সে হাসতে হাসতে বলে, ওই অংকগুলো কী যে সহজ, কিভাবে বোঝাই।।
অ্যাসথারের আশা, সে ব্যাঙ্কিং নিয়ে কাজ করবে। কারণ সংখ্যা তার প্রাণ। তার ধারণা ব্যাংক দিয়েই মানুষের সবচেয়ে বেশি কাজে আসা যাবে। ছোট্ট এ মেয়ে মানবপ্রেমীও বটে।
বর্তমানে সে পড়াশোনার পাশাপাশি তার বয়েসী বাচ্চাদের জন্য গণিতের বই লিখছে। নাম দিয়েছে- ইয়াম্মি ইয়াম্মি অ্যালজেবরা।
অ্যাসথারের প্রিয় কার্টুন চরিত্র ফ্রোজেন-এর এলসা। এছাড়া বার্বিও পছন্দ করে সে। বাবা মায়ের হাত ধরে পার্কে বেড়াতেও ভালো লাগে তার।
জানা গেছে, এফে দম্পতির বাকি সন্তান ইসাইয়াহ- অ্যাসথারের ছোট ভাই- যার বয়েস এখন মাত্র ৬, সেও প্রডিজি শিশু। এবার সে এ লেভেলে পরীক্ষা দিতে বসছে।
অ্যাসথার আশা করছে, আর দুই বছরের মধ্যে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পেরিয়ে যাবে সে। তারপর ১৩ বছর বয়সে বিজনেস ম্যাথে পিএইচডি করবে।।
২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/জহির/মো:জই/