এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : আমাদের দেশে সাধারণত বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ এবং আশ্বিন-কার্তিকে ঝড়বৃষ্টির সময় বিদ্যুৎ চমকায় বেশি এবং বজ্রপাত ভয়াবহ আকারে হয়। প্রতিবছর বজ্রপাতে অনেক মানুষ মারা যায়। কিন্তু স্থলভাগের চেয়ে সমুদ্রবক্ষে বজ্র-বিদ্যুৎ বেশি তীব্র হয়। সাগরে বিদ্যুতের আলোর ঝলকানি চোখধাঁধানো। আবার বজ্রপাতের প্রতাপও মারাত্মক। কেন এত পার্থক্য?
এ নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে। সম্প্রতি এর একটি কারণ জানা গেছে। এ বিষয়ে স্মিথসোনিয়ানম্যাগ ডটকমে (১৪ জানুয়ারি ২০২১) একটি বিস্তৃত লেখা ছাপা হয়েছে। লেখাটি হেকাইম্যাগাজিন ডটকমে প্রকাশিত হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। বিজ্ঞানীদের গবেষণায় দেখা গেছে, মহাসাগরে বজ্রপাতের সময় যে বিদ্যুতের ঝলক সৃষ্টি হয়, তা স্থলভাগের বিদ্যুতের চেয়ে ১০০ থেকে ১০০০ গুণ বেশি উজ্জ্বল ও শক্তিশালী।
একে বলা হয় ‘সুপারবোল্ট’! কেন এই বিরাট পার্থক্য, তা নিয়ে এখনো বিজ্ঞানীদের মধ্যে মতবিরোধ আছে। তবে সমুদ্রবিজ্ঞানী মুস্তফা আসফুর পানির রসায়ন কীভাবে বজ্র-বিদ্যুৎকে প্রভাবিত করে, তা নিয়ে গবেষণা করেন। তিনি তাঁদের পরীক্ষাগারে একটি ছোট বাক্সে লবণাক্ত পানি নিয়ে পরীক্ষায় এক অভাবিত ফল পান। তিনি অবাক বিস্ময়ে দেখেন, লবণাক্ত পানিতে বজ্র-বিদ্যুৎ বেশি শক্তিশালী। আগে ধারণা করা হতো, মেঘ ও বজ্রপাতের ধরনের পার্থক্যের জন্য এটা হয়।
কিন্তু ল্যাবরেটরির পরীক্ষায় বিষয়টির অন্য এক তাৎপর্য সামনে এল। এরপর বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন সাগর, নদী ও পুকুরের পানির নমুনা সংগ্রহ করলেন। পরীক্ষায় দেখা গেল, পানি যত বেশি লবণাক্ত, বজ্র-বিদ্যুতের আঘাত তত বেশি। ডেড সির পানি সবচেয়ে বেশি লবণাক্ত। এর পানি গ্যালিলি সাগরের পানির চেয়ে ৬৮০ গুণ বেশি লবণাক্ত। ডেড সির পানির ওপর সৃষ্ট বিদ্যুতের ঝলক গ্যালিলির তুলনায় ৪০ গুণ বেশি উজ্জ্বল।
আবার গ্যালিলির পানির ওপর সৃষ্ট বিদ্যুতের ঝলক ভেজা মাটির তুলনায় দেড় গুণ বেশি উজ্জ্বল। তবে এটা ল্যাবরেটরির ছোট পরিসরের পরীক্ষার ফল। এখন বাস্তবে দেখতে হবে সমুদ্র, নদী ও স্থলভাগে বজ্র-বিদ্যুতের প্রক্রিয়াটি কীভাবে কাজ করে। তখনই কেবল স্থির সিদ্ধান্তে আসা যাবে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ভবিষ্যতে প্রশান্ত মহাসাগরের কোনো কোনো অংশে তীব্র বিদ্যুৎ-বজ্রাঘাত, তথা সুপারবোল্টের আশঙ্কা বাড়তে পারে। কারণ, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির জন্য সাগরের কোনো কোনো অংশে বেশি পানি বাষ্পীভূত হচ্ছে এবং সে কারণে সেখানে লবণাক্ততা বেশি হারে বাড়ছে। তাই ওই সব অঞ্চলে বেশি তীব্র বজ্রাঘাতের আশঙ্কা রয়েছে।