মঙ্গলবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৮:২৮:৫৯

‘হ্যামিলিনের বাঁশিওয়ালা’ গল্পের কাহিনী কি সত্য?

‘হ্যামিলিনের বাঁশিওয়ালা’ গল্পের কাহিনী কি সত্য?

এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : ‌‘হ্যামিলিনের বাঁশিওয়ালা’ গল্পটি কে না জানে।  না জানলেও মুখোমুখে শুনেছেন অনেকেই।  ছোটবেলায় আমরা এ গল্পটি পড়েছি আর মনে মনে কল্পনা করেছি, সত্যি কী হ্যামিলন শহরে এরকম ঘটনা ঘটেছিল- এমন প্রশ্ন মনে প্রায়ই উঁকি দিত।  তবে সেই কাহিনী নিয়ে এখনো গবেষণা চলছে।

জার্মানির লোয়ার স্যাক্সনি রাজ্যের ‘হামেল্ন’ বা হ্যামিলন শহর এ কল্পকাহিনীর অনেক চিহ্ন বহন করে।  আজ থেকে প্রায় ৭০০ বছরের বেশি আগে জার্মানির ছোট্ট শহর হ্যামিলিনে ঘটেছিল এমন ঘটনাটি।  সালটা ১২৮৪। হ্যামিলিনের গির্জার দেয়ালে আঁকা ছবি থেকে প্রথম এ ঘটনার কথা জানতে পারে মানুষ।  পরে এ নিয়ে কতই না গল্প-কবিতা উপকথা লিখা হয়েছে।

বংশীবাদক যখন সব শিশুকে নিয়ে রওনা দেয়, তখন শহরের কেউ কিছুই করতে পারছিল না।  তারা তখন মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে বাঁশির সুর শুনছিল।  তাদের দলে সেই মেয়রও ছিল।

বংশীবাদক শিশুগুলোকে নিয়ে হ্যামিলিনের শহরের পাঁচিল বেয়ে এক পাহাড়ের দিকে গেল।  পাহাড়টি হঠাৎ দু’ভাগ হয়ে গেল।  তখন বংশীবাদক শিশুগুলোকে নিয়ে তার ভিতরে ঢুকে গেল।  তাকে আর শিশুগুলোকে পরে আর দেখা যায়নি।

এমন ঘটনা ঘটেছে ১২৮৪ সালের ২২ জুলাই।

দীর্ঘদিন ধরে এ অমীমাংসিত ঘটনাটি নিয়ে গবেষণা হয়েছে।  হ্যামিলন শহরের পৌরসভায় রাখা নথিপত্র তন্নতন্ন করে খোঁজা হয়েছে এ ঘটনার উৎস জানার।  অনেকেই বিশ্বাস করেন এটি সত্য কাহিনী।  জার্মানির হানোভারের ৩৩ মাইল দক্ষিণে একটি শহরের নাম হ্যামিলন।

একাদশ শতাব্দীতে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়।  ১২১২ সালে নিকোলাস নামক একটি ছেলে ওই শহরের ছেলেমেয়েদের এ কথা বলে উত্তেজিত করে তুলে যে, সে তাদের নিয়ে যাবে জেরুজালেমে।

জেরুজালেম হলো পুণ্যভূমি।  সে তাদের কাছে এক রহস্যময় বর্ণনা দিয়েছিল।  বলেছিল, তারা যখন ভূমধ্যসাগরে পৌঁছবে, তখন সাগর শুকিয়ে যাবে।  তারা হেঁটে তা পাড়ি দেবে।  এভাবে সে প্রচুর ছেলেমেয়েকে নিয়ে যাত্রা শুরু করে।  কিন্তু পরে তাদের আর কোনো হদিস মেলেনি।

গবেষকরা বলেন, নিকোলাস ছিল ছেলেধরার দলের চর।  সে ওইসব শিশুকে মধ্যপ্রাচ্যে বিক্রি করে দিয়েছিল।  

সে শহরের একটি রাস্তার নাম বাঙ্গেলোসেন্ট্রাস।  ওই রাস্তার একটি কাঠের ফলকে খোদাই করা আছে ১৮২৪ সালের ২৬ জুন হ্যামিলনের ১৩০টি শিশুকে এক রংচঙা ব্যক্তি অপহরণ করে নিয়ে গেছিল, যাদের আর হদিস মেলেনি।

হ্যামিলনে রয়েছে একটি জাদুঘর।  ওই জাদুঘরে সঞ্চিত অনেক বইয়ের মাঝে পঞ্চদশ শতাব্দীতে লেখা কয়েকটি বইয়ে এ রহস্যময় কাহিনী পাওয়া যায়। সেখানে এক প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ দেয়া আছে।  ফ্রাউ ভন লিউড নামে এক তেরো বছরের বালক বলেছে যে, লোকটির বয়স আনুমানিক ছিল ৩০।  দেখতে খুব সুদর্শন।  তার বাঁশিটি ছিল রুপার তৈরি।

অন্য এক নথিতে পাওয়া যায়, ১৩০০ শতাব্দীতে হ্যামিলনের বাজারে এক কাঠের ফলক ছিল।  সেখানে এক বংশীবাদক ও অনেক শিশুর ছবি ছিল।  সেটা ১৭০০ সালে ঝড়ে ধ্বংস হয়ে যায়।

ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১২৩৭ সালে এফুর্ট শহরে এক হাজারেরও বেশি ছেলেমেয়ে হঠাৎ শহর থেকে দলবদ্ধ হয়ে বাইরে বের হয়ে আসে।  তারা নাচতে নাচতে পৌঁছায় আর্নস্টার্ড নামে এক জায়গায়।  অনেক খোঁজাখুঁজির পর যখন তাদের পাওয়া গেল তখন তাদের শহরে ফিরিয়ে আনা হলো।  তবে কে তাদের নিয়ে গিয়েছিল তার হদিস মেলেনি।  বাড়ি আসার পর বেশির ভাগ শিশু অসুস্থ হয়ে পড়ে।  তাদের মাঝে মূর্ছা রোগ দেখা যায়।

এ গল্পটি নিয়ে যারা দীর্ঘদিন গবেষণা করেছেন, তাদের মধ্যে হ্যান্স ডোবারটিন সফল।  তিনি এ গল্পের বর্ণনা দেন অন্যভাবে।  তিনি এ গল্পের তথা কাহিনীর ব্যাখ্যা দেন ১২৮৪ সালের ঘটনার ওপর ভিত্তি করে।

বর্তমানে হ্যামিলনে যে পৌরসভা রয়েছে তার নামে অর্থ হলো ‘ইঁদুর ধরা লোকের বাড়ি’।  এটি নির্মিত হয় ১৬০২ সালে।  এর দেয়ালে বিশ্ববিখ্যাত কাহিনীটির ছবি চমৎকারভাবে আঁকা রয়েছে।  এ গল্পের কাহিনী নিয়ে এখনো গবেষণা হচ্ছে।

এদিকে ভারতের ইন্দর শহরের ৪০০ শয্যার সরকারি হাসপাতালে ইঁদুরের রাজত্ব কায়েম হয়েছিল একসময়।  মানুষকে কামড়াচ্ছে, কাগজ, আসবাবপত্র কেটেকুটে সাবাড় করে দিচ্ছে।  অতীষ্ঠ হয়েছে উঠেছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

অবশেষে তারা ভাবলেন ‘হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা’র কথা।  তাই শেষমেষ ইঁদুর নিধন কোম্পানির খোঁজ পান তারা।  মহারাজা যশোবন্তরাও হাসপাতালে ইতিমধ্যে ২৫ হাজারের বেশি ইঁদুর হত্যা করেছেন কোম্পানির কর্মীরা। এখনো তাদেরকে বহু মূষিক হত্যা করতে হবে।

শহরের সিটি কমিশনার সঞ্জয় দুবে সংবাদ সংস্থা বিবিসিকে বলেছেন, ধারণা করা হচ্ছে হাসপাতালে আট হাজার ইঁদুরের গর্তে প্রায় ৭০ হাজারের মত ইঁদুর রয়েছে। তারা হাসপাতালের বিভিন্ন সরঞ্জাম কেটে শেষ করেছে। যখন তখন কামরাচ্ছে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হওয়া রোগীদের। এদের ধ্বংস করতে একটি কীট-পতঙ্গ বিনাশকারী কোম্পানির শরণাপন্ন হয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তাদের কর্মীবাহিনী সমানে ইঁদুর মেরে চলেছে। কিন্তু তারা একাজে কতটা সফল হয়েছে তা এখনো জানা যায়নি।

বিবিসি বলছে, ভারতে সরকারি হাসপাতালগুলোতে পরিচ্ছন্নতার মান অত্যন্ত নিম্নমানের। এ কারণেই সেখানে এ ধরণের সমস্যা দেখা দিয়েছে।

সিটি কমিশনার দুবে বলেন, এই হাসপাতালে প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে অগণিত ইঁদুর। হাসপাতালকে ইঁদুরমুক্ত করতে আমরা ইঁদুর নিধন অভিযান শুরু করেছি। এই অভিযানে ব্যয় হচ্ছে ৫৫ লাখ রুপি।

হাসপাতালকে ইঁদুরমুক্ত করার দায়িত্ব পেয়েছিলেন ‘লক্ষী ফামিগেশন এন্ড পেস্ট কন্ট্রোল লিমিটেড’ কোম্পানি।  কোম্পানির চেয়ারম্যান সঞ্জয় কর্মকার বলেন, ইঁদুরগুলোকে মারতে তার কর্মীরা গর্তের কাছে চিংড়ি, আঁখ, আপেল এসব বিষযুক্ত নানা খাবার ছড়িয়ে দিচ্ছে। ইঁদুর খুব চালাক প্রাণী। তারা যদি দেখে কোনো খাবার খেয়ে তাদের একজন মারা গেছে, তবে তারা আর ওই খাবার মুখে তুলবে না। এজন্য আমাদের প্রতিদিনই খাবার মেনু বদলাতে হচ্ছে।

বিশ বছর আগেও তারা এই হাসপাতালে ইঁদুর নিধন কর্মসূচি চালিয়েছিল। তারা তখন ১০ হাজার ইঁদুর মেরেছিল।

তবে মজার বিষয় হচ্ছে, ভারতের কিছু হিন্দু নেতা আবার ইঁদুর নিধনের ঘোর বিরোধী।  কেননা তাদের দেবতা গণেশের বাহক ছিল মূষিক।

উল্লেখ্য, ইন্দরে বড় হাসপাতালগুলোর অন্যতম হচ্ছে এই মহারাজা যশোবন্তরাও।  ৪শ শয্যার এই হাসপাতালটির আউটডোরে প্রতিদিন প্রায় এক হাজার রোগী চিকিৎসা নিয়ে থাকে।
২২ সেপ্টেমর,২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এফএম/এসআর

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে