এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : বর্তমানে ফেসবুক হচ্ছে যোগাযোগ ব্যবস্থার অন্যতম একটি মাধ্যম। বিশ্বের মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় একটি মাধ্যম হচ্ছে ফেসবুক। তবে এখানে বিড়ম্বনাও কম নেই। আর এই বিড়ম্বনার কারণ হয়ে দাঁড়া ফেইক আইডি। যা অনেক সময় আমাদের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াও।
এক পরিসংখ্যানে জানা গেছে মোট ফেসবুক প্রোফাইলের প্রায় ৯% ফেইক। এর মধ্যে বাংলাদেশে এই সংখ্যা আরো বেশী। অনেকেই ফেসবুকে নকল প্রোফাইল খুলে নিজেদের নাম পরিচয় বদলে প্রেমের প্রতারণা, অর্থ প্রতারণা, ব্ল্যাকমেইল সহ নানান অপরাধ করছে।
স্কুল কলেজ পড়ুয়া কম বয়সী ছেলে মেয়েরাই এই ফাঁদে বেশী পা দিয়ে ফেলছেন। ফলে নিজের জীবনে অনেকেই ডেকে আনছেন বিপর্যয়। মনে প্রশ্ন জাগতে পারে কীভাবে সনাক্ত করা যাবে ফেসবুকের প্রোফাইল আসল নাকি ভুয়া সেই সম্পর্কে। ফেসবুকের ভুয়া প্রোফাইল সনাক্ত করার কিছু সহজ উপায় আছে। তাহলে জেনে নিন ফেসবুকে ভুয়া প্রোফাইল সনাক্ত করার সহজ কিছু উপায়ঃ
প্রোফাইল পিকচার : ফেসবুকের ভুয়া প্রোফাইল সনাক্ত করার একটি কার্যকরী উপায় হলো প্রোফাইল পিকচার গুলো ভালো ভাবে দেখা। অধিকাংশ ফেক প্রোফাইলের ছবিতেই খুব সুন্দরী নারী অথবা হ্যান্ডসাম পুরুষের ছবি দেয়া থাকে।
কখনো কখনো বারাক ওবামা, ওসামা বিন লাদেন, নায়ক, নায়িকা সহ নামী দামী সেলিব্রেটিদের ছবি দেয়া থাকে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সেই ছবির মান খুবই খারাপ থাকে। খুব বেশি প্রোফাইল ফটোও থাকে না এই ধরনের প্রোফাইলে। হাতে গোনা ১০/১২টা ছবির বেশি থাকে না প্রোফাইল পিকচার এ্যালবামে।
এক্ষেত্রে ছবিটি গুগল ইমেজে সার্চ দিয়ে দেখতে পারেন ছবিটি আরো কোথাও পাওয়া যায় কিনা। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই গুগল ইমেজে সার্চ দিলে দেখা যায় পাকিস্থানি কিংবা তামিল নায়ক নায়িকাদের ছবি দিয়ে প্রোফাইল পিকচার বানানো হয়েছে।
ছবির এ্যালবাম : ফেসবুকের ফেইক প্রোফাইলে ছবির এ্যালবাম থাকে না সাধারণত। একটি আসল প্রোফাইলে বিভিন্ন অনুষ্ঠাম, উপলক্ষ্যের ছবির এ্যালবাম থাকে যেগুলো ফেইক প্রোফাইলের ক্ষেত্রে থাকে না। এ্যালবাম থাকলেও নিজের ছবির বদলে ফুল, পাখি, প্রাকৃতিক দৃশ্যের ছবি দিয়ে এ্যালবাম বানিয়ে রাখে ফেক প্রোফাইলধারীরা। একটি ছবি অনেক সময় আবার ফটোশপে এডিট করে বিভিন্ন ভঙ্গিমায় দেখানো হয়। পাকিস্থানী স্কুল ছাত্রীদের ছবি ব্যবহার হয় বেশী এক্ষেত্রে।
বন্ধুদের সাথে কমেন্ট আদান প্রদান : আসল ফেসবুক প্রোফাইলে স্বাভাবিক ভাবেই স্ট্যাটাস ও ছবিতে বন্ধুদের সাথে প্রচুর কমেন্ট আদান প্রদান করা হয়। কিন্তু নকল ফেসবুক প্রোফাইলে এধরনের কমেন্টের আদান প্রদান ও কথোপকথন থাকে না। নকল প্রোফাইলের ছবির নিচে কিংবা স্ট্যাটাসে কমেন্ট থাকলেও তা শুধু প্রশংসা বাক্যই থাকে। অন্য কোনো ধরনের বাক্যালাপ লক্ষ্য করা যায় না নকল প্রোফাইলে। প্রোফাইলধারী সাধারনত কমেন্টের কোন উত্তর দেয় না।
ফ্রেন্ড লিস্ট : ফেসবুকের ভুয়া প্রোফাইল সনাক্ত করতে চাইতে ফ্রেন্ড লিস্ট দেখুন। ফ্রেন্ড লিস্টে যদি অধিকাংশ মানুষই বিপরীত লিঙ্গের হয় তাহলে বুঝে নিন সেটা ফেইক প্রোফাইল। কারণ একটি আসল প্রোফাইলে নিজের লিঙ্গ এবং বিপরীত লিঙ্গের বন্ধু মধ্যে একটি সামঞ্জস্য থাকে। আইডি ওপেন করেছে কিছুদিন হল কিন্তু ফ্রেন্ডের সংখ্য কয়েক হাজার তবে তাকে আপনার ব্ল্যাক তালিকায় রাখার চিন্তা করতে পারেন।
বেসিক ইনফো : নকল প্রোফাইলে অধিকাংশ সময়েই স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও চাকরীর তথ্য পাওয়া যায় না। মাঝে মাঝে এমন সব স্কুল কলেজের নাম দেয়া থাকে যেগুলোর কোনো অস্তিত্বই নেই। আবার অনেক সময় অনেক ভালো স্কুল কলেজের নাম দেয়া থাকে কিন্তু কোনো ব্যাচমেটকে ট্যাগ করা থাকে না সেখানে। এমনকি কোন ব্যাচ ছিলো সেটাও লেখা থাকে না সেখানে। এমনো দেখা গেছে মেয়ের ছবি, মেয়ের নামে প্রোফাইল কিন্ত কলেজ লেখা নটরডেম বা ঢাকা কলেজ জেগুল সম্পূর্ণ ছেলেদের কলেজ। যদি দেখেন জন্ম তারিখ ১-১ অথবা ১-১২ এ জাতীয় তবে তাকে সন্দেহের তালিকায় রাখতে পারেন।
স্প্যামিং স্ট্যাটাস : এই ফেইক প্রোফাইলধারীরা সাধারনত কোন ওয়েব সাইট বা ফেসবুক ফ্যান পেইজের লিংক দিয়ে সেখানে সবাইকে জয়েন করতে বলে। অনেকে প্রায়ই স্ট্যাটাস দেয় ‘কিছুই ভাল লাগছে নাৃ কি করি বন্ধুরা’ এ জাতীয়।
লাইক পেজ : সে কোন কোন পেইজ লাইক করেছে দেখবেন। ফেইক প্রোফাইলধারীরা সাধারনত অশ্লীল ও বাজে পেইজ তার লাইক তালিকায় রাখে। একই সঙ্গে দেখবেন তাদের লাইক তালিকায় ধর্মীয় পেইজ।
তবে এই প্রক্রিয়ায় শতভাগ ফেইক আইডি সবসময় সনাক্ত করা না গেলেও, এই পদ্ধতি অনেকটাই আপনার উপকার আসবে। তবে আপনি যদি আপনার সুক্ষ বুদ্ধিমত্তা কাজে লাগান তাহলে আপনি ফেইক আইডি পুরোপুরি চিনতে পারবেন । চোখ কান খোলা রেখে ফেসবুক ব্যবহার করুন। না হলে কখন কোন প্রতারকের জালে আটকা পড়ে আপনার জীবন নষ্ট হয়ে যাবে।
১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এসপি/এমএন