এক্সক্লুসিভ ডেস্ক: শিল্পীর তুলিতে জে১৪০৭বি গ্রহসৌরজগতের শনির মতোই বলয়ঘেরা আরও একটি গ্রহের সন্ধান পেয়েছেন জোতির্বিজ্ঞানীরা। সৌরজগতের বাইরে এই প্রথম এ ধরনের গ্রহের সন্ধান মিলল। বিশাল আকৃতির এই গ্রহটি পৃথিবী থেকে অনেক আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত।
১৬১০ সালে বিখ্যাত বিজ্ঞানী গ্যালিলিও টেলিস্কোপ আবিষ্কারের পর বলয়ঘেরা গ্রহ শনির অবস্থান শনাক্ত করেছিলেন। মার্কিন ও ডাচ্ বিজ্ঞানীদের এই দাবি সঠিক হলে সেই ঘটনার ৪০০ বছরেরও বেশি সময় পরে একই ধরনের আরেকটি গ্রহ আবিষ্কৃত হলো, যদিও তা আমাদের সৌরজগতের অনেক বাইরে। জে১৪০৭বি নামের এই গ্রহটির রয়েছে ৩০টি বলয়ের সমন্বয়ে গঠিত একটি ডিস্ক, যা আকারে শনির চারপাশে থাকা বলয়ের চেয়ে ২০০ গুণ বড়।
গ্রহটির সন্ধানে নেতৃত্ব দিয়েছেন নেদারল্যান্ডস ও যুক্তরাষ্ট্রের একদল জ্যোতির্বিজ্ঞানী। দলটির সদস্য নেদারল্যান্ডসের লেইডেন অবজারভেটরির ম্যাথিউ কেনওর্থি বলেন, ‘এটা আকৃতিতে বিশাল। আপনি এর বলয়গুলো এবং বলয়গুলোর মধ্যে যে ব্যবধান রয়েছে, তা পৃথিবী থেকে সহজেই দেখতে পারবেন।’
কেনওর্থি ও যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের ইউনিভার্সিটি অব রচেস্টারের জ্যোতির্বিজ্ঞানী এরিক মামাজেক লাখ লাখ নক্ষত্রের ছবির একটি ডেটাবেইস ঘেঁটে গ্রহটির অস্তিত্ব আবিষ্কার করেছেন। ওই ছবিগুলো ধারণ করা হয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের টেলিস্কোপ দিয়ে। ‘এক্সোপ্লানেট’ অনুসন্ধানে হাতে নেওয়া সুপার ডব্লিউএএসপি প্রকল্পের আওতায় ওই ছবিগুলো ধারণ করা হয়েছিল।
আমাদের সৌরজগতের বাইরে প্রদক্ষিণকারী গ্রহগুলোকে বলা হয় এক্সোপ্লানেট। এসব গ্রহ যে নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে প্রদক্ষিণ করে, তার উজ্জ্বলতার হেরফের দেখে পৃথিবী থেকে গ্রহগুলোকে পর্যবেক্ষণ করা হয়ে থাকে। যখন এ ধরনের একটি গ্রহ পৃথিবী ও তার নক্ষত্রের মাঝখান দিয়ে প্রদক্ষিণ করে, তখন কয়েক ঘণ্টার জন্য আলো অংশত বন্ধ হয়ে যায়।
জে১৪০৭ নক্ষত্রের ক্ষেত্রে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা ২০০৭ সালে একটি অস্বাভাবিক ও সক্রিয় আলো দেখতে পেয়েছিলেন, যা দুই মাস স্থায়ী হয়েছিল। নক্ষত্রটির ব্যাপারে ২০০৫ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত তথ্য সংগ্রহ করা হয়। আর ২০০৭ সালের মধ্যভাগে হঠাৎ করেই নক্ষত্রটি ঝাঁকুনি খেতে ও মিটমিট করে জ্বলতে শুরু করে। বিজ্ঞানী কেনওর্থি বলেন, ‘এটা ছিল খুবই অদ্ভুত দৃশ্য। এর আগে কেউই এমনটি দেখতে পাননি।’
বিজ্ঞানী দলটির সদস্যরা প্রথমে ধাঁধায় পড়ে যান। তবে শেষ পর্যন্ত তাঁরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছান যে এর একমাত্র ব্যাখ্যা হচ্ছে, গ্রহটির চারপাশে বিশাল বিশাল আকারের বলয় রয়েছে।
জ্যোতির্বিজ্ঞানী কেনওর্থি বলেন, ‘এই প্রথম কেউ আমাদের সৌরজগতের বাইরে এ ধরনের বিশাল বলয় দেখতে পেল। এটার চারপাশজুড়ে রয়েছে বলয় অবকাঠামো, যাকে আমরা গ্রহ বলে মনে করছি।’ তাঁদের এই গবেষণা বিজ্ঞানবিষয়ক সাময়িকী অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নাল-এ গৃহীত হয়েছে বলেও জানান তিনি।
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, জে১৪০৭বি গ্রহের বলয়গুলো শুরু হয়েছে গ্রহটি থেকে ৩০ মিলিয়ন কিলোমিটার দূর থেকে। এগুলো প্রসারিত ৯০ মিলিয়ন কিলোমিটার পর্যন্ত।
বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, জে১৪০৭বি গ্রহটি খুব উত্তপ্ত (১ হাজার থেকে ২ হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াস) হওয়ায় এর বলয়গুলো সম্ভবত ধূলিকণা দিয়ে তৈরি। বিজ্ঞানী কেনওর্থি বলেন, জে১৪০৭বি গ্রহটি আকৃতিতেও বিশাল। এটি সৌরজগতের সবচেয়ে বড় গ্রহ বৃহস্পতির চেয়েও ১০ থেকে ৪০ গুণ বড় হতে পারে।
জে১৪০৭বি গ্রহ সম্পর্কে আরেকটি উল্লেখযোগ্য তথ্য হলো, এটির বয়স কমবেশি ১৬ মিলিয়ন বছর। যেখানে আমাদের পৃথিবী এবং সূর্যের বয়স সাড়ে চার বিলিয়ন বছর। তার মানে গ্রহ হিসেবে জে১৪০৭বি এখনো শৈশবকাল অতিক্রম করছে।
বিজ্ঞানী কেনওর্থির ভাষ্য, গ্রহকেন্দ্রিক বলয় গঠন সম্পর্কে যেসব তত্ত্ব রয়েছে, সেগুলোর বিষয়ে প্রথম সরাসরি প্রমাণ এই আবিষ্কার। তিনি বলেন, ‘আমাদের অনুমান যদি সঠিক হয় এবং এটা (জে১৪০৭বি) যদি সত্যিই একটা বলয়ব্যবস্থা হয়ে থাকে... তাহলে ওই প্রক্রিয়া সম্পর্কে এটাই হবে প্রথম সরাসরি প্রমাণ।’
সূত্র: এএফপি ও সিএনএন
২২ সেপ্টেম্বর,২০১৫/এমটিনিউজ২৪/শাম/সিয়াম