মঙ্গলবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৮:৫৩:৪৮

রোগীর মনের অবস্থা জানাবে যন্ত্র

রোগীর মনের অবস্থা জানাবে যন্ত্র

এক্সক্লুসিভ ডেস্ক: বছরের পর বছর ধরে শয্যাশায়ী ও সাড়া দিতে অক্ষম রোগীদের সঙ্গে যোগাযোগের নতুন প্রযুক্তি বের করার চেষ্টা চলছে। ছবি: প্যাট্রিক মুরালহাসপাতালে জেগে উঠে দেখলেন, নড়াচড়ার শক্তি নেই। চেষ্টা করেও কথা বলতে পারছেন না, এমনকি চোখের পাতা পর্যন্ত খুলতে পারছেন না।

কেবল শুনতে পাচ্ছেন ডাক্তারের সঙ্গে আপনার আত্মীয়-পরিজনের কথাবার্তা। আপনি নিজের অবস্থা সম্পর্কে কাউকে জানানোর সামর্থ্য হারিয়েছেন। এমন পরিস্থিতি কাম্য না হলেও কারও কারও জীবনে তা আসতেও পারে।

তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন, আপনার শরীরে একটি যন্ত্র যুক্ত করা হলে অবস্থার পরিবর্তন হতে পারে। এটি ব্যবহার করে মস্তিষ্কতরঙ্গের সাহায্যে আপনি আবার অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। তবে শুধু ‘হ্যাঁ’ ও ‘না’ ছাড়া আর কিছু বলার উপায় নেই। তবু, অল্প হলেও এটুকু সামর্থ্যই অনেক ব্যবধান গড়ে দিতে পারে। পরিচর্যাকারীকে অন্তত জানানো যাবে আপনার পিপাসা, উঠে বসার ইচ্ছা, টিভি দেখার চাহিদা ইত্যাদির কথা।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মনের ইচ্ছা জানার প্রযুক্তির বেশ উন্নতি হয়েছে। তাই বিছানায় আটক রোগী এবং কোমা অবস্থায় পৌঁছে যাওয়া মানুষের সঙ্গে যোগাযোগের প্রচেষ্টায় অনেক অগ্রগতি হয়েছে। ব্যাপারটা হয়তো খুব তাড়াতাড়িই বাস্তবে রূপ নেবে। গবেষকেরা এবার বহনযোগ্য এমন এক যন্ত্র তৈরি করছেন, যা ব্যবহার করে রোগীরা দৈনন্দিন যোগাযোগ বজায় রাখতে পারবেন। আর কারও রোগনির্ণয়ে ভুল হয়েছে কি না, তা-ও শনাক্ত করতে পারবে যন্ত্রটি।

কানাডার অন্টারিও প্রদেশের ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির গবেষক অ্যাড্রিয়ান ওয়েন ও তাঁর সহযোগীরা কোমায় থাকা রোগীদের কথা বলার সুযোগ করে দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছেন। তবে ওই রোগীরা যদি মরে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন, তার জবাব কী হবে—সে ব্যাপারে নীতিশাস্ত্র বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনাও করা হচ্ছে। সাধারণত কোমার পরবর্তী পর্যায়ে জীবন্মৃত দশা শুরু হয়। তখন পূর্ণ সজাগ থাকার পরিবর্তে সজ্ঞান ও অজ্ঞান অবস্থার মাঝামাঝি থাকেন রোগীরা। মাঝে মাঝে চোখ খুললেও তাঁরা কিছু দেখতে পাচ্ছেন বলে মনে হয় না। এমনকি তাঁরা কারও কথার জবাবে সাড়াও দেন না।

সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হওয়ার পর ১২ বছর ধরে জীবন্মৃত অবস্থায় কাটানো এক রোগীর ওপর পরীক্ষা চালিয়ে ওয়েন ও তাঁর সহকর্মীরা দেখতে পান, তিনি নিজের নাম ও আশপাশের লোকজন সম্পর্কে ঠিক ঠিক জবাব দিতে পারছেন। তিনি যন্ত্রণা পাচ্ছেন না এবং টিভিতে হকি খেলা দেখতে পছন্দ করেন বলে জানিয়েছেন।

এফএমআরআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে আগে এ ধরনের রোগীদের মস্তিষ্কের কার্যকলাপ অনুসরণের চেষ্টা করা হতো। তবে ব্যাপারটা বেশ পরিশ্রমসাধ্য ও ব্যয়বহুল। প্রক্রিয়াটাকে আরও সহজ করার চেষ্টা করছেন ওয়েন ও তাঁর সহযোগীরা। তাঁদের তৈরি প্রযুক্তিটি মস্তিষ্কের বৈদ্যুতিক তরঙ্গের (ইইজি) তথ্য সংগ্রহের জন্য একটি বিদ্যুৎবাহী যন্ত্রাংশ (ইলেকট্রোড ক্যাপ) ব্যবহার করে। কিন্তু ইইজি দেখে মস্তিষ্কের কেবল উপরিতলের কার্যক্রম জানা যায়। তাই প্রযুক্তিটি আরও আধুনিকায়নের প্রয়োজন পড়ে। যন্ত্রটির নতুন সংস্করণে রোগীর হাতে একাধিক কম্পনশীল যন্ত্র সংযোজন করতে হয়।

যুক্তরাজ্যের লন্ডনে গত সপ্তাহে অনুষ্ঠিত বার্টস নিউরোসায়েন্স সিম্পোজিয়ামে এই প্রযুক্তির ব্যাপারে কিছু তথ্য তুলে ধরেন ওয়েন। তিনি বলেন, কম্পনের মাধ্যমে স্নায়ুর পরিবর্তনবিষয়ক তথ্য ইইজি থেকে জানার প্রযুক্তিটি আগের তুলনায় সহজ হয়েছে। আগের প্রযুক্তিতে অনেকটা আন্দাজের ওপর ভর করে কাজ করতে হতো। নতুন প্রযুক্তিটি কিছু কিছু ক্ষেত্রে বেশি সম্ভাবনাময় মনে হচ্ছে। অবশ্য তাঁদের গবেষণাকাজ এখনো সম্পূর্ণ হয়নি।
সূত্র: নিউসায়েন্টিস্ট

২২ সেপ্টেম্বর,২০১৫/এমটিনিউজ২৪/আল-আমিন

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে