এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : আলিয়া সালেমের বয়স মাত্র দশ মাস। কিন্তু এ বয়সেই তার ওজন প্রায় ১৯ কিলো। সাধারণত ৬ বছর বয়সের শিশুদের এ ওজন হয়ে থাকে। কিন্তু এ বয়সী শিশুদের মধ্যে আলিয়াই হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ওজনের শিশু।
ভারতের ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দা আলিয়া স্বাভাবিক শিশু হিসেবেই জন্ম নিয়েছিল। জন্মের সময় তার ওজন ছিল মাত্র ৯ পাউন্ড। কিন্তু চার মাস থেকেই ওর ওজন দ্রুত বাড়তে থাকে। আর এখন তার ৬ বছরের শিশুদের মতই বাড়ন্ত ওজন। তার বর্তমান ওজন ১৮ কেজি ৬শ গ্রাম। এ নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন আলেয়ার মা-বাবা। কেননা এই ওজন সমস্যার কারণেই মাত্র দেড় বছর বয়সে মারা গেছে তাদের প্রথম সন্তান।
তার মা শাবানা পারভীন(২৫) বলেন,‘জন্মের কয়েক মাস পর থেকেই আলিয়ার ওজন বাড়তে শুরু করেছে। ফলে কয়েক দিন না যেতেই তার সব পুরনো জামাকাপড় ছোট হয়ে যায়। তাই প্রতি দু সপ্তাহ অন্তর আমাদের আলিয়ার জন্য নতুন জামা কিনতে হচ্ছে।’
এদিকে আর্থিক সঙ্কটের কারণে মেয়েকে ঠিকমত চিকিৎসা দিতে পারছেন না আলেয়ার মা-বাবা। স্থানীয় হাসপাতালের চিকিৎসকরা শিশু আলেয়ার সমস্যা সনাক্ত করতে পারছেন না। কিন্তু আলিয়াকে বড় শহরের দামী হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা করানো ক্ষমতা নেই তার দরিদ্র মা-বাবার।
সম্প্রতি আলিয়াকে দিল্লির ফোর্টিস হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন তার বাবা-মা। সেখানকার পিডায়েট্রিকস বিভাগের প্রধান ডা. কিষান চুগ বেশ কিছু টেস্ট দিয়েছেন। টেস্টের রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর শিশুটির চিকিৎসা শুরু করবেন তিনি। তার ধারণা স্থূলতা কিংবা হরমোন সংক্রান্ত জটিলতার কারণে ওজন সমস্যায় ভুগছে আলিয়া।
এদিকে মেয়ের ওজনের কারণে বেশিরভাগ সমস্যা মোকাবেলা করতে হচ্ছে মা পারভিনকে। ওর বাবা মোহাম্মদ সেলিম(২৮)সারাদিন ব্যস্থ থাকেন টেইলার্স নিয়ে। ফলে ঘর সংসারের তদারকির পাশাপাশি আলিয়াকে একাই সামলান পারভিন। ওজন বেশি হওয়ায় এখনো নিজে নিজে বসতে পারে না আলিয়া।
তাই ওকে কোলে নিতে গিয়ে হাফিয়ে ওঠেন ওর মা। কোলে না নিলে কাঁদতে থাকে মেয়েটি। অতিরিক্ত ওজনের কারণে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতেও কষ্ট হয় তার। তাই রাতেও বেশ কয়েক বার জেগে ওঠে সে।
আলিয়াকে নিয়ে পরিবারটির আর্থিক সঙ্কটও কম নয়। একাধিক বার খাবার দেয়া এবং কয়েক দিন পর পর পোশাক কেনায় বেশ টাকা ব্যয় করতে হয় তাদেরকে। ফলে আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে ধার দেনা লেগেই আছে। আলিয়া ছাড়াও তাদের ৫ বছরের আরো একটি একটি পুত্র সন্তান রয়েছে।
আলিয়ার বাবা সেলিম দর্জির কাজ করেন। তার দৈনিক আয় ৩ ডলার। এ দিয়ে চার জনের সংসার চালানোর পর অসুস্থ মেয়ের পিছনে অতিরিক্ত ব্যয় করাটা বেশ কষ্টকর হয়ে যায়।
তবে ওজন বেশি হওয়া সত্বেও গ্রামে আলিয়া খুব জনপ্রিয়। ওর মা পারভিনের ভাষায়,‘গ্রামের সবাই ওকে ভালোবাসে। আশপাশের বাচ্চারাও ছুটে আসে- ওর সঙ্গে খেলে। কিন্তু খুব কম শিশুরাই ওকে কোলে তুলতে পারে।’
২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/জহির/মো:জই/