এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : চাঁদের পাহাড়ে সত্যিই হিরের খনি আছে কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ থাকতেই পারে, কিন্তু আমাজনের গহিন জঙ্গল যে গভীর রহস্যে মোড়া তা নিয়ে কোরো কোনো সন্দেহ নেই। তামাম দুনিয়ায় আলোড়ন ফেলে দিয়েছে আমাজনের জঙ্গলের একটি রহস্যজনক নদী। আক্ষরিক অর্থেই এক কথায় বলা চলে মৃত্যু ফাঁদ। না, কোনো হিংস্র জলজপ্রাণী নেই। থাকতেও পারে না। কারণ, ওই নদীতে পড়লেই যে কোনো জীব মুহূর্তের মধ্যে গলে যাবে। হাড়েরও হদিস পাওয়া যাবেনা। নদীটিতে পড়া বা নামা তো দুরে থাক কাছাকাছি গেলেই হাড়-মাংস ঝলসে যাওয়ার উপক্রম। তাই জঙ্গলের এই অংশে কোনো জীবজন্তুও বাস করে না। পরিবেশ একেবারে স্তব্ধ। 'চাঁদের পাহাড়'-এর শঙ্করের মতোই সেই নদী আবিষ্কার করলেন আন্দ্রে রুজো নামে এক তরুণ ভূবিজ্ঞানী।
নদীটির দৈর্ঘ্য বড়জোর ৬ কিলোমিটার হবে। পেরুতে আমাজনের জঙ্গলের একেবারে গভীরে এই নদীটি বয়ে চলেছে। জল টগবগ করে ফুটছে। অনবরত। না, কোনো উষ্ণ প্রস্রবণের সঙ্গে গুলিয়ে ফেললে মস্তবড় ভুল করবেন। এই অতি ছোট নদীর পানি থেকে শুধুই ধোঁয়া উঠছে। ওই জলে আঙুল ঠেকালে গলতে এক সেকেন্ডও সময় লাগবে না। গভীর জঙ্গলের উপজাতিরা নদীটিকে দেবতা জ্ঞানে পুজো করেন। এমনকি নদীটির আশেপাশে বা বহুদূরের অঞ্চলেও কোনো সুপ্ত বা জীবন্ত আগ্নেয়গিরি নেই।
ভূবিজ্ঞানী আন্দ্রে রুজো ছোটবেলায় তার দাদা ভাইয়ের মুখে গল্প শুনেছিলেন নদীটির। বৈজ্ঞানিক কৌতুহলেই খোঁজ চালিয়ে সম্প্রতি নিজে গিয়ে দেখে এলেন নদীটি। সেই অভিজ্ঞতার বর্ণনায় আন্দ্রে জানাচ্ছেন, 'তখন আমি খুব ছোট। দাদা ভাইয়ের মুখে নানা রূপকথার গল্প শুনতাম। একবার ডিনারের সময় দাদা ভাই আমায় মায়ানতুইয়াসু নদীটির গল্প বলেন। মেক্সিকো ও পেরুর স্পেনীয় শাসকের সৈন্যরা শেষ ইনকা শাসককে হত্যা করার পর সেনাপতির নেতৃত্বে আমাজনের জঙ্গলে ঢোকে সোনার খোঁজে। কোনো ক্রমে প্রাণ হাতে নিয়ে ফেরার পর সেনাপতি জানায়, জঙ্গলের মানুষখেকো সাপ, বিষাক্ত জল ও ফুটন্ত নদীর অভিজ্ঞতা। ১২ বছর পর আমার এক আন্টির মুখে সেই নদীর গল্প আবার শুনি। তিনি জানান, ওই নদী তিনি দেখেছেন। একজন ভূবিজ্ঞানী হিসেবে ঠিক করে ফেলি, মায়ানতুইয়াসু নদী খুঁজে বের করবই।'
আন্দ্রে আরো বলেন, 'গবেষণার সময় ওই নদীর বিষয়ে, বিভিন্ন অথরিটিকে জিজ্ঞাসা করি। কিন্তু সকলেই বলে, এরকম কোনো নদীর অস্তিত্বই নেই পৃথিবীতে। আমার সহগবেষক, সরকার, বিভিন্ন খনি সংস্থা সকলেই নানা খোঁজ নিয়ে জানিয়ে দেয়, এরকম কোনো নদীই নেই। সকলের বক্তব্য, ফুটন্ত নদী থাকতে গেলে কাছাকাছি আগ্নেয়গিরি থাকতে হয়। তাপের উত্স না থাকলে, পানি গরম হবে কি করে?'
সব মহল থেকে না শুনেই জেদ চেপে যায় আন্দ্রের। তিনি নিজেই আমাজনের গভীর জঙ্গলে পাড়ি দেন ফুটন্ত নদীর খোঁজে। সাফল্য পেয়েছেন। নিজের চোখে দেখলেন সেই মরণফাঁদ। ছবিও তুলেছেন একাধিক। চারিদিক ধোঁয়ায় ভরা এলাকা। ছোট্ট নদীটি ক্রমাগত ফুটছে। আন্দ্রের কথায়, 'নদীর জল একটু ছুঁতেই যেন থার্ড ডিগ্রি লাগল। বুঝলাম, এই নদী সাক্ষাৎ মৃত্যুর ফাঁদ। একটি মরা ব্যাঙকে ঢুবিয়ে দেখলাম, এক সেকেন্ডে সিদ্ধ হয়ে গেল। এই তীব্র তাপের উত্স কি, তা বুঝতে পারছি না। গবেষণা করছি।'
নদীর কাছাকাছি এলাকায় যতেষ্ট গাছ কাটা হচ্ছে। উপজাতিরা চাষের জন্য জমি তৈরি করছে। তাই বিশ্বের বিস্ময় ওই ফুটন্ত নদীকে বাঁচাতে উদ্যোগ নিয়েছেন আন্দ্রে। নইলে অচিরেই লুপ্ত হয়ে যাবে মায়ানতুইয়াসু। রহস্য হয়েই।-টাইমস অফ ইন্ডিয়া
১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/জহির/মো:জই