মঙ্গলবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৯:৩০:৪৬

যে বিষয়টি নির্ভর করে শিশুর ভবিষ্যৎ

যে বিষয়টি নির্ভর করে শিশুর ভবিষ্যৎ

এক্সক্লুসিভ ডেস্ক :  প্রতিটি শিশুই কাদা মাটির মতো।  তাই উপযুক্ত শিক্ষাই নির্ভর করে শিশুর ভবিষ্যৎ।  ওদের ভবিষ্যৎ খারাপের কিনারায় চলে যায় যদি মিথ্যার দিকে ধাবিত হয়।

প্রতিটি ধর্মগ্রন্থে সত্য বলাকে অনেক অনেক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।  মিথ্যা বলাকে সবচেয়ে বড় পাপ বলা হয়েছে।  এমনও বলা হয়, মিথ্যাই সব পাপের শুরু।  দুনিয়ার যত খুন খারাবি, চুরি ডাকাতি, ঘুষ, বাটপারির পেছনে শুরু হয় মিথ্যা দিয়েই।  তাই মিথ্যা না বলা ও সত্য বলার অভ্যাস গডে তুলতে হবে।

সন্তানকে ছোটবেলা থেকে সততা, সত্যবাদিতা শেখানো বাবা-মায়ের দায়িত্বের মধ্যে একটি।  কারণ পরিবার থেকেই শিশুর বেড়ে উঠা, শিশুর অভ্যাস গড়ে উঠা।  ভালো অভ্যাসগুলো ছোটবেলা থেকে শিশুর মাঝে তৈরি করতে না পারলে ছোট ছোট ভুলগুলোই শিশুর পরবর্তী জীবনে বড় কোনো ভুলের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।  মিথ্যার কারণে বড় কোনো অপরাধের শুরু হতে পারে।

তিন থেকে চার বছর বয়সে শিশুরা মিথ্যা বলে।  তবে সেটা যত না মিথ্যা তার থেকে তার মনের কল্পনা বেশি।  আপনার শিশু হয়তো আপনার কাছ থেকে কোনো খেল না আব্দার করছে, আপনি দিতে রাজি না।  তাই সেটা সে আদায় করার জন্য কোনো বন্ধুর উদাহরণ টানলো।  

দেখা গেল সেটা পুরোটাই মিথ্যা।  কাজেই মিথ্যা আর কল্পনার মধ্যে পার্থক্য থাকবে।  তাই বলে মিথ্যা কল্পনাও গ্রহণযোগ্য নয়।  এ থেকেও সে মিথ্যা বলতে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে।

আবার অনেক সময় আপনার মারধরের ভয়ে বা আত্মরক্ষার কৈাশল হিসেবে মিথ্যা বলে থাকে, সেটাও ঠিক নয়।  আপনার চেষ্টায় শিশুরা সত্যবাদী হয়ে উঠবে তা যেমন ঠিক নয় তেমনি আপনি যদি এ সত্য বলা অভ্যাসের দিকে নজর না দেন তাহলে দেখা যাবে, সে অবলীলায় মিথ্যা বলছে।  

কি করে শিশুর মাঝে সততা, সত্যবাদিতার মতো গুণগুলো তৈরি করতে পারেন সে বিষয়ে কিছু উপায় কাজে লাগতে পারেন-

১. সত্য, মিথ্যা এবং কল্পনার পার্থক্য শিশুকে ধরিয়ে দিন।  কাছের মানুষ হিসেবে আপনি খুব সহজেই তা ধরতে পারবেন এবং সুন্দরভাবে তাকে মিথ্যার খারাপ দিক থেকে বিরত রাখতে পারবেন।  সত্য বলায় সাহসী করে তুলুন।  সবসময় সত্য বলার উৎসাহ দিন তা যতই অপ্রিয় হোক না কেন।

২. শিশুকে কখনো সরাসরি এ কথাটি বলবেন না যে, তুমি মিথ্যাবাদী। শিশুদের কিন্তু মান অপমান বোধ অনেক বেশি।  এতে করে সে অপমানিত বোধ করে জেদের বশে বারবার একই ভুল করতে পারে।  তাকে খুব শান্তভাবে আদর করে বুঝিয়ে বলুন, সে যা করছে তা ঠিক করছে না কিংবা তাকে সত্য বলার পরিবেশ তৈরি করে দিন, যাতে সে নির্ভয়ে সত্য বলতে পারে।

৩. যখন আপনি জানতে বা বুঝতে পারেন যে, আপনার সন্তান মিথ্যা কথা বলছে তখন কথা ঘুরিয়ে না বলে সরাসরি কথা বলুন।  এক কথা বারবার জানতে চেয়ে কিংবা শিশু সত্য বলার পরও তাকে বারবার জেরা করলে আপনার সন্তানের উপকারের চেয়ে অপকারই বেশি হবে।

৪. শিশু কেন মিথ্যা বলছে তার কারণ খুঁজে বের করার দায়িত্ব কিন্তু আপনারই।  সে কি কারণে বা কোন ভয়ে মিথ্যা বলছে তা তার কাছ থেকে বন্ধুসুলভ আচরণে জেনে নিতে চেষ্টা করুন।  তাকে অভয় দিন যে, মিথ্যা বলার কারণ বলে দিলে তার কোনো রকম শাস্তি হবে না।  এতে করে আপনিও জেনে নিতে পারবেন কি কারণে আপনার সন্তান মিথ্যা কথা বলছে এবং এ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারবেন।

৫. সত্য বলাকে সব সময়ই ভালো চোখে দেখুন, উৎসাহিত করুন।  এতে শিশু মিথ্যা বলতে আগ্রহী হবে না।  আদর ভালোবাসা দিয়ে সত্য বলার দিকে আকৃষ্ট করা যেতে পারে।  সত্য বলার জন্য তাকে পুরস্কৃত করুন।  এতে সে উৎসাহিত হবে সত্য বলার জন্য।  তবে অবশ্যই মিথ্যা বলার জন্য ভয়ে রাখুন, যাতে সে অন্যায়টা বুঝতে পারে।  

৬. সন্তানকে বুঝিয়ে দিন মিথ্যা কখনো কাউকে কোনো বিপদ থেকে বাঁচাতে পারে না।  বরং বড় কোনো বিপদের দিকে ঠেলে দেয়।  তাই যখনই সুযোগ পান শিশুকে বিভিন্ন কৌশলে ব্যাপারটি বুঝিয়ে দিন।  এ ক্ষেত্রে কাউন্সিলিং খুবই দরকারী।  মিথ্যাকে সে মিথ্যা বলা শিখবে।

৭. মিথ্যা ছোট আর বড় হোক তা মিথ্যাই।  ছোট ভুল ভেবে সন্তানের কোনো রকমের মিথ্যাকে প্রশ্রয় দেবেন না।  এতে সে ভাববে মিথ্যা বলা এমন কোনো দোষের কিছু নয় যে, ভবিষ্যতে আরো বড় মিথ্যা বলতে সাহস পাবে।

৮. যথাসম্ভব সন্তানের সাথে মিথ্যা বলবেন না।  এমন কি তার সামনে অন্যদের ক্ষেত্রেও না।  অনেকে মোবাইলে অবলীলায় মিথ্যা বলে শিশুর সামনে।  তারা ভাবে শিশুরা হয়তো বুঝে না।  সেটা খুবই ভুল ধারনা।  শিশুদের বুঝার ক্ষমতা খুবই তীব্র।  অবহেলা করার কোনো সুযোগ নেই।  তাই সবার আগে নিজেকে পরিশুদ্ধ করে নিন।  সত্য বলার অভ্যাস ও চর্চা কখনই বিফলে যাবে না।  আপনি যদি সন্তানের দিকে এখনই নজর না দিন তবে ভবিষ্যৎ কিন্তু ভালো না।  বর্তমান জামানায় শিশুদের নিয়ে খুব সতর্কতায় থাকলে ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হতে বাধ্য।
২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/জহির/মো:জই/

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে