এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বোঝাপড়া ঠিক রাখতে ভ্রমণের কোনো বিকল্প নেই। পরিবারের সব সদস্য মিলে দল বেঁধে ঘুরতে যাওয়া, হতে পারে সুন্দর সময় কাটানোর একটি উপায়। মানসিক প্রশান্তি তো আসেই।
মন ভালো থাকে, আনন্দে থাকে। কিন্তু ব্যস্ত জীবনে সবসময় পরিবার পরিজন নিয়ে ভ্রমণের সেই সুযোগ হয়ে ওঠে না। তবে ডিসেম্বরের শেষ দিকে কিছুটা সুযোগ পাওয়া যায়। এ সময়ে বেশিরভাগ স্কুল-কলেজে ছুটি থাকে।
ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনার চাপ কম থাকে। আবার ডিসেম্বর শীতের শুরু, আর এ সময়টা ভ্রমণের সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। তাই ডিসেম্বরের ছুটিতে পরিবার নিয়ে ঘুরে আসা যায় মনোরম পাঁচটি দর্শনীয় স্থানে।
কক্সবাজার
সাগরের নীল জলরাশি দেখতে কার না ভালো লাগে। শীতল বাতাস, নীলজল, আশপাশের পাহাড়, পায়ের নিচে চিকচিক করা বালু- এসবই কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্য। সবচেয়ে দীর্ঘ এই সমুদ্র সৈকতের মনোরম দৃশ্য মনে মুহূর্তে প্রশান্তি এনে দেয়।
এখানকার সমুদ্রের পানিতে গোসল, সূর্যাস্তের মনোহারা দৃশ্য দেখেও ভালো লাগবে। কক্সবাজার সৈকত ভ্রমণের শুরুটা হতে পারে লাবনী পয়েন্ট থেকে। লাবনী বিচ ধরে হেঁটে হেঁটে পূর্বদিকে সোজা চলে যাওয়া যায় হিমছড়িরর দিকে। যতোই সামনে এগুবেন ততোই সুন্দর এ সৈকত। শুধু সমুদ্র সৈকতই নয়, কক্সবাজার শহরের বৌদ্ধ মন্দির, বার্মিজ মার্কেট, হিলটপ রেস্টহাউস ইত্যাদি কক্সবাজার ভ্রমণের অন্যতম স্পট।
কক্সবাজার শহর থেকে মাত্র ১২ কিলোমিটার দূরেই রয়েছে পাহাড়ের কোল ঘেঁষে এক সমুদ্র সৈকত- হিমছড়ি। এখানকার সৈকতের চেয়েও আকর্ষণীয় হলো এর ভ্রমণপথ। সৈকত লাগোয়া আকাশছোঁয়া পাহাড় এখানের অন্যতম আকর্ষণ। হিমছড়ির পাহাড়ের হিমশীতল ঝরণাও বেশ আকর্ষণীয়। হিমছড়ি থেকে ৮ কিলোমিটার দূরেই রয়েছে ইনানী সমুদ্র সৈকত। এখানে রয়েছে বিস্তীর্ণ পাথুরে সৈকত। সমুদ্র থেকে ভেসে এসে এখানকার জলাভূমিতে জমা হয়েছে প্রচুর প্রবাল পাথর। এখানে এলে মিল খুঁজে পাওয়া যায় সেন্টমার্টিন সমুদ্র সৈকতের সঙ্গে।
এছাড়া মেরিন ড্রাইভ ঘুরতে পারবেন টুরিস্ট ক্যারাভানে। পরিবার-পরিজন নিয়ে এক পাশে পাহাড়ের সৌন্দর্য এবং আরেক পাশে সাগরের বিশালতার সাথে মেরিন ড্রাইভ ঘোরার অভিজ্ঞতা আপনাকে এনে দিবে স্বর্গীয় সুখ। মেরিন ড্রাইভ ধরে ঘুরতে ঘুরতে মজার সব খাবার খাওয়া এবং সেই সঙ্গে খোলা ছাদে বই নিয়ে সমুদ্রের ঠিক পাশ দিয়ে যাওয়ার অভিজ্ঞতা আপনার মনকে আন্দোলিত করবে।
কুয়াকাটা
দক্ষিণাঞ্চলের ‘সাগর-কন্যা’ খ্যাত কুয়াকাটা ভ্রমণ ও অবকাশ কাটানোর অন্যতম জায়গা। শুধু দেশে নয়, কুয়াকাটার পরিচিতি এখন বিশ্বজুড়ে। বেলাভূমির একই স্থানে দাঁড়িয়ে বারো ঘণ্টার ব্যবধানে সূর্যোদয়-সূর্যাস্তের বিরল মনোরম দৃশ্য দেখার সমুদ্র সৈকত। নজরকাড়া প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কারণে কুয়াকাটার রয়েছে আলাদা সুখ্যাতি।
দেশের সর্বদক্ষিণে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার লতাচাপলী ইউনিয়নের শেষ প্রান্তে সাগরপারের জনপদ কুয়াকাটা। প্রায় ১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ১ কিলোমিটার প্রস্থ সৈকতের সর্বত্র রয়েছে সুন্দরের সমাহার। চোখ ধাঁধানো সবকিছু। রয়েছে সংরক্ষিত বনাঞ্চল, যার মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে অসংখ্য লেক। সৈকত লাগোয়া নারিকেল বীথি। রয়েছে জাতীয় উদ্যানের অধীন ইকোপার্ক ও আন্ধার মানিক মোহনার উল্টোদিকের ফাতরার বিশাল ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল। রয়েছে শুঁটকিপল্লী, লাল কাঁকড়ার চর। অদূরেই রয়েছে পর্যটনপল্লী গঙ্গামতি সৈকত।
কুয়াকাটার অবিচ্ছেদ্য অংশ এখানকার আদি বাসিন্দা রাখাইন সম্প্রদায়। এদের ভিন্ন আদলের বৈচিত্র্যময় জীবনযাত্রা অবলোকনের সুযোগ রয়েছে। চোখে পড়বে এদের তাঁতসহ উল বুনন কার্যক্রম। সুযোগ মেলে অন্যতম সৌন্দর্য ইন্দো-চীনের আদলে রাখাইনদের শ্রীমঙ্গল বৌদ্ধবিহার দর্শনের। এছাড়া কুয়াকাটার অদূরে মিশ্রিপাড়ায় রয়েছে সীমা বৌদ্ধবিহার। এ-বিহারের মধ্যে গৌতম বুদ্ধের ধ্যানমগ্ন ১৩৭ মন ওজনের অষ্টধাতু নির্মিত বিশাল আকৃতির বৌদ্ধমূর্তি শোভা পাচ্ছে। রাখাইনদের দাবি, এশিয়ার বৃহত্তম বৌদ্ধমুর্তি এটি। নিজের অভিজ্ঞতাকে সমৃদ্ধ করতে কুয়াকাটায় ভ্রমণের বিকল্প নেই। প্রাকৃতিক শোভামণ্ডিত দৃশ্যপট অবলোকনের পাশাপাশি দেশের প্রাচীন পুরাকীর্তি বিভিন্ন বৌদ্ধবিহার ও প্রাচীন কুয়া চিজ চোখে দেখার সুযোগ রয়েছে।
সাজেক
সাজেক মানেই মেঘময় এক পৃথিবীর ছবি। এখানে ক্ষণে ক্ষণে প্রকৃতি তার রূপ বদলায়। কখনো তীব্র শীত। আবার মুহূর্তেই বৃষ্টি। এ যেন মেঘের উপত্যকা। সাজেকে উপভোগ করা যায় নীল পাহাড়ের সারি, সফেদ মেঘের খেলা, রুপালি বৃষ্টির রূপ বা কুয়াশা জড়ানো সকাল। পাহাড়ের ওপর কুয়াশার আবরণ, দলবেঁধে কুহেলিকার মিছিল আর মেঘের আনাগোনা আপনাকে মুগ্ধ করবে।
রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলায় অবস্থিত সাজেক, যার আয়তন ৭০২ বর্গমাইল। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এর উচ্চতা ১৮০০ ফুট। এর অবস্থান রাঙ্গামটি জেলায় হলেও খাগড়াছড়ি থেকে এখানে যাতায়াত অনেক সুবিধাজনক। কারণ, খাগড়াছড়ির দিঘীনালা থেকে এর দূরত্ব মাত্র ৪০ কিলোমিটার। তাই ভ্রমণ পিপাসুরা দিঘীনালা থেকেই সাজেক যেতে বেশি পছন্দ করেন।
সাজেকের সর্বোচ্চ চূড়া কংলাক পাহাড়। চূড়ায় উঠতে গিয়ে দেখতে পাবেন মিজোরাম সীমান্তের পাহাড় আর সবুজের মিতালি। মন, প্রাণ, দেহ পুলকিত হবে এক বিশুদ্ধ চিন্তা আর অনুভূতিতে। প্রভাত এবং প্রাতঃবেলায় সূর্যোদয় এবং সন্ধ্যায় সূর্যাস্ত দেখার সুখানুভূতি আপনি সারাজীবন মনে রাখবেন। মনে হতে পারে, জীবনটা যদি এইখানে দাঁড়িয়ে সূর্যাস্ত আর সূর্যোদয় দেখে কাটিয়ে দেওয়া যায়!
জাফলং
সুদৃশ্য পাহাড় চূড়া, স্বচ্ছ জলরাশি আর নানান রঙের নুড়ি পাথরের এক অপূর্ব সমন্বয় সিলেটের জাফলং। নগর সভ্যতার যান্ত্রিক কোলাহল ছেড়ে জীবন এখানে এসে মাথা লুকোয় একটু শান্তির খোঁজে। প্রকৃতির মায়াবী পরশে আনন্দে নেচে ওঠে মন। তাই ভ্রমণ মনকে পরিপূর্ণ করে তুলতে যে কেউ আসতে পারেন পাহাড়, পানি ও পাথরভরা রূপকথার রাজ্য জাফলংয়ে। তাছাড়া এখন যুক্ত হয়েছে নতুন একটি ঝরনা মায়াবী ঝরনা।
প্রকৃতিকন্যা হিসেবে সারা দেশে এক নামে পরিচিত সিলেটের জাফলং। খাসিয়া জৈন্তা পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত জাফলং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি। পিয়াইন নদীর তীরে স্তরে স্তরে বিছানো পাথরের স্তূপ জাফলংকে করেছে আকর্ষণীয়। সীমান্তের ওপারে ভারতীয় পাহাড়-টিলা, ডাউকি পাহাড় থেকে অবিরাম ধারায় প্রবহমান।
জলপ্রপাত, ঝুলন্ত ডাউকি ব্রিজ, পিয়াইন নদীর স্বচ্ছ হিমেল পানি, উঁচু পাহাড়ের গহিন অরণ্য ও প্রকৃতির সুনসান নীরবতা পর্যটকদের দারুণভাবে মোহাবিষ্ট করে। তাই যান্ত্রিক সভ্যতার সব ব্যস্ততা ভুলে গিয়ে কিছুটা সময়ের জন্য হলেও প্রকৃতির কাছে নিজেকে সঁপে দিতে প্রতিদিনই দেশি-বিদেশি হাজারো পর্যটক ছুটে আসেন প্রকৃতিকন্যা জাফলংয়ে। জাফলং থেকে একটু সামনে এগিয়ে গেলেই পাবেন তামাবিল বর্ডার।
শ্রীমঙ্গল
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলা বাংলাদেশের চায়ের রাজধানী হিসেবে পরিচিত। শীতে শ্রীমঙ্গল গিয়ে ঘুরে আসতে পারেন বেশ কয়েকটি স্থানে। শ্রীমঙ্গল শহরটা ছোট, তবে বেশ গোছানো। এই শহরের বাড়ি, মসজিদ, মন্দির, গির্জাসহ সব স্থাপনার মধ্যেই নান্দনিকতার ছাপ আছে। শহরের বেশির ভাগ জায়গাজুড়েই রয়েছে চা-বাগান। এখানে আপনি যেদিকেই তাকাবেন, দেখবেন চায়ের বাগান, যা দেখলে চোখ জুড়িয়ে যাবে। যতদূর চোখ যায় কেবল সবুজের হাতছানি। চা বাগানের সারি সারি টিলা, আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ আর ঘন সবুজ অরণ্যের অপরূপ সৌন্দর্য।
শ্রীমঙ্গলের উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থানের মধ্যে রয়েছে- লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, চা জাদুঘর, টি রিসোর্ট, ডিনস্টন সিমেট্রি, চাকন্যা ভাস্কর্য, নির্মাই শিববাড়ি, চা গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশন, খাসিয়াপুঞ্জি, টিপরা পল্লী, মনিপুরী পাড়া, গারো পল্লী, নীলকণ্ঠ টি কেবিন, বার্নিস টিলা, গলফ কোর্স, পাখি বাড়ি, বাদুর বাড়ি, লালমাটি পাহাড়, রাবার বাগান, আনারস বাগান, মাধবপুর লেক, হাইল হাওড়, বাইক্কা বিল প্রভৃতি।