এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : মানুষের সীমাহীন লোভ এবং আর প্রকৃতির উপর যথেচ্ছ অত্যাচার। তার জেরে মাত্র ৫০ বছর সময়ের মধ্যে শুকিয়ে গেল গোটা আস্ত একটা 'সাগর'।
কাজাখস্তান ও উজবেকিস্তানের মধ্যে ৬৮,০০০ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত মিষ্টি পানির হ্রদ তার বিশালত্বের কারণে এক সময় 'অ্যারাল সাগর' নামে চিহ্নিত হত। বিশ্বের চতুর্থ বিশালতম হ্রদ অ্যারাল সাগরের মাঝে একদা ১,১০০টি দ্বীপ ছিল। হ্রদের বুকে ভেসে বেড়াত অজস্র জাহাজ, প্রমোদতরী ও মাছ ধরার নৌকা। তবে এ সবই এখন ইতিহাস। বর্তমানে সেই বিশাল জলাধারের স্মৃতি বয়ে বেড়াচ্ছে ছোট ছোট কয়েকটি জলাশয়ের সমষ্টি।
নথি বলছে, ষাটের দশক থেকেই অ্যারাল সাগর শুকোতে শুরু করে। প্রাকৃতিক কোনও কারণে নয়, তত্কালীন সোভিয়েত রাশিয়ার রাষ্ট্রপ্রধান জোসেফ স্তালিনের সেচ নীতির সুবাদেই অবক্ষয়ের শুরু। সেই সময় কৃষিকাজে জলের জোগান দিতে অ্যারাল সাগরের উত্স একাধিক নদীর উপর বাঁধ তৈরি করে সোভিয়েত প্রশাসন। এর জেরে হ্রদে জলের জোগান কমতে থাকে। এছাড়া জলাশয়টি জঞ্জালের আড়ত্ হিসেবেও ব্যবহার হতে শুরু হয়। ফলে মাত্র ৩০ বছরের মধ্যে হ্রদ শুকিয়ে গিয়ে সেখানে রুক্ষ মরুভূমি জন্ম নেয়।
মূল হ্রদটি শুকিয়ে প্রথম অবস্থায় চারটি ছোট হ্রদে পরিণত হয়। ২০০৯ সালে দক্ষিণ-পূর্ব অংশের জলাধারটি সম্পূর্ণ শুকিয়ে যায় এবং ২০১৪ সালে নাসা-র উপগ্রহ চিত্র থেকে জানা গিয়েছে, অ্যারাল সাগরের পূর্ব প্রান্তটিও শেষ পর্যন্ত উধাও হয়ে গিয়েছে।
এত অল্প সময়ের মধ্যে জলাধার শুকিয়ে যাওয়ায় আচমকা প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্টের পাশাপাশি তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে এই অঞ্চলের মানুষের জীবন যাপনে। একদা হ্রদের তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দারা মূলত মত্স্যজীবী ছিলেন। কয়েক প্রজন্মের পর তাঁদের সামনে হঠাতই পেশাগত সমস্যা তৈরি হয়েছে।
অ্যারাল সাগরের এই করুণ পরিণতি নিয়ে তোলপাড় গোটা বিশ্ব। কিন্তু এখনও পর্যন্ত তার অতীত কলেবর ফিরিয়ে দিতে কোনও সদর্থক পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। তাইতো সেই একসময়ের বিশালায়তন সাগরটি এখন মরুভূমি।
২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/জহির/মো:জই/