বুধবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬, ০৪:১৫:২০

৪০০ বর্গমিটারে বিস্তৃত ভূতের শহর

৪০০ বর্গমিটারে বিস্তৃত ভূতের শহর

এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : ভিয়েতনামে ভূতের শহর। হ্যাঁ, এ শহরটিতেই মৃতরা জীবিতদের চেয়ে বেশি ঐশ্বর্যশালী হয়ে ঘোরাফেরা করে বলে বিশ্বাস করা হয়। তাই হুয়া নামের শহরটিকে বলা হয় সিটি অব ঘোস্ট বা ভূতের শহর। এটি ভিয়েতনামের প্রাচীন রাজধানী। এখন এটি মাছ শিকারের ছোট্ট শহর হিসেবে পরিচিত।

শহরটি ইউনেস্কোর পর্যটন তালিকায় রয়েছে। রয়েছে ভিয়েতনামের প্রাচীন সম্রাটদের সমাধিক্ষেত্র। এগুলো চমৎকার সজ্জার। একবার চোখ পড়লে পর্যটকরা থমকে দাঁড়ান। কাছের অ্যান ব্যাং গ্রামের জেলেরা এ সমাধিক্ষেত্রগুলোর রীতিকে নিয়ে এসেছেন একবিংশ শতাব্দী পর্যন্ত।

যে দেশে মাথাপিছু আয় দুই হাজার ডলার, সেখানে আত্মীয়স্বজন মারা গেলে গ্রামের মানুষ তাকে সমাহিত করতে খরচ করে ৭০ হাজার ডলার পর্যন্ত। ভিয়েতনাম রাষ্ট্রীয়ভাবে নাস্তিক্যবাদে বিশ্বাসী। এখানে কনফুসিয়াস ও বৌদ্ধদের প্রভাব রয়েছে গভীরে। আবার কিছু মানুষ পূর্বসূরিদের পূজা করেন গুরুত্বের সঙ্গে।

তবে এসব চর্চাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন অ্যান ব্যাং গ্রামের মানুষরা। গ্রামের জেলে ড্যাং থিয়েন গর্বের সঙ্গে বললেন, আমাদের সমাধিক্ষেত্র অদ্বিতীয়। তিনি সাংবাদিকদের ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখান তাদের পারিবারিক সমাধিক্ষেত্র, যেটা ৪০০ বর্গমিটারে বিস্তৃত।

তিনি বললেন, পূর্বসূরিদের যাতে সম্মান জানাতে পারে সে জন্য ছেলেমেয়েদের জন্য এটি করা হয়েছে। তাদের ধারণা, সমাধিক্ষেত্রগুলোকে যতটা ভালোভাবে দেখাশোনা করা যাবে, পরিবারের ততই মঙ্গল ঘটবে। চির দিন এ ধারাটি অব্যাহত থাকবে। ড্যাং থিয়েনের পরিবারের এই সমাধিক্ষেত্রটি নতুন করে সংস্কার করা হয় ১৯৯৪ সালে।

ওই সময়ে স্থানীয়রা প্রথমবার শতাব্দীর পুরনো সমাধিক্ষেত্রগুলো সংস্কারে অর্থ খরচ করা শুরু করে। সমাধিক্ষেত্রগুলো ৬ মিটার উঁচু। তাতে রয়েছে নানা রঙের ড্রাগন। পিলারগুলোতে এমন সব রঙিন ড্রাগন আঁকা রয়েছে। তবে বর্তমানে পিলারগুলোর উচ্চতা অনেকটা কমিয়ে আনা হয়েছে।

আবার কোনোটি ১০ মিটার পর্যন্ত উঁচু করা হয়েছে। নতুন সমাধিক্ষেত্রের কোনোটি ২৫০ হেক্টর জায়গাজুড়ে। ভিয়েতনামে ড্রাগন আঁকা একটি জনপ্রিয় রীতি হলেও এখন কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা যায় হিন্দুদের দেব-দেবীর ছবি আঁকা হচ্ছে সমাধিক্ষেত্রের গায়ে। রয়েছে খ্রিষ্টানদের বিভিন্ন প্রতীক। কিছু সমাধিক্ষেত্র রয়েছে ফাঁকা।

এগুলো ওই গ্রামের মানুষ নির্মাণ করে রেখেছেন তাদেরকে সমাহিত করার জন্য। এর মধ্যে একটির নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে ২০০৫ সালে। অপেক্ষায় রাখা হয়েছে কবে এর মালিক মারা যাবেন তারপরে তাকে এতে সমাহিত করা হবে। স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তা হোয়াং খাংয়ের মতে, এসব বিলাসবহুল সমাধিক্ষেত্র তৈরির পিছনে রয়েছেন গ্রামের ওইসব সদস্য, যারা বিদেশে অবস্থান করেন।

বিশেষ করে যারা যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করেন। সেখানে তারা ভালো টাকা কামানোর পর তা দেশে পাঠান। সেই টাকা দিয়ে সমাধিক্ষেত্র, উপাসনালয় বানানো হয়। রক্তাক্ত যুদ্ধের সময় ভিয়েতনামের কমিউনিস্ট নর্থ ও যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনপুষ্ট দক্ষিণ ভাগ যখন বিভক্ত করেছিল, সেই বিভক্তি রেখার খুব কাছের শহর হুয়াই।

সিয়াগনের পতনের পরে ও ১৯৭৫ সালের পুনরেকত্রীকরণের পরে হাজার হাজার ভিয়েতনামি কমিউনিস্ট অর্থডক্সির কবল থেকে পালিয়ে যান। তারা দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পেতে, উন্নত জীবনের আশায় এমন কাজ করেন। সমুদ্রপথে পালাতে গিয়ে এমন অনেক মানুষ সমুদ্রেই মারা যান। অন্যরা হংকংয়ে পাড়ি জমাতে সক্ষম হন।

তবে অল্পসংখ্যক মানুষ অস্ট্রেলিয়া বা যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছাতে সক্ষম হন। ওই সব আত্মীয়রাই এখন অ্যান ব্যাংয়ে অর্থ পাঠান। তাদের অর্থ দিয়ে চলে প্রতিযোগিতামূলক সমাধিক্ষেত্র বানানো। হোয়াং খাং বলেন, এভাবেই প্রতি বছর উচ্চকাঙ্ক্ষী লক্ষ্য নিয়ে সমাধিক্ষেত্রগুলোকে উচ্চতায় বাড়ানো হচ্ছে, বিস্তৃত করা হচ্ছে। স্থানীয় রীতি অনুযায়ী যদি সমাধিক্ষেত্রের উচ্চতা বেশি হয় তাহলে পূর্বসূরি বেশি দৃষ্টিগোচরে আসেন।

স্থানীয় এক কর্মকর্তা হোয়াং ডিনহ সুয়ান থিনহ বলেন, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এত বিশাল সমাধিক্ষেত্র তৈরি উৎসাহিত করে না। এ জন্য স্থানীয় কর্তৃপক্ষ অনেক প্রচারণা চালিয়েছে। লোকজনকে এমন চর্চা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে। কিন্তু কেউ কথা শোনেনি। সুয়ান থিনহের মতে, এভাবে অর্থ খরচ পানিতে টাকা ঢালা ছাড়া আর কিছুই নয়। এম জমিন
২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে