এক্সক্লূসিভ ডেস্ক: পরিবারের পছন্দের পাত্রকে ছেড়ে প্রেমিককে বিয়ে করেছেন তরুণী। মেয়ের এই আচরণে ক্ষুব্ধ বাবা তাই ‘ঘটা’ করে মেয়ের শ্রাদ্ধ করলেন বাবা। ভ্যালেন্টাইন্স ডে-তে এই ঘটনা ঘটেছে হাওড়ার জগাছায়।
প্রেমিক সুপ্রতিষ্ঠিত নন। ভাল ব্যবসা বা বড় চাকরি, কিছুই নেই। বংশমর্যাদা ও অর্থবলেও পিছিয়ে। এই যুক্তিতে মেয়ের প্রেমিককে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন পরিবারের সদস্যরা। তড়িঘড়ি পাত্র দেখে মেয়ের বিয়েও ঠিক করে ফেলেছিলেন তারা। বিয়ের কেনাকাটা থেকে নিমন্ত্রণ, হয়ে গিয়েছিল সবই। কিন্তু বিয়ের ক’দিন আগে সেই তরুণী বাড়ি থেকে পালিয়ে প্রেমিককে বিয়ে করেন।
তরুণীর বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার দিনেই তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন বাবা-মা। ১২ দিন পরে মেয়ের শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের আয়োজনও করলেন তারা। ঘটনাচক্রে সেটি পড়ল শনিবার, ভালবাসার দিন ভ্যালেন্টাইন্স ডে-তে।
এ দিন অশৌচান্তের সমস্ত নিয়ম মেনে পরিবারের সমস্ত পুরুষের মাথা মুণ্ডন করা হয়। রীতিমতো পুরোহিত ডেকে জীবিত তরুণীর শ্রাদ্ধানুষ্ঠান হয়। এমনকি, সাদা কাপড়ের প্যান্ডেল তৈরি করে আত্মীয়দের খাওয়াদাওয়ারও ব্যবস্থা করেন বাবা-মা।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, এলাকার বাসিন্দা বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের ব্যবসায়ী সুশান্ত কানুর একমাত্র মেয়ে জয়ন্তী কানুর সঙ্গে ভালবাসার সম্পর্ক হয় স্থানীয় ধাড়সার বাসিন্দা রাজু সরকারের। রাজু একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মী।
পুলিশ জানায়, সম্প্রতি তাদের সম্পর্কের বিষয়টি জানাজানি হতে বেঁকে বসেন জয়ন্তীর পরিজনেরা। তার অমতেই বিয়ে ঠিক করে ফেলেন লিলুয়ার এক যুবকের সঙ্গে। আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি বিয়ে ঠিক হয় তাদের। সেই মতো বিয়ের কেনাকাটা ও নিমন্ত্রণও সেরে ফেলে ওই তরুণীর পরিবার। কিন্তু গত ৩ তারিখ ভোরবেলা নিজের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সঙ্গে নিয়ে বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে যান জয়ন্তী। গিয়ে ওঠেন রাজুর বাড়িতে। রাজুর সঙ্গে তাঁর বিয়েও হয়ে যায়।
পুলিশ জানায়, এ খবর জানতে পেরে ওই তরুণীর বাবা জাগাছা থানায় তাঁর নাবালিকা মেয়েকে ফুঁসলিয়ে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগ পেয়ে পুলিশও তদন্তে যায় তরুণীর শ্বশুরবাড়িতে। কিন্তু সেখানে ওই তরুণী নিজের জন্মের সার্টিফিকেট দেখিয়ে জানান, দু’দিন আগেই তাঁর বয়স আঠেরো পেরিয়েছে। এর পরে পুলিশের আর কিছু করার থাকে না।
শনিবার জগাছার গভর্নমেন্ট প্রেসের কাছে ওই তরুণীর বাড়ির সামনে গিয়ে দেখা যায়, সামনের মাঠে শ্রাদ্ধবাড়ির মতো প্যান্ডেল হয়েছে। লোকজন খাওয়াদাওয়া করছেন। সব কিছু তদারকি করছেন মেয়ের বাবা সুশান্তবাবু ও কাকা প্রশান্ত কানু। তাঁদের দু’জনেরই মাথা সদ্য মুণ্ডন করা হয়েছে। সুশান্তবাবু বলেন, ‘ও আমাদের মানসন্মান কিছুই রাখেনি। অনেক কষ্ট দিয়েছে। তাই আমার কাছে মেয়ে মৃত। এ জন্যই শ্রাদ্ধ করছি।’
২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/জহির/মো:জই/