এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : শুনলে অভাক হবেন যে বিশ্বে এমন একটি স্থান আছে, যেখানে দরজা আছে, কিন্তু দরজা আটকে রাখার কোন কপাট নেই। রাতের বেলায় চোরের ভয়? একেবারেই না। কেননা, চুরি করতে গেলে শনি দেবীর শাস্তির খড়গের মুখে পড়বে চোর। মনের গভীরে শনি দেবীর প্রতি এমনই দৃঢ়বিশ্বাস ওই গ্রামের বাসিন্দাদের।
সে বিশ্বাস থেকেই কিনা, কেউই নিজেদের ঘরের দরজায় কোন কপাট রাখার প্রয়োজন বোধ করেননি। ঘরের বিষয় না হয় গেল। তাই বলে ব্যাংকের দরজায়ও তালা নেই? আজকের দুনিয়ায় এ যেন চিন্তা করাও অসম্ভব। তবে অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় শনি শিংনাপুর গ্রামের গ্রামবাসীরা। তাদের গোটা গ্রামটিই ‘অরক্ষিত’।
এমনই একটি গ্রামের খবর প্রকাশ করেছে বার্তা সংস্থা এএফপি। বর্তমানের সভ্য সমাজে অকল্পনীয় হলেও, গ্রামের মানুষরা টাকা-পয়সা, মূল্যবান দ্রব্য ও সামগ্রী ঘরে রেখেই নিশ্চিন্তে বাইরের কাজে যান গ্রামের মানুষরা। আজ থেকে নয়, বহুকাল আগে থেকেই তাদের এমন বিশ্বাস। এ নিয়ে তারা গর্ববোধও করেন। গ্রামের এক বাসিন্দা জানান, বহু বছর আগে শনি দেবী স্বপ্নে দেখা দেন গ্রামবাসীদের।
তখন তিনি বলেন যে, তিনিই তাদের সবকিছু রক্ষা করবেন, অন্য কিছুর প্রয়োজন নেই। এরপর থেকেই গ্রামের মানুষ কপাটবিহীন দরজা ব্যবহার করেন। যদি কেউ চুরি করেই বসে, তাহলে কী করবেন শনি দেবী? এব্যাপারে ওই গ্রামের বাসিন্দা ও স্থানীয় এক কারখানার শ্রমিক বলেন, রাতের অন্ধকারে কারো ঘরে যদি চোর ঢুকে চুরি করে, তাহলে দেবী ওই চোরকে আবার সে বাড়িতে ফিরিয়ে নেবেন।
তবে কয়েকজন বাসিন্দা জানান, জন্তু-জানোয়ারের ভয়ে তারা মাঝেমধ্যে ঘরের কপাট একটু চাপিয়ে রাখেন। প্রায় তিনশ’ বছর আগে ওই গ্রামে একবার বন্যা হয়েছিল। সে সময় শনি দেবীর মূর্তি তৈরি করা হয় গ্রামে। তখন থেকে দেবীকে পূজা করে আসছে ওই গ্রামের বাসিন্দারা।
এই মূর্তির ট্রাস্টি ছায়ারাম বলেন, সবাই জানে, সিংনাপুরের গ্রামের ঘরে দরজা থাকে না। এখানে গাছ আছে, তবে ছায়া নেই। দেবী আছেন, কিন্তু তার মন্দির নেই। মজার বিষয় হচ্ছে, গ্রামে অবস্থিত সরকারি ব্যাংক ইউসিও্থর কাঁচের দরজাতেও লাগানো হয় না কোন তালা।
ইউসিও’র কর্মকর্তা নগেন্দ্র শেহওয়াত জানান, তালা না লাগালেও তাদের কোন সমস্যায় পড়তে হয় না। এ গ্রামের ফুল আবার বেশ জনপ্রিয়। এখান থেকে ফুল সরবরাহ করা হয় মহারাষ্ট্রজুড়ে। তবে সত্যিই কি এখানে কোন চুরির ঘটনা ঘটে না? স্থানীয় প্রশাসনের বক্তব্য গ্রামবাসীদের বিশ্বাসকেই সমর্থন দেয়।
প্রশাসনিক সূত্র বলছে, এ গ্রামে চুরি হয় খুবই কম। ২০১০ সালে একবার এক পর্যটক অভিযোগ করেছিলেন তার গাড়ি থেকে ৩৫ হাজার রুপি চুরি হয়েছে। তবে এ ঘটনা গ্রামের বাইরে ঘটেছে। এখানে ডাকাতিও হয় না। গ্রামবাসীদের ভাষায়, এ ঐতিহ্য অব্যাহত থাকবে। কেননা, স্বয়ং শনি দেবীই যে তাদের অভিভাবক!
২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এস.এ.সুমন/একে