এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : রোটর লাগানো চার পাখার খুদে হেলিকপ্টার। ‘ল্যাম্পশেড’ একটি শান্ত-শিষ্ট বস্তু, যা বসবার ঘরের এককোণে দাঁড়ানো ফ্লোর ল্যাম্পের বাতিটিকে ঢেকে রাখে৷ সেই ল্যাম্পশেডেই আবার কোয়াড্রোকপ্টার লাগিয়ে অন্যান্য ল্যাম্পশেডদের সঙ্গে তাকে ব্যালে নাচানো যায়৷
কোয়াড্রোকপ্টার হলো একটির বদলে চারটি রোটর লাগানো খুদে হেলিকপ্টার, এক ধরনের ড্রোন৷ কম্পিউটারের সঙ্গে যুক্ত করে সেই ড্রোন-কে দিয়ে ব্যাডমিন্টন পর্যন্ত খেলানো যায় : যেন কোনো ফ্যান্টাসি ফিল্মের দৃশ্য!
দেখলে মনে হবে স্পেশাল এফেক্ট কিন্তু আসলে বাস্তব৷ ল্যাম্পশেডগুলো উড়ছে কোয়াড্রোকপ্টারের কল্যাণে৷ এগুলো প্রোগ্রাম করা হয়েছে জুরিখের ফেডারাল ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজিতে৷
ইটিএইচ জুরিখ-এর রাফায়েলো দান্দ্রেয়া বলেন, কোনো মানুষের পক্ষে শুধু রিমোট কন্ট্রোল দিয়ে ল্যাম্পশেডগুলোকে চালানো সম্ভব নয়, আমরা এই ভিডিওতে যা করেছি৷
তিনি বলেন, আমরা যে কোঅর্ডিনেটেড অটোনোমাস ইনফ্রাস্ট্রাকচার সৃষ্টি করেছি, একমাত্র সেই প্রণালী দিয়ে এই ল্যাম্পশেডগুলোকে এভাবে চালানো সম্ভব৷তারা যেভাবে ফর্মেশন ফ্লাইং করছে, তারা যেভাবে মূল শিল্পীর সঙ্গে ইন্টারঅ্যাক্ট করছে৷ এটা সত্যিই একটা নতুন দিগন্ত৷
উড়ে বেড়ানো ল্যাম্পশেডগুলোর রহস্য হলো, সেগুলোর মধ্যে একটি করে কোয়াড্রোকপ্টার লুকনো আছে৷ক্যানাডার ‘সির্ক দু সোলেই' নামধারী সার্কাস গোষ্ঠীর সহযোগিতায় বিজ্ঞানীরা এ বিশেষ কোরিওগ্রাফি সৃষ্টি করেছেন, ল্যাম্পশেডদের ‘নাচের' অধিকাংশ আগে থেকে প্রোগ্রাম করা আছে৷
দান্দ্রেয়া বলেন, আমরা প্রথমে ভেবেছিলাম, কোয়াড্রোকপ্টারগুলোর ওপর আলো বসালে বেশ ভালো দেখাবে৷ তারপর আমাদের এক সহকর্মী প্রায় ঠাট্টা করেই বললেন, ল্যাম্পশেড লাগালে কেমন হয়? শুনে আমি চমকে গেলাম! দাঁড়াও, কী বললে? ল্যাম্পশেড? সেটা তো পরীক্ষা করে দেখা যায়! যদি আমরা বেশ কয়েকটা ল্যাম্পশেডকে ওড়াতে পারি...
ল্যাম্পশেডদের নাচের কোরিওগ্রাফি কম্পিউটারে প্রোগ্রাম করতে দু'সপ্তাহ সময় লেগে গেছে৷ একটা বিশেষ ঘরে তার রিহার্সাল হয়৷ বহু মুভমেন্ট আগে থেকেই প্রোগ্রাম করা ছিল৷
কিন্তু অ্যালগোরিদম কোয়াড্রোকপ্টারগুলোকে নিজে থেকে ভাববার সুযোগ দেয়, যেমন কোয়াড্রোকপ্টারগুলো পরস্পরের সঙ্গে ধাক্কা এড়িয়ে যেতে পারে৷ ইনফ্রারেড ক্যামেরা দিয়ে কম্পিউটার কোয়াড্রোকপ্টারগুলোর অবস্থান আন্দাজ করতে পারে।
ড্রোনগুলো আবার ওয়াইফাই-এর মাধ্যমে পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত৷ একজন বিজ্ঞানী কম্পিউটারে গোটা প্রণালীটির ওপর নজর রাখেন৷ ইটিএইচ জুরিখ-এর ভেরিটি স্টুডিওস, তার কর্মী মার্কুস হেন বলেন, আসল চ্যালেঞ্জটা হলো সব ক'টা ড্রোন অর্থাৎ কোয়াড্রোকপ্টারকে একসঙ্গে, একই সময়ে কন্ট্রোল করা৷
কোয়াড্রোকপ্টারগুলো যখন নড়াচড়া করে, তখন কম্পিউটার তাদের নতুন ট্র্যাজেক্টরি অর্থাৎ উড়াল পথ প্ল্যান করতে থাকে, যাতে তারা পরস্পরের সঙ্গে ধাক্কা না খায়৷
গবেষণার কোনো অন্ত নেই, সীমা নেই৷ বিজ্ঞানীরা কোয়াড্রোকপ্টারের জন্য নিত্যনতুন প্রয়োগ খুঁজে বের করেন৷ একটি কোয়াড্রোকপ্টারের সাথে ব্যাডমিন্টন পর্যন্তা খেলা যায়! আবার কোয়াড্রোকপ্টাররা মানুষ ছাড়াই পরস্পরের সঙ্গেও খেলতে পারে৷ সে কাহিনী শোনালেন রাফায়েলো দান্দ্রেয়া।
তিনি বলেন, ‘আমরা ভেবেছিলাম, এমন একটা সিস্টেম কি ডিজাইন করা চলে না, যেখানে উড়ন্ত যানগুলো নড়বে-চড়বে, একটা বল ইন্টারসেপ্ট করে সেটিকে আবার ফেরত পাঠাবে, এভাবেই দু'টি উড়ন্ত ব্যাডমিন্টন ব়্যাকেটের মধ্যে ব়্যালি চলবে?
এ ধরনের কিছু এর আগে করা হয়নি বলে জানান তিনি৷ আমাদের নীতি হলো, শক্ত কিছু একটা নাও৷ দেখো সেটার সমাধান করতে পারো কিনা৷ এভাবেই গবেষণা এগোয়৷সূত্র : ডয়চে ভেলে
২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এস.এ.সুমন/একে