জাহিদুর রহমান, ঝিনাইদহে থেকে: ঝিনাইদহে মানসিক ভারসাম্যহীন বলে এক যুবককে তার পরিবারের সদস্যরাই বাড়ির বাইরে শিকল দিয়ে বেঁধে রেখেছেন। তিন মাস ধরে বাড়ির পাশের এক সেতুর নিচে বাঁধা অবস্থায় রয়েছেন তিনি। ওই যুবকের নাম জিয়াউল করিম চৌধুরী (৩৭)। ঝিনাইদহ শহরে নবগঙ্গা নদীর ওপর আরাপপুর সেতুর নিচেই এখন তার বসবাস।
বাড়ি থেকে প্রায় ৫০ গজ দূরে এ সেতু। বাড়ি থেকে খাবার দিয়ে যান পরিবারের সদস্যরা। রাতে তীব্র শীতে জড়সড় হয়ে ঘুমিয়ে থাকেন। প্রাকৃতিক কাজ সারতে হলে বাড়ির লোকজনকে ডাকতে হয়। তখন তারা শিকল লম্বা করে দেন। জিয়াউলের বন্ধু মাহফুজ আহম্মেদ জানান, তিনি ও জিয়াউল স্কুল ও কলেজে একসঙ্গে পড়েছেন। জিয়াউল এত অসুস্থ নন যে তাকে বেঁধে রাখতে হবে।
চিকিৎসা করালে ভালো হয়ে যাবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। তবে জিয়াউলের প্রতিবেশীরা এ বিষয়ে তেমন কিছু জানাতে পারেননি। ঝিনাইদহ শহরের আরাপপুর বাসস্ট্যান্ডের অদূরে আরাপপুর সেতু। এমটিনিউজ২৪-এর এ প্রতিবেদক সরেজমিন ঘুরে দেখেছেন, সেতুর নিচে একটি চৌকি পেতে শুয়ে আছেন জিয়াউল।
প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপচারিতায় জিয়াউল সব প্রশ্নের উত্তর দেন স্বাভাবিকভাবেই। পরিবার সূত্রে জানা গেছে, জিয়াউলের বাবা আজিজুল হক চৌধুরী বাংলাদেশ রেলওয়েতে চাকরি করতেন। জিয়াউলের এক ভাই ও এক বোন রয়েছে। জিয়াউল ঝিনাইদহ কলেজ থেকে ২০০০ সালে স্নাতক পাস করেন।
এরপর চাকরি নিয়ে বাড়ির বাইরে চলে যান। ২০০১ সালে চাকরি ছেড়ে ফিরে আসেন বাড়িতে। জিয়াউলের বড় ভাই রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, মাদকাসক্ত হওয়ার কারণে জিয়াউলের এ সমস্যা। প্রথমদিকে তার মাথায় অল্প সমস্যা দেখা দেয়। ধীরে ধীরে তা প্রকট হয়। একপর্যায়ে তারা ডাক্তার দেখাতে শুরু করেন। বিভিন্ন স্থানে নিয়ে গেছেন।
পাবনা মানসিক হাসপাতালেও নিয়ে গেছেন। কিন্তু ভালো করা সম্ভব হয়নি। কিছুদিন ধরে তাকে নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছিল না। বাড়িতে নানা জিনিস ভাঙচুর করতেন। যে কারণে তিন মাস ধরে তাকে এভাবে বেঁধে রাখতে হয়েছে। তবে জিয়াউল বলেন, কলেজে পড়ার সময় কৌতূহলবশত মাঝে মধ্যে মাদক সেবন করলেও কখনো আসক্ত ছিলেন না।
২০০১ সালে চাকরি ছেড়ে বাসায় আসার পরই পরিবারের সদস্যরা তার মাথায় সমস্যার কথা বলে নানাভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে থাকেন।জিয়াউল করিমের মা বেগম রাবেয়া চৌধুরী জানান, তার ছেলের মাথায় সমস্যা ছিল। পাবনা থেকে চিকিৎসা করিয়ে আনার পর ভালো হয়ে গেছে। তার পরও বাঁধা কেন—প্রশ্ন করলে তিনি এড়িয়ে যান।
এ ব্যাপারে প্রশ্ন উঠেছে, আসলেই কি জিয়াউল ভারসাম্যহীন? জিয়াউল বলেন, সেতুর নিচে থাকতে তার খুব কষ্ট হয়। তিনি বলেন, ‘তারপরও আমার কিছুই করার নেই, এখানেই থাকতে হচ্ছে। দীর্ঘদিন এখানে বাঁধা থাকায় প্রতিবেশীরা সবাই আমাকে ‘চেইনম্যান’ বলে ডাকতে শুরু করেছেন।’
২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/জহির/মো:জই/