মঙ্গলবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ১১:২৪:১৩

পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন সমাজ

পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন সমাজ

এক্সক্লুসিভ ডেস্ক: পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন সমাজটি গড়ে উঠেছিল প্রায় বিশ কোটি বছর আগে। হয়তো অনেকেই ভাবছেন প্রথম সমাজটি আপনারই মহাদেশের কোথাও গড়ে উঠেছিল। কিন্তু গবেষণায় জানা যায়, মানবপ্রজাতি জন্মেরও বহু আগেই গড়ে উঠেছিল প্রথম সমাজ কাঠামো। মানুষই যদি সৃষ্টি না হয় তাহলে প্রথম সমাজ গঠন করলো কারা এই প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। হ্যা, পৃথিবীতে প্রথম সমাজ গঠন করেছিল পিঁপড়ারা।
 

পিঁপড়ারাই প্রথম সামাজিক প্রাণী যারা নিজেদের প্রয়োজনেই সমাজবদ্ধ হতে শিখেছিল। আর এই সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে তারা পরিবর্তন করেছিল তাদের আচরণ এবং পৃথক পৃথক কাজের ভিত্তিতে বিভক্ত করেছিল নিজেদের। এর আগে আরেক গবেষণায় প্রথম সমাজ গঠনের ইঙ্গিত দেয়া হয়েছিল উইপোকা শ্রেনির দিকে। কিন্তু পরবর্তীতে জানা যায়, উইপোকারও আগে সমাজ সৃষ্টি করেছিল পিঁপড়ারা। বর্তমানে পৃথিবীতে প্রায় তিন হাজার উইপোকা শ্রেনির পতঙ্গ বসবাস করছে। এবং এরা সবাই নিজেদের কলোনি ও সমাজ সৃষ্টি করেই বসবাস করে।
 

কিন্তু প্রশ্ন হলো, এরা কিভাবে নিজেদের সমস্যাগুলোর মোকাবেলা করে এবং সংঘর্ষ মোকাবেলা করতে তারা শিখলোই বা কিভাবে। এই উত্তর পাওয়ার জন্য বিজ্ঞানীরা কিছু উইপোকা শ্রেনির পতঙ্গকে পরীক্ষাগারে কৃত্তিমভাবে ভয় দেখিয়ে দেখার চেষ্টা করেন যে তারা কি প্রতিক্রিয়া দেখায়। লুজিয়ানা স্টেট ইউনিভার্সিটি অ্যাগরিকালচারাল সেন্টারের পতঙ্গবিশারদ কাই ওয়াং এই পরীক্ষার জন্য শতাধিক শ্রমিক ও যোদ্ধা পতঙ্গকে বনাঞ্চল থেকে পরীক্ষাগারে নিয়ে আসেন। এরপর তাদের একটি নির্দিষ্ট পাত্রে রাখা হয়। দেখা যায়, ওই পাত্রে তাদের রাখার পর তারা দ্রুত ছোটাছুটি করতে শুরু করে নতুন পরিবেশের মুখোমুখি হয়ে।

 

পরিবেশের সঙ্গে খাপ খেয়ে নেয়ার কিছু সময় পরই বিজ্ঞানীরা শুরু করলেন ওই পতঙ্গদের বিরক্ত করা। প্রায় বিশবার বিভিন্নভাবে তাদের ভয় দেখানো হয় এবং প্রতিবারই নতুন নতুন পতঙ্গকে ব্যবহার করা হয়। এসময় দেখা যায়, শ্রমিক শ্রেনির পতঙ্গরা একটি নির্দিষ্ট লাইন ধরে পাত্রটির কিনারে চলে যাচ্ছে, অপরদিকে যোদ্ধা পতঙ্গরা পাত্রটির মাঝে এসে নিজেদের চোয়াল দিয়ে পাত্রে আঘাত করার চেষ্টা করছে। শ্রমিক এবং যোদ্ধা দুই শ্রেনির পতঙ্গেরই বিপদ সম্পর্কে আগাম ধারণা পাওয়ার ক্ষমতা ছিল। বিরক্ত করার পরবর্তী আধা ঘণ্টার মধ্যে সকল পতঙ্গরাই এক হয়ে যায় অদ্ভুতভাবে।
 

 

এই পরীক্ষার ফলে বিজ্ঞানীরা উইপোকা শ্রেনির পতঙ্গদের মাছে কিছু সাধারণ ঐক্য ধরতে পারেন। পতঙ্গদলের একটি ক্ষুদ্র অংশও কিভাবে বিপর্যয়ের মুখে অন্য দলের সঙ্গে এক হয়ে যায় তা এই পরীক্ষার ফলে জানা সহজ হয়ে যায়। পিঁপড়াদের উপর চালিত পরীক্ষায় আরও একটি বিষয় স্পষ্ট হয়ে যায় যে, পিঁপড়াদের মধ্যে ব্যক্তিগত স্বার্থ বলতে কিছু আসলে প্রচলিত নেই। কখনো যদি কোনো একটি পিঁপড়া বিপদে আটকে যায় তখন গোটা দলই তাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে, তাতে যদি গোটা দলেরই অস্তিত্ব সঙ্কটের মুখে পরে তাতেও তারা এগিয়ে যায়। পাশাপাশি আবার উল্টো আচরণও দেখা যায় পিঁপড়াদের মধ্যে। অনেক সময় একটি আক্রান্ত পিঁপড়া দিকভ্রান্ত হয়ে আরও পিঁপড়াকে বিপদের দিকে টেনে নিয়ে যায়।
 

 

উইপোকা শ্রেনির পতঙ্গরা সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে কখনোই একক সিদ্ধান্তের উপর ভরসা করে না। তারা যেকোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে সম্মিলিত প্রক্রিয়াকে এগিয়ে রাখে। বিজ্ঞানীদের মতে, তাদের সম্মিলিত বুদ্ধিমত্তার কারণেই এতোদিন ধরে তারা পৃথিবীতে টিকে আছে। উদাহরস্বরুপ, ২০০৮ সালে চীনের সিচুয়ানে যখন আট দশমিক শূণ্য মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানতে নেয় তখন একটি স্কুলের ২৩০০ ছাত্র ছাত্রী এবং শিক্ষকরা সারিবদ্ধভাবে মাত্র ১০০ সেকেন্ডের মধ্যে দালান থেকে বের হয়ে যেতে সক্ষম হয়। বিজ্ঞানীদের মতে, এই সুশৃঙ্খলতাই উইপোকা শ্রেনির প্রাণীদের পৃথিবীর বুকে দীর্ঘদিন ধরে টিকিয়ে রেখেছে।
২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/জহির/মো:জই/

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে