এক্সক্লুসিভ ডেস্ক: গরু নিয়ে এলাহি কান্ড ঘটেছে পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুকে। গরুর ঘটনা গিয়ে আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। এ নিয়ে সৃষ্ট নানা ঘটনায় রীতিমত হইচই পড়ে গেছে সেখানে।
ঘটনাটা এ রকম : মাস আড়াই আগে পোয়াতি গরু হারিয়েছিল তমলুকের পদুমবসান গ্রামের সৈয়দা বিবির। হারানো গরু খুঁজে খুঁজে হয়রান। কিন্তু আর খোঁজ মেলেনি। যেন স্রেফ উবে গিয়েছে। চল্লিশের সৈয়দা বিবির ঘরে পঞ্চদশী মেয়ে। স্বামী অন্য নারীর টানে ঘর ছেড়েছে কবেই।
দুধ বেচেই তাদের পেট চলে। এখন কীভাবে চলবে, সেই চিন্তাতেই নাওয়া-খাওয়া উঠে গিয়েছিল সৈয়দার। হঠাৎ-ই ক’দিন আগে পদুমবসানের কাছে আবাসবাড়ি এলাকায় এক বাড়ির উঠোনে তার হারানো গরুটি দেখে চমকে ওঠেন তিনি। শুধু গরু নয়, সঙ্গে আছে বাছুরো । ও যে আমারই গাই-বাছুর গো! ধড়ফড়িয়ে সোজা সে বাড়িতে ঢুকে দাবি করেন সৈয়দা।
বাড়ির কর্তা তমলুক আদালতের প্রাক্তন ফৌজদারি উকিল, নাম দিলীপ সামন্ত। সদ্য তমলুক কলেজে ক্লার্ক হয়ে ঢুকেছেন। তবে লোকের কাছে এখনও ‘উকিল’ বলেই নিজের পরিচয় দেন। সৈয়দাকে তিনি হাঁক দেন ‘এ গরু যে তোমার, তার প্রমাণ কী?’ সৈয়দা যত তার রং বলেন, গায়ে কোথায় ছোপ আছে জানান, উকিলবাবু বলেন, ‘উঁহু, কিছুই তো মিলছে না!’
শুনতে-শুনতে শেষে খেপে যান সৈয়দা, খিঁচিয়ে ওঠেন ‘কোথায় পেলেন আপনি এই গরু?’ উকিলবাবু শান্ত ভাবেই জানান, তিনি কোথাও পাননি। গরুই বরং দড়ি ছিঁড়ে এসে তাঁর কাছে ঠাঁই নিয়েছে। সত্যিকারের মালিক এসে প্রমাণ দিলে তার হাতে গাই-বাছুর তুলে দেবেন। কিন্তু সেই প্রমাণই তো কেউ দিতে পারছে না!
সোজা আঙুলে ঘি উঠবে না বুঝে সৈয়দা সোজা তমলুকে আদালতে গিয়ে মামলা ঠুকেছেন। আদালতের নির্দেশে মঙ্গলবার সকালেই গাই-বাছুর উদ্ধার করে থানায় নিয়ে গিয়ে তদন্তে নেমেছে তমলুক থানার পুলিশ।
সকাল থেকেই থানার সামনে দাঁড়িয়ে বিচালি চিবিয়েছে দুধেল গাই। পাশেই লেজ নেড়ে খেলে বেড়িয়েছে আড়াই মাসের বাছুর। মামলায় সাক্ষ্য দিতে আসা কমলাকান্তকে উকিল প্রশ্ন করেছিলেন, ‘গরু চেন কিসে?’ সাক্ষীর ছোট্ট জবাব, ‘হাম্বা ডাকে।’ সে কারণে একক ও সমবেত হাম্বা-ডাকে দিনভর থানা মাত করেছে গাই-বাছুর।
তমলুক থানার ওসি বলেন, ‘আপাতত ওদের কোনও নিরাপদ আস্তানায় রাখার চেষ্টা হচ্ছে।’ থানা চত্বরেই দাঁড়িয়ে দিলীপ সামন্ত বলেন, ‘আরও অনেকে ওই গরুর খোঁজে এসেছিল, বুঝলেন? কিন্তু সৈয়দা বিবির মতো তারাও কোনও প্রমাণ দিতে পারেনি। তাই আমিই যত্ন করে গরুটি রেখেছিলাম।’
গরু তবে কার? সেটা এখনও আদালতেরই বিষয়।
তথ্যসূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা
২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/জহির/মো:জই/