রবিবার, ০৬ জুলাই, ২০২৫, ০৩:২৮:০০

ভিসা ছাড়া বা সহজ ভিসায় কোন কোন দেশে বাংলাদেশিরা ভ্রমণ করতে পারেন?

ভিসা ছাড়া বা সহজ ভিসায় কোন কোন দেশে বাংলাদেশিরা ভ্রমণ করতে পারেন?

এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : আপনার কম খরচে বিদেশ ভ্রমণ শেষ হলেও এর মূল্যবান অভিজ্ঞতা এবং শিক্ষা আপনার সাথে থাকবে। এই ধাপটিও গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি আপনার পরবর্তী সাশ্রয়ী ভ্রমণের ভিত্তি তৈরি করবে।

রিফ্লেকশন অ্যান্ড বাজেট রিভিউ: বাড়ি ফিরে আপনার আসল খরচের সাথে প্রাথমিক বাজেটের তুলনা করুন। কোন জায়গায় আপনি প্ল্যান মাফিক খরচ করেছেন? কোন জায়গায় অতিরিক্ত খরচ হয়ে গেছে? কেন হয়েছে? (যেমন: শেষ মুহূর্তে একটি আকর্ষণীয় ট্যুর বুক করেছিলেন, বা বেশি শপিং করেছিলেন, বা ভুল এটিএম থেকে টাকা তুলে বেশি ফি দিয়েছিলেন)। এই বিশ্লেষণই আপনাকে পরের বার আরও নির্ভুল বাজেট করতে এবং খরচ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে নিজের দুর্বলতা চিহ্নিত করতে সাহায্য করবে।
ডকুমেন্টেশন অ্যান্ড মেমোরিজ: টিকিট স্টাব, ম্যাপ, স্থানীয় কার্ড, ছোট্ট নোটস, অসংখ্য ছবি – এগুলো শুধু স্মৃতিই নয়, পরের ট্রিপের রিসোর্স। কোন হোস্টেলটি ভালো লেগেছিল, কোন রেস্তোরাঁয় খাবার দারুণ ছিল, কোন গাইড দারুণ ট্যুর দিয়েছিল, কোন রুটে পাবলিক ট্রান্সপোর্টে যাওয়া সাশ্রয়ী ছিল – এসব নোট করে রাখুন বা ট্রাভেল ব্লগ/ভ্লগে শেয়ার করুন। আপনার অভিজ্ঞতা অন্য সাশ্রয়ী ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য পথপ্রদর্শক হতে পারে।

লয়ালটি প্রোগ্রাম ও ফিউচার সেভিংস: আপনি যদি কোনও এয়ারলাইনের লয়ালটি প্রোগ্রামে জয়েন করে থাকেন বা ক্রেডিট কার্ড পয়েন্ট জমা করে থাকেন, দেখুন সেগুলো পরবর্তী ফ্লাইট বা থাকার জন্য ব্যবহার করা যায় কিনা। এই ভ্রমণ থেকে বাঁচানো টাকা বা পরবর্তী আয়ের একটি অংশ আলাদা করে রাখুন পরের কম খরচে বিদেশ ভ্রমণের ফান্ড হিসেবে। ছোট ছোট সঞ্চয়ই একসময় বড় অ্যাডভেঞ্চারের রূপ নেয়।

কম খরচে বিদেশ ভ্রমণ কোনও স্বপ্ন নয়, এটি একটি অর্জনযোগ্য বাস্তবতা, যার মূল চাবিকাঠি হল সচেতনতা, পরিকল্পনা, এবং স্মার্ট পছন্দ। আপনি যখন জানেন কোথায় খরচ কমাতে হবে এবং কোথায় বিনিয়োগ করতে হবে (সময়, সামান্য অতিরিক্ত টাকা অভিজ্ঞতার জন্য), তখন বিদেশ ভ্রমণ শুধু ধনী ব্যক্তিদের জন্যই নয়, আপনার জন্যও উন্মুক্ত। এই লেখায় আলোচিত সাশ্রয়ী টিপস – সঠিক সময়ে ও গন্তব্যে ভ্রমণ, বাজেট ফ্রেন্ডলি থাকা-খাওয়া-ভ্রমণ, ভিসা-ইন্স্যুরেন্সের প্রস্তুতি, এবং স্থানীয় অভিজ্ঞতার সন্ধান – মেনে চললে আপনি দেখবেন, ঢাকার পলাশী থেকে শুরু করে খুলনার রূপসা পর্যন্ত, সিলেটের চা বাগান থেকে চট্টগ্রামের সমুদ্রসৈকত পর্যন্ত – প্রতিটি বাংলাদেশির কাছেই পৃথিবীর দরজা খুলে যাবে। তাহলে আর দেরি কেন? আপনার পাসপোর্টটি হাতে নিন, একটি বাজেট প্ল্যান তৈরি শুরু করুন, এবং সেই স্বপ্নের গন্তব্যের দিকে প্রথম পদক্ষেপটি নিন। পৃথিবী অপেক্ষা করছে আপনার জন্য।

জেনে রাখুন-
১. কম খরচে বিদেশ ভ্রমণের জন্য সবচেয়ে সাশ্রয়ী গন্তব্যগুলো কি কি?
সাশ্রয়ী বিদেশ ভ্রমণের জন্য বাংলাদেশি ভ্রমণকারীদের জন্য জনপ্রিয় ও কম বাজেটের গন্তব্যের মধ্যে রয়েছে থাইল্যান্ড (ব্যাংকক, চিয়াং মাই, পাটায়া), ভিয়েতনাম (হ্যানয়, হো চি মিন সিটি, হোই আন, ডা নাং), কম্বোডিয়া (সিয়েম রিপ – আঙ্করওয়াট, ফনম পেন), ইন্দোনেশিয়া (ব্যালি – উবুদ, জাকার্তা), ভারত (দার্জিলিং, সিকিম, কলকাতা, উত্তর-পূর্ব রাজ্যসমূহ), শ্রীলঙ্কা (অফ-সিজনে), নেপাল (কাঠমান্ডু, পোখারা), এবং মালয়েশিয়া (পেনাং, ল্যাংকাউই)। তুরস্কও ইউরোপীয় দেশগুলোর তুলনায় তুলনামূলক সাশ্রয়ী। গন্তব্য নির্বাচনের সময় ফ্লাইটের দাম, থাকা-খাওয়ার খরচ এবং ভিসা সুবিধা বিবেচনা করুন।

২. বিদেশ ভ্রমণের সময় কোন ধরনের ট্রাভেল ইন্স্যুরেন্স বেছে নেওয়া উচিত?
কম খরচে বিদেশ ভ্রমণে ট্রাভেল ইন্স্যুরেন্স অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এমন পলিসি বেছে নিন যা পর্যাপ্ত মেডিকেল কভারেজ (অন্তত $50,000 – $100,000), ইমার্জেন্সি মেডিকেল ইভাকুয়েশন, ট্রিপ ক্যান্সেলেশন/ইন্টারাপশন, ব্যাগেজ লস/ডিলে, এবং পার্সোনাল লায়াবিলিটি কভার করে। বাংলাদেশী কোম্পানির পলিসি বা বিশ্বস্ত ইন্টারন্যাশনাল প্রোভাইডার (যেমন SafetyWing, World Nomads) থেকে কেনা যেতে পারে। আপনার ভ্রমণের ধরন (এডভেঞ্চার স্পোর্টস করবেন কিনা) এবং গন্তব্যের স্বাস্থ্যঝুঁকি বিবেচনা করে কভারেজ নিশ্চিত করুন।

৩. ভিসা ছাড়া বা সহজ ভিসায় কোন কোন দেশে বাংলাদেশিরা ভ্রমণ করতে পারেন?
বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীদের জন্য ভিসা-ফ্রি বা অন অ্যারাইভাল ভিসা সুবিধা রয়েছে এমন কিছু জনপ্রিয় সাশ্রয়ী গন্তব্য হলো: থাইল্যান্ড (অন অ্যারাইভাল – ৩০ দিন), ইন্দোনেশিয়া (অন অ্যারাইভাল – ৩০ দিন, নির্দিষ্ট এন্ট্রি পয়েন্টে), মালদ্বীপ (অন অ্যারাইভাল – ৩০ দিন), শ্রীলঙ্কা (ইলেকট্রনিক ট্রাভেল অথরাইজেশন – ETA, অন অ্যারাইভালের সমতুল্য), কম্বোডিয়া (ই-ভিসা বা অন অ্যারাইভাল), নেপাল (ভিসা-ফ্রি – ৯০ দিন), ভুটান (ভিসা-ফ্রি, তবে শুধুমাত্র প্যাকেজ ট্যুরে), কেনিয়া (ই-ভিসা)। ভিসা নিয়ম পরিবর্তনশীল, তাই ভ্রমণের আগে সর্বশেষ তথ্য গন্তব্য দেশের দূতাবাস বা বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট থেকে যাচাই করে নিন।

৪. সোলো ট্রাভেলার হিসেবে কম খরচে বিদেশ ভ্রমণ করলে নিরাপত্তা নিয়ে কী কী সতর্কতা নেওয়া উচিত?
সোলো ট্রাভেলার হিসেবে সাশ্রয়ী ভ্রমণে নিরাপত্তা অগ্রাধিকার। লোকাল সংস্কৃতি ও আইনকানুন সম্পর্কে আগে থেকে জেনে নিন। মূল্যবান জিনিসপত্র (পাসপোর্ট, টাকা, কার্ড) নিরাপদে রাখুন, কপিগুলো আলাদাভাবে সংরক্ষণ করুন। রাতে নির্জন বা কম আলোকিত এলাকায় যাওয়া এড়িয়ে চলুন। পরিবারের কাউকে আপনার ইটিনারারি এবং থাকার ঠিকানা জানিয়ে রাখুন। ট্রাস্টেড পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করুন। আপনার গুটস ফোলো করুন, কোনও কিছুতে অস্বস্তি বোধ করলে সেখান থেকে সরে আসুন। হোস্টেলে লকার ব্যবহার করুন। ইমার্জেন্সি কন্টাক্ট নাম্বার ও স্থানীয় পুলিশ/অ্যাম্বাসির নাম্বার ফোনে সেভ করে রাখুন।

৫. বিদেশে থাকাকালীন খাবারের খরচ কমানোর সবচেয়ে কার্যকর উপায় কী?
স্থানীয় বাজারে গিয়ে তাজা ফল, স্ন্যাক্স, পানীয় কিনুন। স্থানীয়দের ভিড় থাকা রেস্তোরাঁ বা স্ট্রিট ফুড স্টলে খান – এগুলো ট্যুরিস্ট স্পটের রেস্তোরাঁর চেয়ে অনেক সস্তা ও স্বাদে Authentic। হোটেল/হোস্টেলের রান্নার সুবিধা থাকলে নিজের ব্রেকফাস্ট বা হালকা খাবার বানিয়ে নিন। দুপুরের খাবারে (লাঞ্চ) রেস্তোরাঁর স্পেশাল অফার বা সেট মেনু দেখুন, যা সাধারণত ডিনারের চেয়ে সস্তা। বড় বোতলের পানি কিনে রিফিল করুন, বারবার ছোট বোতল কিনবেন না।

৬. ভ্রমণের সময় ইমার্জেন্সি ফান্ড কত টাকা রাখা উচিত এবং সেটা কিভাবে নিরাপদে রাখব?
কম খরচে বিদেশ ভ্রমণের সময় মোট বাজেটের অন্তত ১০-১৫% ইমার্জেন্সি ফান্ড হিসেবে আলাদা রাখা উচিত (উদাহরণস্বরূপ, ৫০,০০০ টাকার ট্রিপে ৫,০০০-৭,৫০০ টাকা)। এই টাকা নগদ (স্থানীয় মুদ্রা এবং কিছু ইউএস ডলার) এবং ক্রেডিট/ডেবিট কার্ড বা ট্রাভেল কার্ড (Wise/Revolut) এর আকারে রাখুন। নগদ টাকা সবসময় শরীরে বা ব্যাগে ভাগ করে রাখুন (কখনও এক জায়গায় সব টাকা নয়)। বেল্ট ব্যাগ বা মানিব্যাগ ব্যবহার করতে পারেন। হোস্টেল/হোটেলের সেফটি ডিপোজিট বক্সে মূল্যবান জিনিস ও অতিরিক্ত নগদ রেখে দিন। কার্ডের পিন কখনও কারো সাথে শেয়ার করবেন না।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে