এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : জমি কেনার আগে দলিল যাচাই করা এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম। ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি), জাল দলিল এবং প্রতারণার ফাঁদে পড়ে অনেকেই সর্বস্বান্ত হচ্ছেন। জালিয়াত চক্র অনেক সময় প্রকৃত মালিকের নাম ব্যবহার করে কোটি টাকার সম্পত্তি বিক্রি করে দেয়। বিশেষ করে দীর্ঘদিন খাজনা না দেওয়া বা পরিত্যক্ত জমিগুলোই তাদের প্রধান লক্ষ্য।
ঢাকার ডেমরার সহকারী ভূমি কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান এ বিষয়ে সতর্ক করে বলেন, "যে জমির কোনো তদারকি নেই, সেই জমিই বেশি ঝুঁকিতে পড়ে। ভুয়া এনআইডি, জাল দলিল এমনকি নকল পাওয়ার অব অ্যাটর্নি (আমমোক্তারনামা) তৈরি করে প্রতারক চক্র জমি বেচাকেনা করে।"
তবে সচেতন থাকলে ক্রেতা নিজেই জাল দলিল চিহ্নিত করতে পারেন। নিচে এমনই ৯টি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল তুলে ধরা হলো:
১. ভলিউম ও রেজিস্ট্রি নম্বর যাচাই: সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে সংরক্ষিত রেকর্ড অনুযায়ী দলিলের সাল, ভলিউম এবং রেজিস্ট্রি নম্বর মিলিয়ে দেখুন। প্রয়োজনে অফিসে লিখিত আবেদন করে তথ্য নিশ্চিত করুন।
২. স্বাক্ষর ও সরকারি সিল পরীক্ষা: দলিলে থাকা স্বাক্ষর ও সরকারি সিল প্রামাণ্য কি না তা যাচাই করুন। সরকারি ছুটির দিনে যদি দলিল রেজিস্ট্রি করা হয়ে থাকে, তবে সেটি সন্দেহজনক হতে পারে।
৩. প্রকৃত মালিকের পরিচয় নিশ্চিত: যদি এক জমির একাধিক মালিক দেখানো হয়, তবে সতর্ক থাকুন। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে আসল মালিক সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করুন।
৪. নামজারি ও খতিয়ানের ধারাবাহিকতা: সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিস থেকে খতিয়ান এবং নামজারির ধারাবাহিকতা যাচাই করুন। জমির দাগ নম্বর, ঠিকানা এবং পরিমাণ—সবকিছু ঠিক আছে কিনা, তা মিলিয়ে দেখুন।
৫. আমমোক্তারনামায় ছবি: জমি যদি পাওয়ার অব অ্যাটর্নি বা আমমোক্তারনামার মাধ্যমে হস্তান্তর করা হয়, তবে দলিলে উভয় পক্ষের ছবি সংযুক্ত আছে কি না, তা নিশ্চিত করুন।
৬. দলিলের তারিখ ও দখল হস্তান্তর: জমি হস্তান্তরের সময় এবং দলিলের তারিখ একে অপরের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ কি না, তা যাচাই করে দেখুন।
৭. দলিল লেখকের তথ্য যাচাই: দলিলটি কোন লেখক তৈরি করেছেন, তা জেনে নিন। প্রয়োজনে সরেজমিনে গিয়ে তার তথ্য যাচাই করে নেওয়া উচিত।
৮. মালিকানা ও পুরনো দলিল: পুরনো ভায়া দলিলসহ সব ডকুমেন্ট বিক্রেতার কাছ থেকে সংগ্রহ করুন এবং সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে তা যাচাই করে নিন।
৯. স্ট্যাম্পের উৎস: দলিল তৈরিতে ব্যবহৃত স্ট্যাম্প কোথা থেকে কেনা হয়েছে, তা যাচাই করুন। সিরিয়াল নম্বর দেখে স্ট্যাম্পের উৎস সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারেন।
জমি কেনার আগে শুধু দলিল দেখে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত নয়। উপরে উল্লিখিত প্রতিটি দিক ভালোভাবে যাচাই করা এবং প্রয়োজনে অভিজ্ঞ আইনজীবী ও ভূমি অফিসের সহায়তা নেওয়া জরুরি। সামান্য অসচেতনতায় শুধু টাকা নয়, মূল্যবান সময় ও মানসিক শান্তিও নষ্ট হতে পারে।