এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : পিত্তথলিতে পাথর বা গলস্টোন অনেক সময় কোনো উপসর্গ ছাড়াই তৈরি হয়। তবে পাথর যদি পিত্তনালিতে আটকে যায়, তখন তা তীব্র ব্যথা, বমি, হজমের গোলমালসহ নানা জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কিছু ভুল খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাপনের কারণে অজান্তেই গলস্টোনের ঝুঁকি বাড়ে। ম্যানিপাল হাসপাতাল, বান্দর (পুণে)-র সার্জিক্যাল গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্ট ডা. অনিকেত পায়াগুডে হিন্দুস্তান টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এমন পাঁচটি অভ্যাসের কথা তুলে ধরেছেন।
ডা. পায়াগুডের মতে, বর্তমানে কম বয়সীরাও পিত্তথলির পাথরে আক্রান্ত হচ্ছেন। পিত্তথলিতে জমে থাকা শক্ত কলেস্টেরল বা অন্যান্য উপাদান একত্র হয়ে পাথর তৈরি করে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই উপসর্গ দেখা যায় না, কিন্তু পিত্তনালী বন্ধ হয়ে গেলে বমি, বমিভাব, বদহজম ও তীব্র ব্যথা দেখা দিতে পারে। সময়মতো চিকিৎসা না হলে ল্যাপারোস্কোপিক অস্ত্রোপচার পর্যন্ত প্রয়োজন হতে পারে।
চলুন নেওয়া যাক গলস্টোনের ঝুঁকি বাড়ায় যেসব অভ্যাস।
১. ঘন ঘন খাবার না খাওয়া
খাবার বাদ দিলে পিত্ত দীর্ঘসময় পিত্তথলিতে জমে থাকে। স্থির পিত্তে কলেস্টেরল সহজে জমে পাথর তৈরি হতে পারে। তাই নিয়মিত সময়মতো খাবার খাওয়া জরুরি।
২. অতিমাত্রায় ভাজা বা চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া
ভাজা ও অস্বাস্থ্যকর চর্বি, প্রসেসড কার্বোহাইড্রেট পিত্তে কলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ায়। দীর্ঘদিন এসব খাবার খেলে গলস্টোনের আশঙ্কা বাড়ে এবং পরে সার্জারির প্রয়োজনও হতে পারে।
৩. অলস বা নড়াচড়াহীন জীবনযাপন
ব্যায়াম না করলে শরীরের বিপাক কমে যায় ও পিত্ত সঞ্চালন ধীর হয়। স্থূলতা গলস্টোনের বড় কারণগুলোর একটি। নিয়মিত ব্যায়াম ও ওজন নিয়ন্ত্রণ এতে সুরক্ষা দেয়।
৪. খুব দ্রুত ওজন কমানো বা ক্র্যাশ ডায়েট
হঠাৎ দ্রুত ওজন কমলে লিভার বাড়তি কলেস্টেরল তৈরি করে, যা পিত্তে অস্থিরতা এনে পাথর গঠনের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই ধীরে ও নিরাপদ উপায়ে ওজন কমানো ভালো।
৫. খাদ্যে ফাইবার ও পানির ঘাটতি
ফাইবার ও পানি কম খেলে হজম দুর্বল হয় এবং পিত্তের প্রবাহ কমে। ফল, শাকসবজি ও হোলগ্রেন পাথর প্রতিরোধে সাহায্য করে। পর্যাপ্ত পানি পান পিত্ত তরল রাখে ও ঝুঁকি কমায়।
কখন সার্জারি প্রয়োজন?
সব গলস্টোনের চিকিৎসা দরকার হয় না। কিন্তু যদি ঘন ঘন ব্যথা, সংক্রমণ, প্যানক্রিয়াটাইটিস বা পিত্তনালীতে বাধা দেখা দেয়, তবে ল্যাপারোস্কোপিক কোলেসিস্টেকটমি সবচেয়ে নিরাপদ সমাধান বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। জটিল পরিস্থিতিতে ওপেন সার্জারিও প্রয়োজন হতে পারে।
সুষম খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম, পর্যাপ্ত পানি পান এবং ক্র্যাশ ডায়েট এড়িয়ে চলার মতো অভ্যাস গলস্টোনের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমাতে পারে। দীর্ঘদিন পেটব্যথা বা হজমে সমস্যা থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত—এতে জটিলতা কমে এবং জরুরি সার্জারির প্রয়োজনও অনেক সময় এড়ানো যায়।