এক্সক্লুসিভ ডেস্ক: 'পৃথিবী ছেড়ে চলে যাওয়ার পর কে আমাদের মনে রাখবে?' প্রশ্ন করেছিলেন তাজাম্মুলি। বুক ফুলিয়ে হাসান উত্তর দিয়েছিলেন, 'আমি একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করব, সক্কলে আমাদের মনে রাখবে।' শুধু শাহজাহানই নয়, হাসানও পারেন নিজের বেগমের স্মৃতিতে সৌধ নির্মাণ করতে।
'ভালোবাসাই যথেষ্ট'-- ঘরের জানালা খুললেই, চোখে পড়ত আবছা হয়ে যাওয়া পোস্টারের এই লেখাটাই। এই সত্যটিকেই আঁকড়ে ধরে রেখেছিলেন তিনি।
৮০ ছুই ছুই ফৈজুল হাসান কাদরি। বুলন্দশহরের কাসের কালান গ্রামের এক অবসরপ্রাপ্ত পোস্টম্যান। কিশোরাবস্থায় তাজাম্মুলির সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল তার। জীবনের ৫৮টি বসন্ত এক সঙ্গে কাটানোর পর ৩ বছর আগে চোখ বোজেন তাজাম্মুলি।
এখন তার বুড়ো চোখের সামনে শুধু দু'টি জিনিস ভাসে। ওই আবছা হয়ে যাওয়া পোস্টারে লেখাটি আর নিজের তাজাম্মুলিকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি। সেই প্রতিশ্রুতি পূরণই এখন তাঁর জীবনের লক্ষ্য। এখন ঘরের জানালাটা খুললে পোস্টারে পাশাপাশি চোখে পড়ে একটি স্মৃতিসৌধ। তাজম্মুলির স্মৃতিতে এটি বানাচ্ছেন হাসান কাদরি। ঠিক যেমন মুমতাজের জন্য তাজমহল বানিয়ে ছিলেন শাহজাহান।
'আর পাঁচ জনের মতোই আমরাও সাধারণ দম্পতি ছিলাম। বাড়ির মতেই বিয়ে হয়েছিল আমাদের। যখনই আমাদের মধ্যে ঝগড়া বাঁধত এবং আমি রেগে যেতাম, সে চুপ করে যেত। সে রেগে গেলে, আমিও ঠিক এমনটিই করতাম।'
নিঃসন্তান ছিলেন তারা। মৃত্যুর পর তাদের কে মনে রাখবে, এই চিন্তাই কুড়েকুড়ে খেত তাজাম্মুলিকে। একদিন তাজাম্মুলি জিগ্যেস করে বসেন, 'পৃথিবী ছেড়ে চলে যাওয়ার পর কে আমাদের মনে রাখবে?' খুব বড়মুখ করে হাসান বলেছিলেন, 'আমি একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করব, সক্কলে আমাদের মনে রাখবে।' হাসান জানিয়েছেন, ওই স্মৃতিসৌধটি তার জন্যই। যদিও এক দিন হাসানও তাজাম্মুলির পাশেই শায়িত থাকবেন।
তাজিম্মুলির মৃত্যুর পর হাসান তার গয়না এবং পারিবারিক জমি বিক্রি করে দেন। জীবনের সমস্ত জমা পুঁজি বিনিয়োগ করে স্মৃতিসৌধ নির্মাণের কাজ শুরু করেন। কিন্তু ৩ বছর পরও অর্থাভাবে ভবন নির্মাণের কাজ শেষ করতে পারেননি। টাকা থাকলেই কর্মী নিয়োগ করতে পারবেন।
হাসান-তাজাম্মুলির ভালোবাসা দেখে, অনেকেই অর্থ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে ছিলেন। কিন্তু তাতে সায় দেননি হাসান। বলেছিলেন, 'এটি আমাদের ভালোবাসার প্রমাণ। আমাকেই এটা করতে হবে।'
হাসান নিজেই এর নকশা করেন। অনেক সময়ই হেসে ফেলেন তিনি, কারণ গ্রামের লোকেদের কাছে সেটি তাজমহল। একবারই সচক্ষে তাজমহল দেখেছিলেন হাসান। সামান্য অর্থ সম্বল করে তাজeম্মুলিকে সঙ্গে নিয়ে গ্রাম থেকে ১৪০ কিলোমিটার দূরে তাজমহল দেখতে গিয়েছিলেন তারা।
হাসানের ঘরে তাজাম্মুলির সঙ্গে তোলা একটি ছবি টাঙানো। যা তাকে পুরনো দিনের কথা মনে করিয়ে দেয়। সেই ছবি দেখেই দিন কাটছে হাসানের। অনেক সময়ই আবার তাজাম্মুলির মৃত্যুর পর নিজের লেখা কবিতা পাঠ করে প্রিয়তমাকে কাছে অনুভব করেন হাসান। তাঁর পাশেই রাখা রয়েছেন একটি মার্বেলের ফলক, তাজাম্মুলির নাম খচিত রয়েছে তাতে। সমাধিস্থলের কাজ শেষ হলেই, সেই ফলকটি বসাবেন হাসান।
জানিয়েছেন, মৃত্যু পর্যন্ত স্মৃতিসৌধ নির্মাণের কাজ চালিয়ে যাবেন। আর মৃত্যুর পর তার ছোট ভাই মেহজুল হাসান তাজাম্মুলির পাশেই তাঁকে কবর দেবেন।
তার পর? সেখান থেকে ফের শুরু হবে হাসান-তাজাম্মুলির প্রেমকাহিনি। -ইন্ডিয়াটাইমস