এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : চলতি বছরের মার্চ মাসের শুরুর দিকে হঠাৎ করেই গোলকধাঁধায় মিলিয়ে যায় একটি বিমান। এটি মালয়েশীয় এমএইচ৩৭০ বিমান। অনেক খোঁজ খবর করেও বিমানটির কোনো হদিশ পাননি মালয়েশীয় কর্তৃপক্ষ। এ বিমান উদ্ধারে মালয়েশিয়ার পাশাপাশি অনেক দেশ উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করে।
কিন্তু সফল হয়নি। আর যতই দিন যাচ্ছে, ততই বিমানটিকে ঘিরে রহস্যের জাল ঘণীভূত হচ্ছে। একদল মনে করছেন, বিতর্কিত বারমুডা ট্রায়াঙ্গালেই হারিয়ে গেছে বিমানটি। আবার আরেক দল মনে করছেন, প্রযুক্তির এ উৎকর্ষতার সময়ে পৃথিবীর এমন কোনো জায়গা রয়ে গেছে যেখানে একটা আস্ত বিমান লুকিয়ে রাখা যায়।
কারো কারো সন্দেহ, বিমানটিতে আরোহী হিসেবে থাকা একদল বিজ্ঞানীকে অপহরণ করার জন্যই পুরো বিমানটিকে কোনো একটি রাষ্ট্র গায়েব করে দিয়েছে। বিমান উড্ডয়নের ইতিহাসে এ ঘটনাই প্রথম নয়। এর আগেও বেশ কয়েকবার এমন ঘটনা ঘটে, যার কিছু সুরাহা হলেও বাকিগুলো এখনও রহস্য হয়ে আছে।
আধুনিক প্রযুক্তির এ সময়ে পৃথিবী এখন আর বিশাল নেই। মানুষ ঘরে বসেই এখন দুনিয়ার অপর প্রান্তের খবরাদি এবং বিভিন্ন স্থান দেখতে পারে। আর পাঠক জানতে পারেন পৃথিবীতে বিমান উড্ডয়নের ইতিহাসে এমনই কিছু অলৌকিক ঘটনা।
ফেয়ারচাইল্ড সি-৮২এ প্যাকেট, আলাস্কা : ১৯৬৫ সালের জানুয়ারি মাসে এ বিমান উত্তর মেরুর উপর দিয়ে যাওয়ার সময় যান্ত্রিক গোলোযোগের মুখোমুখি হয়। বিমানটির বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় তুন্দ্রা অঞ্চলের বরফাচ্ছন্ন জঙ্গলে ভূপাতিত হয়। একদিকে বিমান দুর্ঘটনার বিপদ, অন্যদিকে বৈরী আবহাওয়া সবকিছু মিলিয়ে বিমানটির বেঁচে যাওয়া আরোহীদের জন্য সময়টা ছিল ভীষণ ভয়ংকর।
তারপরেও বিমানটির আঘাতে যে গাছগুলো ভেঙে গিয়েছিল সেগুলোতে আগুন জ্বালিয়ে মাইনাস ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বিপরীতে লড়াই করতে শুরু করে আরোহীরা। এ ঘটনার তিনদিন বাদে তাদের জ্বালানো আগুনের ধোয়া দেখতে পায় আরেকটি বিমান। পরবর্তীতে তাদের উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া যায় যুক্তরাষ্ট্রে। আশ্চর্যের বিষয় হলো, এত বড় একটি বিমান দুর্ঘটনায় একজন মানুষও মারা তো যায়নি, এমনকি কেউ একটু আঘাতপ্রাপ্তও হননি।
গ্রুম্মান এইচইউ-১৬ অ্যালবাট্রস, মেক্সিকো : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার যুদ্ধক্ষেত্রের কিছু এরিয়াল ছবি তুলতে বিমান নিয়ে রওনা হয়েছিলেন একেল নামের এক আলোচিত্রী। আকাশপথে ক্যামেরা দিয়ে বেশ কিছু ছবিও তুললেন তিনি। কিন্তু মেক্সিকোর পুয়ের্তো এসকনদিদোর কাছাকাছি আসতেই হঠাৎ শুরু হওয়া এক ঝড়ের মধ্যে পরে বিমানটি। আলোকচিত্রী বিমান রক্ষা করবেন নাকি নিজেকে রক্ষা করবেন এই ভাবতে ভাবতে প্যারাগ্লাইড করে বিমান থেকে লাফ দিয়ে নেমে যান। এতে অবশ্য পায়ের গোড়ালিতে তিনি চোট পান। এরপর আর তিনি বিমানটির কোনো খোঁজ পাননি। কিন্তু ঘটনার চার বছর পর(২০০৬ সালে) অনলাইনে আরেক ফটোগ্রাফারের তোলা ছবি দেখে একেল নিজের বিমানটি চিনতে পারেন। এরপর সেই বিমানের কাছে গিয়ে তিনি দেখতে পান বিমানটির তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি, ইঞ্জিন প্রায় ভালো আছে বললেই চলে।
কুর্তিস সি-৪৬ কমাণ্ডো, মানিতোবা, কানাডা : ১৯৭৯ সালের দিকে চার্চিলে কুর্তিস সি-৪৬ বিমানটি ভূপাতিত হয়। বিমানটি দীর্ঘসময় বরফের তলায় চাপা পরে ছিল। তাই স্থানীয়দের পক্ষেও জানা সম্ভব হয়নি যে তাদের হাতের নাগালেই বরফের তলায় আসলে কি আছে। আবহাওয়াবিদদের মতে, ১৯৭৯ সালের শেষের দিকে গোটা ইউরোপ জুরে ভয়াবহ শৈত্যপ্রবাহ এবং তুষার ঝড় হয়েছিল। সেই ঝড়ে বিপুল ক্ষয়ক্ষতি এবং রাতারাতি অনেক ঘর-বাড়ি বরফে চাপা পরে যায়। বিশেষজ্ঞদের ধারনা, সেরকমই কোনো এক তুষার ঝড়ের রাতে বিমানটি ভূপাতিত হয় এবং বরফের তলায় ঢাকা পরে যায়।
বি-২৪ লিবারেটর, পাপুয়া নিউ গিনি : পাপুয়া নিউ গিনির স্থানীয়দের ভাষায় এই বিমানটির ধ্বংসাবশেষকে ‘জলাভূমির ভূত’ নামে ডাকা হয়। ব্রিটিশ এক আলোকচিত্রী দীর্ঘদিন ধরে হারিয়ে যাওয়া বিমান খুঁজে বেরাচ্ছিলেন। সেই খুঁজে বেরানোর অংশ হিসেবে তিনি পাপুয়া নিউ গিনির গহীন বনের মধ্যে খুঁজে পান ১৯৪৩ সালে ভূপাতিত এই বিমানটি। দুইজন পাইলট নিয়ে বিমানটি একটি গোপন মিশনে যাচ্ছিল। যেহেতু বোমারু বিমান, তাই ধরে নেয়া যায় যে, পাইলটদ্বয়ের সেই গোপন মিশন ছিল কোথাও বোমা ফেলার। যাহোক, তেল শেষ হয়ে যাওয়ার কারণে বোমা না ফেলেই যে বিমান ফেলে পাইলটদ্বয় পালিয়েছিল তা পরবর্তীতে জানা যায়। কারণ ২০১৩ সালে যখন ব্রিটিশ ওই আলোকচিত্রী বিমানটির ছবি তোলেন তখনও বিমানটির পেটের মধ্যে বোমা বাধা ছিল। দীর্ঘদিন পানির মধ্যে থাকার কারণে বিমানটির ইঞ্জিনের ক্ষতি ছাড়া তেমন কিছু হয়নি।