বুধবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ১০:৫৯:৪৬

ক্ষুদার তাড়নায় ভিক্ষাবৃত্তিতে ভাল্লুক!

ক্ষুদার তাড়নায় ভিক্ষাবৃত্তিতে ভাল্লুক!

এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : খেতে না পেয়ে শেষ পর্যন্ত ভিক্ষাবৃত্তির পথই বেছে নিল এক সাদা ভাল্লুক৷ উত্তর মেরুর নিকটবর্তী অঞ্চলের এই ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখাল ওই অঞ্চলের বন্যপ্রাণ সত্যিই অস্তিত্বসঙ্কটে৷

দু'বছরের এক ভাল্লুককে কয়েকদিন ধরেই রুশ মেরু অঞ্চলের নেনেত্‍স স্বয়ংশাসিত এলাকার তোবোস্কোয়ে তৈলখনি এলাকায় ঘোরাঘুরি করতে দেখা গিয়েছিল৷ সেখানে তাকে কয়েকবার দুধ আর মাংসভর্তি কৌটোও দেওয়া হয়৷ কিন্ত্ত ৪৪ পাউন্ডের জীবটি বারবার ফিরে আসতে থাকে খাবারের আশায়৷

শেষে তৈলখনির কর্মীরা ঘুমপাড়ানি গুলি ছুড়ে তাকে নিষ্ক্রিয় করে হেলিকপ্টারে চাপিয়ে অজ্ঞাত জায়গায় নিয়ে যায়৷ অনুমান, তাকে কোনও চিড়িয়াখানায় অথবা তৈলখনি থেকে অনেক দূরের কোনও দ্বীপে স্থানান্তরিত করা হবে যেখানে সে স্বাভাবিক পরিবেশ থেকেই খাবার সংগ্রহ করতে পারবে৷

কয়েক বছর ধরেই আর্কটিকে, একদিকে যেমন সাদা ভাল্লুকের সংখ্যা কমে আসছে, তেমনি অন্যদিকে সদ্যোজাত ভালুকছানারাও তাদের প্রাপ্য খাবার থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে৷ গবেষকদের মতে, উষ্ণায়নের ফলে সমুদ্রের বরফ তাড়াতাড়ি গলে যাওয়াতেই এই পরিণতি৷

মার্কিন ভূতত্ত্ব সর্বেক্ষণ এবং এনভায়রনমেন্ট কানাডা, দুজনে মিলে ২০০১ থেকে ২০১০ পর্যন্ত এক সমীক্ষা করে দেখেছে, দক্ষিণ বোফর্ট সমুদ্রে সাদা ভাল্লুকের সংখ্যা ২০০৪-এ ১৬০০ থেকে ২০১০-এ ৯০০-তে নেমে এসেছে৷

এই সম্পর্কে মার্কিন ভূতত্ত্ব সর্বেক্ষণের সংখ্যাতত্ত্ববিদ জেফ ব্রোমাঘিন বলেছেন, 'এই পরিসংখ্যান থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় সাদা ভাল্লুকের বাসস্থান ক্রমশ সঙ্কুচিত হয়ে আসছে৷'

সমীক্ষাকারী জীববিজ্ঞানী স্টিভ অ্যামস্ট্রাপ জানান, 'আশির দশকে ওই এলাকায় বসবাস করত প্রায় ১৮০০ সাদা ভাল্লুক৷ কিন্ত্ত নব্বইয়ের শেষ আর আশির গোড়ায় অবস্থা অনেকটাই বদলে যায়৷' ব্রোমাঘিন জানিয়েছেন, সাধারণত যেখানে জন্মাবার পর সাদা ভালুকের প্রায় ৫০ শতাংশ বাচ্চা বেঁচে থাকে, ২০০৪ থেকে ২০০৭ সালের সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে ৮০টি সাদা ভাল্লুক ছানার মধ্যে মাত্র দুটি বেঁচে আছে৷

ব্রোমাঘিনের অনুমান, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সাদা ভাল্লুক ছানাদের মৃত্যু হয় অনাহারে৷ তার মতে এর কারণ সমুদ্রে বরফ কমে যাওয়ায় সিলরাও সরে গিয়েছে৷ সিল আর সিন্ধুঘোটকই হল সাদা ভাল্লুকের প্রধান এবং স্বাভাবিক খাদ্য৷'

এখানেই শেষ নয়, আন্তর্জাতিক পরিবেশ সংগঠন গ্রিনপিস জানিয়েছে, শুধু উষ্ণায়নই নয়, শেল, গ্যাজপ্রোম, স্ট্যাটওয়েল এবং এক্সন-এর মতো বহুজাতিক সংস্থা আর্কটিক অঞ্চলে তেল অনুসন্ধান করার জন্য প্রচুর বিনিয়োগ করেছে৷ গ্রিনপিসের আশঙ্কা, ড্রিলিংয়ের সময় তেল চলকে পড়ে সমুদ্রের জলে মিশে গেলে তার পরিণাম হবে ভয়ানক৷ দূষিত হবে মানুষ ও জীবজন্ত্তর বাসস্থান এবং খাদ্যও৷

আর্কটিক অঞ্চলকে বলা হয় বিশ্বের এয়ার কন্ডিশনার৷ অথচ, আবহাওয়া পরিবর্তনের জেরে, পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় এটি দ্বিগুণ তাড়াতাড়ি গরম হয়ে যাচ্ছে৷ গত ৩০ বছরে, আর্কটিকের প্রায় ৭৫ শতাংশ বরফই উধাও হয়ে গিয়েছে৷ এ ভাবে চলতে থাকলে বাকিটা শেষ হতেও বেশি সময় লাগবে না৷

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে