এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : সাপ সাপ, বলে হঠাৎ কেউ একজন যদি চিৎকার করে ওঠে, সে চিৎকারে আশেপাশের পরোপকারী বীরজনতার প্রথম পদক্ষেপই হয় সাপ মারতে ঝাপিয়ে পড়া। দুঃখজনক হলেও সাপ সম্বন্ধে আমাদের সবার মনোভাব এমনই। পৃথিবীতে বহুলোক সাপের কামড়ে মারা যায়। তবে তার চেয়ে কয়েকশ গুণ সাপ মারা যায় মানুষের হাতে, অকারণে।
সাপের গুটিকয় প্রজাতি ছাড়া অধিকাংশ সাপই বিষহীন ও নিরীহ। উপমহাদেশে প্রাপ্ত সাপের ৭৬ শতাংশই বিষহীন। আর বাকি ২৪ শতাংশের গুটিকয় ছাড়া অধিকাংশই কম বিষধর। সে তুলনায় তাদের প্রতি আমাদের আক্ষেপের পরিমান অনেক বেশি। এই সাপ কিন্ত মানুষের খুবই উপকারী জীব। শস্যহানিকর ইঁদুর ও পোকামাকড় খাওয়াসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাপ মানুষের অনেক উপকার করে। তাই সাপ মানুষের শত্রু একথা যারা বলে তারা সাপের শত্রু তো বটেই, মানুষেরও বন্ধু নয়।
এই উপকারী সাধারণ জীব সম্বন্ধে আমাদের মনে অনেক ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে। যার মূল উৎস বিভিন্ন পৌরাণিক কাহিনি। এসব পৌরাণিক কাহিনি থেকে নানান কাহিনি লোকগাঁথায় ঢুকে মানুষের মনে সাপ সম্বন্ধে অনেক ভ্রান্ত ধারনার তৈরি হয়েছে। যা অবৈজ্ঞানিক, অযৌক্তিক তথা ভিত্তিহীন।
সাপ বিষধর হোক আর অবিষধর হোক সাপ দেখে ভয় পায় না এমন মানুষের সংখ্যা খুব কমই। যে সাপুড়েরা খেলা দেখায় তারাও ভীত থাকে। শুধু কৌশল জানে বলে খেলা দেখাতে পারে। অনেকের ধারণা, সাপুড়েরা বীন বাজিয়ে (এক ধরনের বাঁশি) সাপ বের করে আনে, পরে তা ধরে বিষ দাঁত ভেঙে দেয়।
বিজ্ঞানের যুক্তি সরীসৃপ জাতীয় বুকের ওপর ভর করে চলা প্রাণী সাপ আসলে বাঁশির সুর শোনে না। বায়ুম-লের শব্দ অনুভূতির ক্ষমতা সাপের নেই। শুধু চোয়ালের নিচে ছোট্ট হাড়ের মাধ্যমে শ্রবণ স্পন্দন স্নায়ুতন্ত্রের সাহায্যে মস্তিষ্কে পৌঁছায়। এমন সূক্ষ্ম স্পর্শকাতরতা নিয়ে সাপ বের হয়ে এসে যখন দেখে সাপুড়ে বিশেষ ভঙ্গিতে বাঁশি বাজা”েছ তখন এগিয়ে আসে। সাপুড়ে সুযোগটি নিয়ে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে সাপের সামনে নিয়ে এদিক ওদিক করে নাচায়।
এ ছন্দে সাপও ফণা তুলে নেচে ওঠে। তাই সাপের খেলা দেখানোয় সাপুড়েদের ক্যারিশমা এটুকুই। এই বিষয়টি সম্বল করে লোক কাহিনীর কত গল্পই না সাজানো হয়েছে। সাপ-বেজি নিয়েও নানা কথা আছে। বলা হয়, বেজি সাপকে বধ করে। প্রকৃত বিষয় হলো সাপ বেজিকে দেখে উত্তেজিত হয়ে বার বার ছোবল দেয়। আঘাত করে।
বেজি তা কৌশলে প্রতিরোধ করতে ডানে বামে সামনে পিছনে দ্রুত ঘুরে যায়। বার বার ছোবলে থলি থেকে বিষ বের হয়ে যায়। সাপ দুর্বল হলেই বেজি ঝাপিয়ে পড়ে তার ওপর। সাপুড়েরা এই গল্পটি আড়াল করে নিজেদের মনগড়া গল্প করে বিষ নিরাময়ের ওষুধ বেঁচে। আঃসঃ