বুধবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ১১:২২:০০

ঈগলের কাণ্ড! এ কিন্তু গল্প বা রূপকথা নয়

ঈগলের কাণ্ড! এ কিন্তু গল্প বা রূপকথা নয়

এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : ঘোড়ায় চড়ে শিকারে বেরিয়েছেন রাজকুমার। সবখানে ঘুরে একটিও শিকার জোগাড় করতে পারেননি। শেষে একখানা খরগোশের দেখা মিলল ঠিকই। কিন্তু হায়! ততক্ষণে রাজকুমারকে দেখে সেও দিল দৌড়। হাল ছাড়ার পাত্র নন রাজপুত্র। সঙ্গের পোষা ঈগলটিকে ইশারা করতেই বিশাল ডানা মেলে উড়ে গেল সেটি। পিছু নিল খরগোশের। ক্লান্ত হয়ে পড়া রাজকুমারের চোখের পাতা বুঁজে আসতেই ফিরে আসে বিশ্বস্ত ঈগল। নখে আটকে আছে ধবধবে সাদা একটি খরগোশ ছানা।

এ কিন্তু গল্প বা রূপকথা নয়। রাজকুমার না থাকলেও শিকারি ঈগল কিন্তু ঠিকই আছে। এখনো শিকারি ঈগল দিয়ে এভাবে খরগোশের মতো ছোটখাটো প্রাণী ধরে বেড়াচ্ছে কাজাখস্তানের একদল শিকারি। দেশটির শুষ্ক অঞ্চলে শীতের শুরুতে বরফ পড়া শুরু হলেই শিকারিরা ঈগল নিয়ে বের হন। রাজকুমারের মতো তাঁরাও ঘোড়ায় চড়েন। বাহুর ওপর সুবোধ বালকের মতো বসে থাকে বিশ্বস্ত ঈগল।

তুষারাবৃত পাহাড়ি রাস্তায় শেয়াল কিংবা খরগোশের পায়ের ছাপ দেখলেই ৬-৮ ফুট লম্বা ডানা ঝাপটে উড়ে যায় দুর্র্ধষ পাখিটা। ঈগল দিয়ে শিকার করা কিন্তু আজকালকার ঘটনা নয়। পাখি দিয়ে শিকার ৬ হাজার বছরের পুরনো পন্থা। এরপর ইউরোপসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশেও এটি জনপ্রিয়তা পায়। ঈগল দিয়ে শিকার করাটা কাজাখস্তানের বাসিন্দাদের নেশা।

এর সঙ্গে মিশে আছে তাদের হাজার বছরের পুরনো সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য। একমাত্র তারাই এখন এ ঈগল দিয়ে শিকার করার ঐতিহ্যটি আগলে রেখেছে। খানিকটা বিপত্তি ঘটেছিল সোভিয়েত আমলে। ১৯৩০ সালের দিকে সোভিয়েত ইউনিয়নে ঈগল ধরা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। সেই সময় রাজনৈতিক কারণে কাজাখস্তানের অনেকেই প্রতিবেশী দেশ মঙ্গোলিয়া ও চীনে আশ্রয় নিতে শুরু করে।

চীন ও মঙ্গোলিয়ায় ঈগল শিকার নিষিদ্ধ থাকায় কাজাখরা একসময় ঈগল শিকার ভুলতে শুরু করে। ১৯৯০-এর দিকে কাজাখস্তান স্বাধীন হলে সেখানকার অর্ধেক বাসিন্দাই রাশিয়ায় থেকে যায়। দেশটির প্রথম প্রেসিডেন্ট নুরসুলতান আপ্রাণ চেষ্টা করেন হারানো ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি ফিরিয়ে আনতে। তখন চীন ও মঙ্গোলিয়ায় অভিবাসী কাজাখদের দেশে ফিরিয়ে আনারও চেষ্টা চালান তিনি। এরপরই দৃশ্যপট বদলাতে শুরু করে। মূল শহর থেকে সামান্য দূরে নুরা গ্রামে ঢুকলেই চোখে পড়বে ঈগলের ভাস্কর্য। তবে গোটা কাজাখস্তানে এখন শিকারি ঈগল আছে মাত্র ৩০টি। আর পেশাদার ঈগল শিকারি আছেন ৫০ জন। স্থানীয় ভাষায় যাদের সবাই ‘বারকুচি’ বলে ডাকে।কাজাখস্তানের ঈগল শিকারিরা সাধারণত স্ত্রী ঈগলগুলোকেই পোষ মানায়।

কারণ, এরা পুরুষ ঈগলের চেয়ে অনেক বেশি হিংস্র। একটি ঈগল ৫০ বছরের মতো বাঁচে। বয়স ১০ পার হতেই তাদের শিকারের কাজে লাগানো হয়। ঈগলকে পোষ মানানো বেশ সহজ। ঈগলের বাসা থেকেই ছোট্ট ঈগলের বাচ্চাটিকে ধরে নিয়ে আসে কাজাখস্তানের শিকারিরা। তারপর শুরু হয় প্রশিক্ষণ পর্ব। কাজাখস্তানের নরগুম সোউমের এক ঈগলশিকারি সেমবাই বলেন, ‘বাচ্চা ঈগল মোটেও হিংস্র হয় না। বড় হতে হতে এরা পাকা শিকারি হয়ে যায়।’ ঈগল ধরে নিয়ে আসার পর মালিকের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করতে প্রথম কয়েক মাস মালিক নিজ হাতে ঈগলকে মাংস খাওয়ান। এভাবেই তৈরি হয় আনুগত্য। গ্রীষ্মের শেষদিকে শিকারি ঈগলকে খাঁচার বাইরে একটি কাঠের টুকরার সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়। এতে ঈগল ওড়ার সময় বাধা পেয়ে মাটিতে পড়ে যায়।

এই সময় তাদের কোনো খাবার দেয়া হয় না। তখনই তারা প্রশিক্ষণের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত হয়ে ওঠে। কাজাখস্তানের আলমাতি শহরের ঠিক পাশেই বরফাচ্ছন্ন পাহাড়ের মাঝে ঈগল শিকারের প্রতিযোগিতা হয়। ডিসেম্বরের শুরুর দিকে শিকারিরা তাদের ঈগল নিয়ে সেখানে জড়ো হয়। পরীক্ষা হয়ে যায় ঈগলের ক্ষীপ্রতার। অনেকটা আমাদের মোরগ লড়াইয়ের মতো। ‘কারো পকেটেই টাকা নেই। তারপরও যে কোনো মূল্যে দেশীয় সংস্কৃতিকে টিকিয়ে রাখবই।’

দুবাইয়ের সংবাদপত্র খালিজ টাইমসকে এমনটি বললেন ঈগল লড়াইয়ের আয়োজক বাগদাত মুপতেকেকিজ। এত পাখি থাকতে ঈগল দিয়েই কেন শিকার করা হতো? তবে জেনে রাখুন, দূর থেকে শিকারকে তাক করে প্রায় ২০০ মাইল বেগে উড়ে আসতে পারে পাখিটি! ডানা মেলে ভেসে থাকার সময় ঈগলের গতি থাকে ঘণ্টায় ২০ মাইল! আর শিকারি ঈগলের দৃষ্টিশক্তির কথা না বললেই নয়। মানুষের চেয়ে আটগুণ বেশি তীক্ষ্ন। প্রায় এক মাইল দূর থেকেও শিকার দেখতে পায় ঈগল!

অন্য ঘটনাটি হল! ঈগল শিকারী পাখি। ক্ষুধা পেলে শিকার করে। কিন্তু সেই শিকার যদি শিশু হয় তাহলে তো অবাক! ঠিক তেমনি একটি ঘটনা ঘটিয়েছে।এদের দৃষ্টিশক্তি প্রখর। শিকার খোঁজে আকাশে ডানা স্থির রেখে চক্রাকারে ঘুরপাক খায়। এরা সাধারণত মৃত প্রাণীদেহ খায়, ক্ষুদ্র প্রাণীও শিকার করে থাকে। কিন্তু এবার শিশুকে নিয়ে আকাশে উড়াল দেয়ার চেষ্টা করেছে ঈগল!

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে