এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : পৃথিবীর সবচেয়ে সুখি মানুষের দেশ দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের শান্ত পানিতে ভেসে থাকা ছোট্ট দ্বীপ ভানুয়াতু। মেলেনেশিয়ানরা দেশটির মূল অধিবাসী। ধারণা করা হয়, এরা ৩৫ হাজার বছর আগে নিউগিনিসহ আশপাশের দ্বীপাঞ্চলে বসতি স্থাপন করে। তাদের মূল আবাস পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো।
ধীরে ধীরে তারা ওশেনিয়া অঞ্চলের অনেক দ্বীপে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে মেলেনিয়ানদের ভাষা ও সংস্কৃতিতে ঘটে রূপান্তর। এখানে ইউরোপীয়দের প্রথম আগমন ঘটে ১৬০৬ সালে। প্রায় ২ হাজার কিলোমিটার বিস্তৃত ভানুয়াতুর পূর্বে অস্ট্রেলিয়া। উত্তর-পূর্বে নিউ ক্যালিডেনিয়া, পশ্চিমে ফিজি এবং উত্তরে সোলেমান দ্বীপপুঞ্জ। মাত্র ২ লাখের মতো জনসংখ্যা অধ্যুষিত ওশেনিয়া অঞ্চলের দেশটির অধিবাসীরা বিশ্বের সবচেয়ে ধনী আমেরিকা ও ব্রিটিশদের পেছনে ফেলে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখি মানুষের খেতাব পেয়েছে।
এটি হেপিয়েস্ট প্লেস ইন দ্য আর্থ। নিউ ইকোনমিকস ফাউন্ডেশন (এনইফ) পরিচালিত ‘হ্যাপি প্লানেট ইনডেক্সে’ অনুযায়ী এটি বিশ্বের সবচেয়ে সুখী রাষ্ট্র। তৃতীয় বিশ্বের দেশটির মানুষের মনে বেশি শান্তি। দেশটির অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ। প্রাকৃতিক সম্পদ নেই বললেই চলে। এর পরও কেন দেশটির মানুষ সুখী এ নিয়ে বিশেষজ্ঞদের কৌতূহলের শেষ নেই।
গবেষণায় দেখা গেছে, মাটির সাথে রয়েছে এখানকার অধিবাসীদের নিবিড় সম্পর্ক। মাটি তাদের অনুপ্রেরণা যোগায়। পকেটে টাকা না থাকলেও এখানকার কাউকে অভুক্ত থাকতে হয় না। অর্থ উপার্জন ভানুয়াতুদের জীবনের মূল লক্ষ নয়। যুক্তরাজ্যের নটিংহাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষে ফেরত স্থানীয় এক যুবকের চিন্তা থেকে বিষয়টি পরিষ্কার হওয়া যায়।
মাছ ধরা হবে তার পেশা। ইচ্ছা করলে সে ধনী হতে পারত। আধুনিক জীবনযাপন করতে পারত। কিন্তু পূর্বপুরুষের পেশা জেলে জীবন তার কাছে খুব আনন্দদায়ক। দেশটির অধিবাসীরা গরিব কিন্তু কেউ কোনো দিন না খেয়ে থেকেছে তার কোনো নজির নেই। বিনিময়ের মাধ্যম মুদ্রা ততটা গুরুত্বপূর্ণ নয়।
অল্পতে ফসল ফলে এ মাটিতে। শুধু আবাদি জমির ওপর জীবিকা নির্বাহ করে বেঁচে আছে অসংখ্য মানুষ। বিষয়টি তাদের আত্মিক প্রশান্তি যোগায়। তাই ভূমির দখল নিয়ে বিদেশীদের সাথে তাদের যত বিবাদ আর বিরোধ। দেশটির আবহাওয়া বেশ ভালো। চমৎকার দীর্ঘ সমুদ্র উপকূল। বেকারত্ব আর প্রচলিত অর্থের দারিদ্র্য বিরাজ করলেও কর আরোপ ও সরকারি কঠিন নিয়ন্ত্রণের কোনো বালাই নেই। এর জন্য মানসিক দিক থেকে তারা পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ।
৮৩টি দ্বীপের ৬৫টিতে জনবসতি রয়েছে। বৃহৎ দুটি দ্বীপ মেথিও ও হান্টারসহ ১৪টি দ্বীপ আয়তনে ১০০ বর্গকিলোমিটারের বেশি। অধিকাংশ দ্বীপই পর্বতময়। রয়েছে অসংখ্য আগ্নেয়গিরি। জনবসতি ও নিকটবর্তী সমুদ্রে রয়েছে জীবন্ত আগ্নেয়গিরি। কিছু দিন আগেও মাউন্ট মানরো নামক আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত থেকে বাঁচাতে মানুষজনকে সরিয়ে নেয়া হয় একটি দ্বীপ থেকে। ভানুয়াতু অত্যন্ত বৃষ্টিপ্রবণ দেশ।
বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত ২ হাজার মিলিমিটারের ওপরে। উত্তরের দ্বীপগুলোতে কখনো এর দ্বিগুণ বৃষ্টিপাত হয়। এটি অস্ট্রেলীয় ইকোজোনের অন্তর্ভুক্ত। নিউকেলিডোনিয়া, সোলমন দ্বীপপুঞ্জ এ সমভাবাপন্ন জলবায়ু অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত। সমুদ্রের পানির স্পর্শ এ অঞ্চলের আবহাওয়াকে কখনো চরমভাবাপন্ন হতে দেয় না।
একনজরে ভানুয়াতু
দেশের নাম : রিপাবলিক অব ভানুয়াতু
রাজধানী : পোর্ট-ভিলা
জনসংখ্যা : ২ লাখ ২২ হাজার (২০০৫ সাল)
আয়তন : ১২ হাজার ১৯০ বর্গকিলোমিটার
প্রধান ভাষা : বিসলামা, ফ্রেঞ্চ, ইংলিশ
প্রধান ধর্ম : খ্রিষ্টান
গড় আয়ু : ৬৭ (পুরুষ), ৭০ (মহিলা)
মুদ্রা : ভাতু
প্রধান রফতনিপণ্য : কাঠ, গোশত, কোকো
মাথাপিছু আয় : ১ হাজার ৬০০ মার্কিন ডলার।