বুধবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০১:০১:১৭

ডিঙি ভাসিয়ে বিশ্বভ্রমণে সাহসী এক সুন্দরী

ডিঙি ভাসিয়ে বিশ্বভ্রমণে সাহসী এক সুন্দরী

এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : কতজনের কতইনা সখ। একেকজন একেকভাবে চলতে পছন্দ করেন। এমনই এক সুন্দরী তরুণী যিনি ডিঙি ভাসিয়ে বিশ্বভ্রমণ করেছেন।

২০১১ সালের ১৪ মে জার্মানির উলম থেকে তিনি যখন সাগরপাড়ি দিয়েছিলেন, তার ঠিক একদিন আগে বিধানসভার ভোটে জিতে এ রাজ্যে পালাবদল ঘটিয়ে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷

দাঁড়টানা নৌকায় সাতসমুদ্র তেরো নদী পেরিয়ে তিনি যখন এ রাজ্যের উপকূলে এসে তরী ঘাটে ভেড়ালেন, ততদিনে মমতার মুখ্যমন্ত্রিত্বের প্রায় তিন বছর পার৷

স্যান্ড্রা হেলেন রবসন ওরফে স্যান্ডি নামের এই অস্ট্রেলীয় তরুণী সমুদ্র অভিযানে কাকতালীয়ভাবে জড়িয়ে যান। হয়ে যান এক টুকরো ইতিহাস৷

রোদ-বৃষ্টি-ঝড় আর দামাল বাতাসে উত্তাল ঢেউ সামলে দাঁড়টানা নৌকায় সাগর পাড়ি দিয়ে জার্মানির উলম থেকে পশ্চিমবঙ্গের দিঘায় পৌঁছতে স্যান্ড্রার সময় লেগেছে প্রায় তিন বছর৷

তাতেও অ্যাডভেঞ্চারের আশ মেটেনি তার৷বুধবারই আবার দুগ্গা দুগ্গা করে ফ্রেজারগঞ্জ থেকে সাগরের স্রোতে তিনি পাড়ি দিলেন বাংলাদেশের উপকূল অভিমুখে৷

বাংলাদেশের উপকূল ঘুরে মায়ানমার, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও ইন্দোনেশিয়া পার করে অস্ট্রেলিয়ার সাইবাই দ্বীপে পৌঁছতে স্যান্ড্রার লাগবে আরো দু’দুটো বছর৷

গত তিন বছরে জার্মানির দানিয়ুব নদী হয়ে তিনি পার হয়েছেন ভারদার নদী, অ্যাজিয়েন সাগর ও ভূমধ্যসাগর৷ প্রথম পর্যায়ে তিন বছরের সাগর পরিক্রমায় এই সাহসিনীর কায়াক ছুঁয়ে গেছে জার্মানি, অস্ট্রিয়া, স্লোভাকিয়া, হাঙ্গেরি, ম্যাসিডোনিয়া, গ্রিস, তুরস্ক, সাইপ্রাস ও শ্রীলঙ্কার ভূমি৷জলপথে দূরত্বটা প্রায় ৫০ হাজার কিলোমিটার৷

পেশায় স্কুলশিক্ষিকা স্যান্ড্রা মূলত ছাত্রছাত্রীদের আউটডোর ক্যাম্পিং, জঙ্গল অভিযান, ঝুঁকি থেকে সুরক্ষা, অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টসে প্রাথমিক চিকিৎসা পরিষেবার প্রশিক্ষণ দেন৷

কুড়ি বছর ধরে কায়াক নিয়ে সাগরে ভেসে বেড়ানোর অভিজ্ঞতা ঝুলি ভরপুর৷নিজের দেশেই জলে জঙ্গলে অভিযানে গিয়ে কোনো মতে কুমিরের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন তিনি৷

কখনো সাগরে তার কায়াক ছুঁয়ে সাঁতার কেটেছে তিমির ঝাঁক৷ দিঘার উপকূল ছুঁতেও ঘাম ছুটে গিয়েছিল স্যান্ড্রার৷সন্ধ্যার অন্ধকারে তট ঠিক করতে পারছিলেন না৷ ফলে সারারাত সমুদ্রে কাটাতে হয় তাকে৷

ভোরের আলো ফুটলে কোনোমতে দিঘায় পৌঁছান৷দিঘায় ওয়াটার স্পোর্টসের সঙ্গে যুক্ত মানুষরাই তার কায়াক টেনে ডাঙায় আনেন৷ তারপর দিঘা থেকে কায়াক নিয়ে মন্দারমণি-জুনপুট-সাগরদ্বীপ-বকখালি হয়ে ফ্রেজারগঞ্জ৷

দিন কয়েক ফ্রেজারগঞ্জে তার কায়াকটির রক্ষণাবেক্ষণ করেছে ভারতীয় কোস্টগার্ড৷ কলকাতায় তাকে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন ছাপোষা বাঙালিরাও৷

আজ থেকে ৮২ বছর আগে অস্কার স্পেকস নামে এক জার্মান যুবক একই পথে কায়াকে চেপে অতিক্রম করেছিলেন জার্মানি, অস্ট্রিয়া, স্লোভাকিয়া, হাঙ্গেরি, সার্বিয়া, ম্যাসিডোনিয়া, গ্রিস, তুরস্ক, সাইপ্রাস, সিরিয়া, ইরাক, ইরান।

সে সময়কার অবিভক্ত ভারত, বার্মা, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া, পাপুয়া নিউ গিনি ও অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলোও৷

স্যান্ড্রার কথায়, স্পেকস সাইপ্রাস থেকে সিরিয়ার উপকূলে পৌঁছেছিলেন৷তারপর আলেপ্পো হয়ে ইউফ্রেটিস ধরে সিরিয়া ও ইরাক যান৷ যুদ্ধ চলছে বলে আমি সিরিয়া যেতে পারিনি৷

ইরাকের মোহনাগুলো এখনো পুরোপুরি মাইন মুক্ত না হওয়ায় বিপদের আশঙ্কা ছিল তার৷তুরস্ক পৌঁছে তিনি জানতে পারলেন ইরানের সরকার তাদের দেশের উপকূল ছোঁয়ার অনুমতি দেবে না৷

অভিযানে অবশ্য বেশকিছু শিরোপা মিলেছে তার৷ যেমন- কায়াকে চড়ে শ্রীলঙ্কার উপকূল পরিক্রমার বিশ্বরেকর্ড গড়া বা প্রথম মহিলা অভিযাত্রী হিসেবে ভারতের পশ্চিম উপকূল পুরোটা পরিক্রমা করা৷

বেকবাগানের অনাড়ম্বর গেস্ট হাউসে বসে হাসতে হাসতে স্যান্ড্রা বললেন, মহারাষ্ট্রের উপকূলে হঠাৎ কোস্টগার্ডের হেলিকপ্টার থেকে দড়ির মই বেয়ে নেমে এসে এক সেনা আমায় জিজ্ঞাসা করলেন, আমি কে?

আবার ওড়িশার উপকূলে ঢেউয়ের তোড় মারাত্মক৷ কখনো যাত্রাপথ হিসেবের বাইরে চলে যাওয়ায় নির্জন উপকূলে সারারাত তাঁবু খাটিয়ে থাকতে হয়েছে তার৷

নিতান্তই সাধারণ অবস্থার স্যান্ড্রাকে বহু তদ্বির করে অভিযানের অর্থসংস্থান করতে হলেও তিনি বিশ্বাস করেন, জীবনের পথে অনেক কিছুই বাদ দিয়ে চলা সম্ভব, শুধু স্বপ্ন দেখাটা বাদ দেয়া অসম্ভব৷সেই স্বপ্নের তরীতে সওয়ার হয়েই তো সাগরে ডিঙি ভাসিয়েছেন স্যান্ড্রা৷সূত্র : ইন্টারনেট

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে