এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : মহাভারতের চরিত্র কুম্ভকর্ণ বছরের ছয় মাস ঘুমাতেন আর বাকি ছয় মাস জেগে থাকতেন। রাত ও দিন মিলিয়ে বছরকে দু’ভাগ করলে আমরাও তো তা-ই করি; কুম্ভকর্ণ টানা ছয় মাস, আর আমরা ভেঙে ভেঙে।
তবু জলজ্যান্ত একটা মানুষ, নাওয়া নেই, খাওয়া নেই, দিন নেই, রাত নেই, ভোঁসভোঁস করে কেবল ঘুমিয়েই চলেছেন, ভাবতে তো অবাকই লাগে। আবার এমনো আছে, একজন মানুষ ছটফট করছে একটু ঘুমোনোর জন্য, কিন্তু ঘুমোতে পারছে না।
এ রকম একজনের নাম শেরি ডিংস। ২৯ বছর বয়সী এই নারী সার্জেন্ট আমেরিকান সেনাবাহিনীতে কর্মরত। তার কাজ, সৈন্যদের হাতাহাতি লড়াইয়ের ট্রেনিং দেয়া। ব্রাজিলিয়ান জুযুৎসুতে দক্ষ সার্জেন্ট শেরি আমেরিকান সেনাবাহিনীর অল্প ক’জন নারী সৈনিকের একজন, যারা লেভেল টু কমব্যাট সার্টিফিকেট পেয়েছেন। এটা হচ্ছে এমন এক ধরনের ট্রেনিং, যাতে একাই দু’জনের সাথে লড়তে এবং তাদের খতম করে জয়ী হতে শেখানো হয়।
এমন কঠিন লড়াই-ই সৈনিকদের শেখান শেরি। কিন্তু সামনের দিনগুলোতে তার নিজের জন্যই অপেক্ষা করছে আরো কঠিন এক লড়াই। এ লড়াইয়ের নাম অনিদ্রা। শেরির পরিবারের সদস্যদের শরীরে রয়েছে বিরল এক রোগের জিন। সে রোগের নাম ফেইটল ফ্যামিলিঅ্যাল ইনসমনিয়া, সংক্ষেপে এফএফআই।
সাধারণত ৫০ বছর বয়সের পর এ রোগের লক্ষণগুলো প্রকাশ পেতে থাকে। প্রথমে তন্দ্রা বা ঝিমুনি না হওয়া, তারপর রাতের ঘুম কমে যাওয়া এবং শেষে একেবারেই ঘুমাতে না পারা। এভাবে চলে কমবেশি এক বছর। তারপর অবশ্য ঘুম আসে, কিন্তু সে ঘুম আর কখনো ভাঙে না। অর্থাৎ মৃত্যু।
দীর্ঘ গবেষণার পরও বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করতে পারেননি কেন এমন হয়। তারা যেটুকু পেয়েছেন তা এ রকম : মানুষের মস্তিষ্কের গভীরে থাকে থ্যালামাস নামে একটি কাঠামো। প্রিয়ন নামে একটি প্রোটিন এলোমেলো হয়ে গিয়ে এফএফআইবাহী ব্যক্তির থ্যালামাসে হানা দেয়। ধ্বংসপ্রাপ্ত থ্যালামাস সৃষ্টি করে ঘুমের ব্যাঘাত।
এটা কিভাবে বন্ধ করা যায়, বন্ধ করা না গেলেও অন্তত কমানো যায় তারও কোনো উপায় খুঁজে পাননি তারা। এফএফআই নিয়ে গবেষণার আগে বিজ্ঞানীরা জানতেনই না যে, ঘুমের ক্ষেত্রে থ্যালামাসের আদৌ কোনো ভূমিকা আছে। এফএফআই রোগটি অতি বিরল। পৃথিবীতে মাত্র গোটা চল্লিশেক পরিবার এ রোগে আক্রান্ত। তবে এটাও সত্য, পৃথিবীতে লাখ লাখ লোক এখন অনিদ্রা রোগে ভুগে থাকে, যদিও তা এফএফআই’র মতো মারাত্মক নয়।
সাত থেকে নয় ঘণ্টা ঘুমানোর পর আমরা যেমন জেগে উঠি, একইভাবে ১৫ থেকে ১৭ ঘণ্টা জেগে থাকার পর আমরা ক্লান্ত হয়ে পড়ি। আমরা জানি, ঘুম দুই রকমের। হালকা ঘুম আর গভীর। হালকা ঘুমের ভাগটিকে বলা হয় র্যাপিড আই মুভমেন্ট (রেম)। এ সময় আমাদের ব্রেন তেমনই সক্রিয় থাকে, যেমন থাকে জেগে থাকার সময়। তবে এ সময় অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ থাকে নিশ্চল।
সব স্তন্যপায়ী প্রাণী ও পাখিই ঘুমায়। ডলফিন যখন ঘুমায় তখনো তার ব্রেনের অর্ধেক জেগে থাকে। ফলে ঘুমিয়ে থেকেও সে বুঝতে পারে, পানির নিচে তার প্রতিবেশে কী ঘটছে। ম্যালার্ড নামে এক ধরনের বুনো হাঁস আছে যারা ঘুমায় লাইন ধরে। এ সময় লাইনের দু’পাশে দুটো হাঁস ঘুমিয়ে থাকলেও তাদের ব্রেন থাকে সতর্ক এবং একটি চোখ থাকে খোলা, যাতে কোনো শিকারি চোখে পড়লেই অন্যদের সজাগ করে দিতে পারে।