এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : ডায়াবেটিস রোগে যারা আক্রান্ত কেবল তারাই জানেন কতটা যন্ত্রনা নিয়ে তারা বেঁচে আছেন। ডায়াবেটিস বধে তাদের করণীয় সম্পর্কে ফ্রিডম্যান ডায়াবেটিস ইনস্টিটিউট-এর ডায়াবেটিস ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রামের পরিচালক ড. গেরাল্ড বার্নস্টেইন বলেন, ডায়াবেটিস রোগীদের পুষ্টি পূরণের একমাত্র লক্ষ্য হবে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে এমন খাবার খাওয়া।
এখানে জেনে নিন এমন কতগুলো খাবারের কথা যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সবচেয়ে বাজে এবং ক্ষতিকর খাবার বলে বিবেচিত।
সাদা চাল : যত সাদা চালের ভাত খাবেন, টাইপ ২ ডায়াবেটিস রোগীদের ঝুঁকি তত বাড়তে থাকবে। ২০১২ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, সাদা চালের খাবার খেলে প্রতিদিনই ঝুঁকির মাত্র ১১ শতাংশ হারে বেড়ে যায়। কারণ এই চাল প্রক্রিয়াজাত করে সাদা করা হয়। তা ছাড়া এই খাবার চিনি মাত্রাও বাড়িয়ে দিতে পারে। পরিবর্তে বাদামী চালের খাবার খেতে পারেন। এতে রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
কলা এবং তরমুজ : সব তরতাজা ফলেই ভিটামিন ও ফাইবার রয়েছে। কিন্তু ফলে সুগার থাকে। তাই কলা, তরমুজের পুষ্টিগুণ ভালো থাকলেও এতে গ্লুকোজের পরিমাণ প্রচুর। তাই ব্লুবেরি এবং বেরি জাতীয় ফল বেশি বেশি খান।
ফ্রুট স্মুথি : এর নাম শুনলে মনে হয় খুবই স্বাস্থ্যকর। কিন্তু এটি চিনিতে পরিপূর্ণ। তাই খেতে মন চাইলে বাড়িতে চিনি ছাড়া তৈরি করে উপভোগ করুন।
ব্লেন্ডেড কফি : সিরাপ, সুগার এবং ক্রিম সমৃদ্ধ ব্লেন্ডেড কফি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর বলে বিবেচিত হতে পারে। একে স্রেফ কফি হিসেবে হয়তো খাবেন আপনি। কিন্তু এর ব্লেন্ডেড সংস্করণে রক্তে গ্লুকোজ বাড়ানোর উপাদান রয়েছে প্রচুর পরিমাণে। এক কাপ ব্লেন্ডেড কফিতে ৫০০ ক্যালরি, ৯৮ গ্রাম কার্ব এবং ৯ গ্রাম ফ্যাট থাকে।
ট্রেইল মিক্স : সংরক্ষণ করা হয় এমন ট্রেইল মিক্সে বাদাম, শুকনো ফল এবং মিল্ক চকোলেট রয়েছে। এদের মধ্যে বাদাম ছাড়া বাকিগুলো ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য নিশ্চিত হুমকি। তাই এর পরিবর্তে নিম্নমাত্রার কার্বযুক্ত সূর্যমুখীর বীচি, ওয়ালনাট, রোস্টেড পিনাট এবং আলমন্ড দিয়ে ট্রেইল মিক্স বানাতে পারেন। এই মিক্স কার্বোহাইড্রেটসমৃদ্ধ পাউরুটি দিয়ে খেতে পারেন।
রিফাইন্ড সিরিয়াল : উপাদেয় সিরিয়াল রক্তে সুগারের মাত্রা বাড়িয়ে দেবে। তবে সিরিয়ালের ক্ষেত্রে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা একেক জনের দেহে একেকভাবে দেখা দিতে পারে। তাই এটি ডায়াবেটিস রোগীদের এড়িয়ে চলাই ভালো। এর পরিবর্তে সবজি ও ডিমের সাদা অংশ খেতে পারেন। ডিমের কুসুমে কোলেস্টরেল রয়েছে তা ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
ফলের রস : সকালের নাস্তায় ফলের রস খুব স্বাস্থ্যকর হলেও তা ডায়াবেটিস রোগীর জন্য হুমকি। তা ছাড়া দোকানে পাওয়া যায় এমন ফলের রসে প্রচুর পরিমাণে চিনি থাকে। এর বদলে কম সুগার রয়েছে এমন ফলের একটি বা দুটি টুকরো খেতে পারেন।
এনার্জি বার : এনার্জি বারে আসলে থাকে চকোলেট, কার্ব এবং চিনি। তাই এটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অবশ্য বর্জনীয়।
তাই ক্ষুধা লাগলে বাড়িতে তৈরি স্ন্যাক্স খেতে পারেন।
পাস্তা আলফ্রেডো : আলফ্রেডো সস ক্রিম, পারমেসান চিজ এবং বাটার থেকে তৈরি হয়। এতে রয়েছে ১ হাজার ক্যালরি, ৭৫ গ্রাম ফ্যাট এবং ১০০ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট। তাই বাদ দেওয়া জরুরি। এর পরিবর্তে গমের তৈরি পাস্তা খেতে পারেন টমেটো সস দিয়ে। এতে রয়েছে ২৮০ ক্যালরি এবং ১৪ গ্রাম ফ্যাট।
ফ্রেঞ্চ ফ্রাই : এটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বেশ মারাত্মক খাবার। একটু বেশি পরিমাণ খেলে রক্তে সুগারের মাত্রা বেড়ে যাবে। ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশন এক এড়িয়ে চলেত বলেছে। তাই বাড়িতে কিছু আলু ভেজে খেতে পারেন এবং একে এড়িয়ে গিয়ে অন্যান্য সবজি খাওয়াই ভালো।
চর্বিসমৃদ্ধ মাংস : ডায়াবেটিস রোগীরা হৃদরোগের ঝুঁকিতে থাকেন। তাই চর্বিযুক্ত মাংস পুষ্টিকর হলেও তা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াবে ডায়াবেটিস রোগীদের। তাই বিশেষ করে রেড মিট এর মতো মাংস বাদ দিতে হবে। এতে প্রচুর পরিমাণে সম্পৃক্ত ফ্যাট রয়েছে।
এর বদলে প্রোটিনসমৃদ্ধ বিন, লেনটিস ইত্যাদি কেতে পারেন। তা ছাড়া মাছ, সামুদ্রিক খাবারও ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী।
চাইনিজ খাবার : মুখরোচক হলেও এই খাবার ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ক্ষতিকর। এতে রক্তে সুগারের মাত্রা বাড়িয়ে দেওয়ার মতো যথেষ্ট উপাদান রয়েছে। তাই এর বদলে বাড়িতে চাইনিজ খাবার বানিয়ে নিন স্বাস্থ্যকরভাবে যা আপনার রক্তে চিনির পরিমাণ বাড়াবে না।
পেস্ট্রি : ডোনাট, টোস্ট বা পেস্ট্রির মতো মজার খাবার ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ভয়ংকর হতে পারে। এসব প্রক্রিয়াজাত সাদা চাল থেকে তৈরি হয় যাতে উচ্চমাত্রার ফ্যাট, কার্ব এবং সোডিয়াম রয়েছে। তাই বাদামী চালের তৈরি কেক খান। কম চিনি রয়েছে এমন পিনাট বাটার ব্যবহার করুন।