মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান, দিনাজপুর থেকে : রাতের প্রশান্তির ঘুমে শক্তি সঞ্চার করে। সকালে তাজা প্রাণ নিয়ে দিনের কাজ শুরু করা আনন্দদায়ক হয়। সবাই চায়, সারাদিনের পরিশ্রমের মুক্তির উপায় একটানা প্রশান্তির ঘুম।
সমস্ত অবসাদ, ক্লান্তি দূর করে সকালে উঠতে বেগ পেতে হয় অনেককে। বিশেষ করে যারা বেশি রাত করে ঘুমতে যায় তাদের ঘুম ভাঙলেও বিছানা ত্যাগের অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়।
নেহায়েত বাধ্য হয়ে উঠতে হয় ক্লান্তি ও বিরক্তি সহকারে। আবার শরীরটা বিছানায় এলিয়ে দিতে পারলেই যেন বেঁচে যায়। এ সমস্যা শুধু লাল সবুজের বাংলাদেশেই সীমাবন্ধ নায়, দুনিয়ার সবত্রই।
আমেরিকার নিদ্রা বিশেষজ্ঞ ডাঃ জেরন্ড ম্যাক্সম্যান তার বইয়ে ‘এ গুড নাইটস স্লিপ’-এ লিখেছেন, ঘুম থেকে জাগার সমস্যা একটি সাধারণ অসুখ। ছয়শ’ আমেরিকানের ওপর জরিপ চালিয়ে দেখা গেছে যে, তাদের মধ্যে এক তৃতীয়াংশেরও কম লোক সকাল বেলা তাজা অনুভূতি নিয়ে ঘুম থেকে উঠতে পারেন।
শতকরা সতেরোজনের মানুষ বলেছেন, সকাল ঘুম থেকে উঠে কাজে মনোযোগ দিয়ে এক ঘণ্টারও বেশি সময় লেগে যায়।
আগে একটা প্রবাদ খুবই প্রচলিত ছিল, সকালের হাওয়া লাখ টাকার দাওয়া। ফজরের পরে যে নির্মল বাতাস তা ইসলাম ও স্বাস্থ্য বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে খুবই উপকারী।
তখন বাতাসে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ খুব কম থাকে। আর অক্সিজেনের পরিমাণ খুব বেশি থাকায় প্রতিটি কোষ নতুন করে উজ্জীবিত হওয়ার সু্যোগ পায়।
এত বড় সুযোগ এখন অনেকেরই হাতছাড়া। রাতে আড্ডা দিয়ে, যোগাযোগ মাধ্যমে সময় দিতে দিতে প্রায় মধ্যরাত পার করে ঘুমাতে হয় অনেককে। তাই ফজরের আগে উঠা রীতিমত কস্টকর হয়ে দাঁড়ায়।
তারপরও কিছু বিষয়ে একটু সচেতন থাকলে আপনার প্রশান্তির ঘুমে সকালে প্রাণবন্ত, তরতাজা মন নিয়ে দিনের কাজ শুরু করা অনেক সহজ হয়। ভালো ঘুমের জন্য যা পরিহার করা দরকার তা কিন্তু আপনাকে করতেই হবে। এ বিষয়ে কয়েকটি বিষয় জেনে নিতে পারেন-
১. বিকেলের চা-কফি পরিহার করা। সাধারণত ক্যাফেইনের উত্তেজক প্রভাব শুরু হয় ৩ থেকে ৪ ঘণ্টার মধ্যে। কখনো কখনো তা থেকে যায় ৭-২০ ঘণ্টা পর্যন্ত। তাই অন্তত ঘুমাতে যাওয়ার ৬ ঘণ্টা আগ থেকেই চা-কফি থেকে বিরত থাকা উচিত।
২. নিকোটিনের প্রভাব সরাসরি পড়ে সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেমের ওপর। নিকোটিন স্নায়ুকে উত্তেজিত অবস্থায় রাখে। তাই ধূমপান বর্জনে গভীর নিদ্রা ও তরতাজা অনুভূতি নিয়ে জেগে ওঠার একটি প্রধান পদক্ষেপ হতে পারে। দেখা গেছে, ধূমপান ত্যাগ করার তিনদিনের মাথায় চমৎকার ঘুম হতে পারে।
৩. মদ বা মদকদ্রব্য পরিহার করা উচিত। অ্যালকোহল ঘুমের স্বপ্ন স্তরকে ধ্বংস করে দিতে পারে।
৪. ঘুমাতে যাওয়া ও ঘুম থেকে অঠার একটা নির্দিষ্ট রুটিন তৈরি করে তা মেনে চলা উচিত।
৫. প্রতিদিন প্রতিনিয়ত ব্যায়াম করুন। এটা ঘুমের ডেলটা স্তরকে বাড়িয়ে দেবে। বিশেষ করে রাতে খাওয়ার পর হাঁটা গুমের জন্য বেশ সহায়ক।
৬. রাতে হালকা খাবার গ্রহণ করা।
৭. সম্ভব হলে প্রতিরাতে এক গ্লাস দুধ পান করা। এতে আপনার ঘুমের পরিমাণ বাড়তে পারে।
৮. ঘুমাতে যাওয়ার সময় শিথিল থাকা। বিছানায় শুয়ে শুয়ে জোরে জোরে দম নিয়ে আস্তে আস্তে দম ছাড়া। এতে শরীরের অক্সিজেনের পরিমাণ বেড়ে গিয়ে শিথিল হতে সহায়তা করে।
৯. ঘুম থেকে প্রথম চেতন পাওয়া মাত্র বিছানা ছেড়ে দেয়া। এতে আপনার অলসতা দূর হবে।
১০. ঘুম ভাঙার সাথে সাথে জোরে জোরে দম নিয়ে শরীরটা শিথিল করে ফেলুন। এতে আপনার প্রাণবন্ততা ফিয়ে আসবে, অলসতা দূর হবে।
১১. সকালের রাস্তায় হাঁটা উভয়দিক থেকে আপনাকে সহায়তা করবে।
১২. সকালে সাধ্যমত ভালোমানের নাস্তা করা, তাতে ঘুমের শরীরকে শক্তি যোগাবে।